নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষে চার বছর আগে ট্রাইব্যুনাল রায় দিলেও উচ্চ আদালতে আপিল শুনানি আটকে আছে।
Published : 20 Aug 2022, 08:49 PM
দেড় যুগ আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন এবং তাদের করা আপিলের ওপর ‘অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতে শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষে চার বছর আগে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় দিলেও উচ্চ আদালতে আপিল শুনানি আটকে আছে অন্যান্য মামলার দীর্ঘ জটের কারণে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির রায় নিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তির জন্য ‘অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতে শুনানির যে আবেদন করা হয়েছে, তাতে প্রধান বিচারপতি একটি বেঞ্চ ঠিক দেবেন বলে তিনি আশা করেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, “আমি আশা করব… অবকাশকালীন ছুটির আগে হয়ত সম্ভব হবে না, অবকাশের পরেই হয়ত উনি বেঞ্চ ঠিক করে দেবেন। যে বেঞ্চ ঠিক করবেন, সেখানে আমরা শুনানি আরম্ভ করব।”
সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি থাকবে। ১৬ অক্টোবর থেকে ফের আদালতের সব ধরনের বিচারকাজসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হবে।
বর্তমানে উচ্চ আদালতে যেসব ডেথ রেফারেন্স মামলাগুলোর শুনানি হচ্ছে বিচারিক আদালতে সেগুলোর রায় হয়েছে ২০১৬ সালে। সেই ক্রম মানতে গেলে ‘২১ অগাস্ট গ্রেনেড’ মামলার আপিল শুনানির জন্য আরও কয়েক বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে।
নির্ধারিত সময়ের আগে এই মামলা কীভাবে শুনানিতে আনা সম্ভব- এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এ মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতির কাছে দরখাস্ত করেছি এই কারণে, যেহেতু এটা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত।
“এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ মামলা এবং রাষ্ট্রীয় জীবনেও গুরুত্বপূর্ণ মামলা। ওই হামলার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। সেই কারণে আমরা এই মামলাটি শুনানির জন্য মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে একটি দরখাস্ত করেছি, তিনি যেন একটি বেঞ্চ ঠিক করে দেন।”
এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, “মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে যেসব আপিল আবেদন করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ডগুলোর যে ডেথ রেফারেন্স আসে, এগুলো প্রধান বিচারপতি নির্দিষ্ট বেঞ্চে পাঠান, সেই বেঞ্চ শুনানি করে।
“এখানে আমাদের মেনশন (উত্থাপন) করা সম্ভব হয় না। সে কারণে প্রধান বিচারপতির কাছে আমরা দরখাস্ত ফাইল করেছি।”
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এ মামলার রায় দেয় ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, খালেদার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
এ ছাড়া ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন।
হাই কোর্টে এ মামলার ওপর শুনানি হলে রাষ্ট্রপক্ষের প্রস্তুতি এবং প্রত্যাশা কী থাকবে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আমাদের প্রার্থনা হবে, আদালত যে শাস্তি দিয়েছে, সেই শাস্তি যেন বহাল থাকে।
“অনেককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, অনেকের যাবজ্জীবন শাস্তি দিয়েছে, সেই শাস্তি যেন বহাল থাকে সেই আবেদন করব এবং আইনগত দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব।”
কেন এই মামলা
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রা হওয়ার কথা ছিল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের মাঝখানে একটি ট্রাক এনে তৈরি করা হয়েছিল মঞ্চ।
শোভাযাত্রার আগে সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বক্তৃতা শেষ করে তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলার সময় ঘটে পর পর দুটি বিস্ফোরণ।
এরপর সামান্য বিরতি দিয়ে একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ শুরু হয়। তারই মধ্যে শোনা যায় গুলির আওয়াজ।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা তখনও ভয়াবহতার মাত্রা বুঝে উঠতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এগোতেই তারা দেখতে পান শত শত জুতো, স্যান্ডেল রাস্তায় ছড়ানো। তারই মধ্যে পড়ে রয়েছে মানুষের রক্তাক্ত নিথর দেহ; আহতদের আর্তনাদে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি।
হামলায় আহতদের সাহায্য করতে আওয়ামী লীগের অন্য নেতাকর্মীরা যখন ছুটে গেলেন, তখন পুলিশ তাদের ওপর টিয়ার শেল ছোড়ে। পুলিশ সে সময় হামলার আলামত সংগ্রহ না করে তা নষ্ট করতে উদ্যোগী হয়েছিল বলেও পরে অভিযোগ ওঠে।
ওই হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ জন আহত হন।
মঞ্চে উপস্থিত নেতাকর্মীরা বিস্ফোরণে মধ্যে মানববর্ম তৈরি করায় সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।
সেদিনের হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ অগাস্ট মারা যান। প্রায় দেড় বছর পর মৃত্যু হয় ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে।
২১ অগাস্ট হামলায় নিহত অন্যরা হলেন- শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রহমান, হাসিনা মমতাজ, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসিরউদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। একজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
বিচারের দীর্ঘ অপেক্ষা
হামলার পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। থানা পুলিশ, ডিবির হাত ঘুরে সিআইডি এই মামলার তদন্তভার পায়।
ঘটনার চার বছর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের ১১ জুন হত্যার অভিযোগ এবং বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির।
জঙ্গি দল হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে সেখানে আসামি করা হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচারও শুরু হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে।
সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আসামির তালিকায় আরও ৩০ জনকে যোগ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।
সেখানে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ চার দলীয় জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের নাম আসে।
২০১২ সালের ১৮ মার্চ সম্পূরক অভিযোগপত্রের আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। নতুন করে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। রাষ্ট্রপক্ষের ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে মোট ২২৫ জন এ মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেন।
জামিনে ও কারাগারে থাকা ৩১ আসামির সবাই আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন ২০ জন।
রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ এজলাসে ১২০ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে মামলা দুটি রায়ের পর্যায়ে আসে।
মামলার সাক্ষীদের মধ্যে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ১৪ জন। আর আসামিদের মধ্যে ১৩ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
কার কী সাজা
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবরে এই মামলার রায় ঘোষণা হয়। এতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যার দায়ে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করে আদালত।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
তাদের দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এ ছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেয় আদালত।
নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে উচ্চ আদালতের অনুমোদন লাগে। সেই অনুমোদনের জন্য যে আবেদনটি (রায় ও মামলার নথিসহ) করা হয় সেটি ‘ডেথ রেফারেন্স’ নামে পরিচিত।
বিচারিক আদালতে রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাই কোর্টে পাঠানো হয়।
মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও রায়সহ যাবতীয় নথিপত্র হাই কোর্টে দাখিল করা হয়। হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুই মামলায় রায়ের কপিসহ মোট ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার এ নথি হাই কোর্টের রেকর্ড রুমে সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার রায় ৩৬৯ পৃষ্ঠার এবং হত্যা মামলার রায় ৩৫৬ পৃষ্ঠার।
এদিকে রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্তরা জেল আপিলের পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দি আসামিরা জেল আপিল করেন। আসামিদের করা আপিল, জেল আপিল, ডেথ রেফারেন্স, মামলার রায় ও যাবতীয় নথি যাচাই-বাছাই করে পেপারবুক তৈরির জন্য সেসব পাঠানো হয় সরকারি ছাপাখানা বিজি প্রেসে। সেখানেই পেপারবুকটি প্রস্তুত করা হয়।
এরপর ২০২০ সালের ১৬ অগাস্ট পেপারবুক এসে পৌঁছায় সুপ্রিম কোর্টে। তা আরেক দফা যাচাই-বাছাই শেষে শুনানির জন্য পেপারবুকটি প্রস্তুত করা হয়।
ইতোমধ্যে পলাতক আসামিদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবীও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন প্রধান বিচারপতি মামলাটি শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করে দিলেই হাই কোর্টে এ মামলার শুনানি শুরু হতে পারে।
আরও খবর
হাই কোর্টে শুনানির জন্য ‘প্রস্তুত’ ২১ অগাস্ট মামলা
২১ অগাস্ট: বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, তারেকের যাবজ্জীবন
রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ২১ অগাস্টের হামলা: বিচারক
রায়ে বিমর্ষ বাবর বললেন, ‘ফাঁসিয়ে দিল’
৭ ও ১০ বছর সাজার পর এবার তারেকের যাবজ্জীবন
‘আইভী রহমানের চোখে সেই শূন্য দৃষ্টি আমি ভুলতে পারি না’
২১ অগাস্ট: যেভাবে সেদিন রক্ষা পান শেখ হাসিনা