ভোটের লড়াইয়ে থাকা এক হাজার ৯৬৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বীকে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে।
Published : 12 Jan 2024, 09:07 PM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৪ ও চট্টগ্রাম-৩ আসনের দুই কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে বাক্সে; রাঙ্গামাটির আট কেন্দ্রে এবং খাগড়াছড়ির ১৯ কেন্দ্রে একটিও ভোট পড়েনি।
গত ৭ জানুয়ারি সারা দেশে ৪০ হাজারের বেশি কেন্দ্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। চার দিন পর সেই নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফল প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
২৯৮ আসনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল http://www.ecs.gov.bd/page/result-for-12th-national-parliament-election অনুমোদনের পর নির্বাচিতদের নাম ঠিকানাসহ গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৩ আসনের মমতাজুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৩৯৮০ ভোট রয়েছে। এরমধ্যে বৈধ ভোট পড়েছে ১ হাজার ৬২৩টি; আর বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৩৫৭টি ভোট। এ আসনে আওয়ামী লীগের মাহফুজুর রহমান ৫৪ হাজার ৭৫৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র মো. জামালউদ্দিন চৌধুরী পান ২৮ হাজার ৭০ ভোট। ৩৬.২১% ভোট পড়ে চট্টগ্রাম-৩ আসনে।
গাইবান্ধা-৪ আসনের শিবপুর ফজরিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রেও শতভাগ ভোট পড়ে। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ২৪৫০। বৈধ ভোট পড়েছে ১ হাজার ৭৮৮টি; আর বাতিল হয়েছে ৬৬২টি। এ আসনে নৌকার প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ ২ লাখ ১ হাজার ১৭১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গলের কাজী মো. মশিউর রহমান পেয়েছেন ৪ হাজার ৩০৮ ভোট। গাইবান্ধা-৪ আসনে ৫৪.১৩% ভোট পড়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে গড়ে ৪২% ভোট পড়ার তথ্য দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, শতভাগ ভোট পড়েছে যেসব কেন্দ্রে, সেখানে সব ভোট বৈধ ছিল না, কিছু ভোট বাতিল হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করায় বা অনিয়মের কারণে ভোট বাতিল করেন সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং কর্মকর্তা।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দুই শতাধিক কেন্দ্রে ১০০ শতাংশ ভোট পড়ার নজির রয়েছে।
আর পার্বত্য এলাকা দুর্গম হওয়ায় এবং স্থানীয় দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ঝুঁকির কারণে ২৭ কেন্দ্রে কোনো ভোট পড়েনি বলে ইসি কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
খাগড়াছড়ি আসনে ১৯৬টি কেন্দ্রে ভোটার রয়েছে ৫ লাখ ১৫ হাজার ৪১৯ জন। ৭ জানুয়ারি এ আসনে ভোট পড়েছে ৪৯.৯৯%, অর্থাৎ ২ লাখ ৫৭ হাজার ৬৫৪ জন ভোট দিয়েছেন। তবে ১৮টি কেন্দ্রে কেউ ভোট দিতেই আসেননি। খাগড়াছড়িতে নৌকার প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা নির্বাচিত হয়ে প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন এবার।
রাঙ্গামাটি আসনে ২১৩ কেন্দ্রে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৫৪ জন। এ আসনে ৫৯.৬০% ভোট পড়েছে, অর্থাৎ ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৫৪ জন ভোট দিয়েছেন। এ আসনে আটটি কেন্দ্রে কেউ ভোট দেননি। রাঙ্গামাটিতে নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার দীপঙ্কর তালুকদার।
এবার হিসাব দেওয়ার পালা
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে থাকা এক হাজার ৯৬৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বীকে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে। আর ভোটে অংশ নেওয়া ২৮ দলকে ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে ১০ এপ্রিলের মধ্যে।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২২, জাতীয় পার্টি ১১,জাসদ ১, ওয়ার্কার্স পার্টি ১, কল্যাণ পার্টি ১ ও স্বতন্ত্র ৬২টি আসন জিতেছে। ৯ জানুয়ারি নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশ করেছে ইসি।
ইসির যুগ্মসচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা) ফরহাদ আহাম্মদ খান জানান, নির্বাচিত প্রার্থীর নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে নির্ধারিত ফরমে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে হবে। বিজয়ী এবং পরাজিত সবার জন্য এ নিয়ম প্রযোজ্য। এমনকি নির্বাচনে কোনো ব্যয় না হলেও তা জানাতে হবে কমিশনে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুসারে, প্রার্থীকে নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য আলাদা একটি ব্যাংক হিসাব খুলতে হয়। ওই হিসাব থেকেই প্রার্থীকে নির্বাচনী ব্যয় করতে হয়।
এছাড়া প্রতিটি খাতে ব্যয়ের ভাউচারসহ মোট হিসাব রিটানিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করার বিধান রয়েছে। ওই হিসাব বিবরণী এফিডেভিট করে ডাকযোগে ইসি সচিবালয়েও পাঠাতে হয়।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, এ বিধান লঙ্ঘনের শাস্তি ২ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয়দণ্ড। রিটার্নিং কর্মকর্তা নিজেই আইন অমান্যকারী প্রার্থীর বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা করবেন। যে ক্ষেত্রে নির্বাচনী মামলা দায়ের করা হয়নি, অপরাধ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে।
রাজনৈতিক দলকে দলীয় নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব ৯০ দিনের মধ্যে ইসিতে জমা দিতে হবে। প্রার্থী অনুপাতে দলগুলোর ৭৫ লাখ টাকা থেকে সাড়ে চার কোটি টাকা নির্বাচনী ব্যয়সীমা রয়েছে।
পুরনো খবর
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: কোন আসনে কে জিতল
রাঙামাটির ৮ কেন্দ্রে কেউ ভোট দেয়নি
সংসদ নির্বাচন: প্রার্থীদের পেছনে ৭ দলের ব্যয় হয়নি এক পয়সাও
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৬৯ কেন্দ্রে শতভাগ ভোট