মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে আসে তারেকের নাম

হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের দ্বিতীয় জবানবন্দির সূত্র ধরে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলার আসামি হন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান।

মাসুম বিল্লাহ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2018, 05:12 PM
Updated : 9 Oct 2018, 05:30 PM

২০০৮ সালের ১ নভেম্বর ১৬৪ ধারায় মুফতি হান্নানের ওই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি সে ঘটনার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়নের নানাদিক উঠে আসে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের ভাষ্য।

তারা বলছেন, জঙ্গিরা শেখ হাসিনাকে শত্রু ভাবে, সেটাকে কাজে লগিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিনাশ করতে চাইছিলেন তারেক। 

তবে ওই জঙ্গি নেতার জবানবন্দিকে বানোয়াট দাবি করে বিএনপি ও তারেকের আইনজীবীরা বলছেন, মুফতি হান্নানের কাছ থেকে জোর করে ওই বক্তব্য আদায় করা হয়েছিল।

অন্য মামলায় ইতোমধ্যে মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তবে মৃত্যুর আগে তিনি ২১ অগাস্ট মামলায় তার জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন বলে তারেকের আইনজীবীরা বলে আসছেন।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৮ সালে জামিনে মুক্ত হয়ে লন্ডনে যান বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক। এর পর থেকে স্ত্রী-কন্যা নিয়ে তিনি সেখানেই থাকছেন।

দুই বছর আগে মুদ্রাপাচারের এক মামলায় তারেককে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় হাই কোর্ট। আর গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়।

তিনি যখন বিদেশ যাচ্ছিলেন, তখন ২১ অগাস্টের এই মামলায় আসামির তালিকায় তার নাম ছিল না। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর অধিকতর তদন্তে তারেকসহ ৩০ জনের নাম আসামির তালিকায় যোগ হয়।

ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মুফতি হান্নান যে জবানবন্দি দেন, তাতে ঘটনার ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণের পাশাপাশি হামলা বাস্তবায়নে বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িতদের নাম জানান, তাতেই আসামি হন তারেক।

মুফতি হান্নানের জবানবন্দির সমর্থনে রাষ্ট্রপক্ষে ১২জন সাক্ষী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেন। ২০০৪ সালে ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় গত বছরের ১২ এপ্রিল মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়। ওই ঘটনায় আনোয়ার চৌধুরী প্রাণে বেঁচে গেলেও দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজন নিহত হন।

গ্রেনেড হামলায় রক্তাক্ত নেতা-কর্মীরা; এদের অনেকের জীবনে ফেরা হয়নি

ওই হামলার তিন মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। এতে আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ জন আহত হন।

সন্ত্রাসবিরোধী ওই সমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনাই যে হামলার লক্ষ্য ছিল, তা পরে তদন্তেও উঠে আসে। সেদিন তার বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্র গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণ শুরু হয়। এতে অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে এই হামলা নিয়ে নানা ‘নাটক’ সাজানোর অভিযোগ করে আসছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। পরে তদন্তেও ওই আমলে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার নজির উঠে আসে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডি কর্মকর্তা ফজলুল কবীর। এরপর অধিকতর তদন্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন সিআইডির বিশেষ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ।

যা বলেছিলেন মুফতি হান্নান

২০০৮ সালের নভেম্বরে মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার ‘নীলনকশা’ বহুল আলোচিত ‘হাওয়া ভবনে’ হয়েছিল বলে উঠে আসে।

মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে বলেন, “২০০৪ সালের শুরুর দিকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হুজির অফিস দারুল আরকান মাদ্রাসায় একটি মিটিংয়ে উপস্থিত ছিল আমির আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, আবু বক্কর, মাওলানা ইয়াহিয়া ও জান্দাল। মিটিংয়ে কীভাবে তারেক রহমান ও বাবরের সঙ্গে কথা বলা যায়, সে আলোচনা হয়।”

এরপর মোহাম্মদপুর সাতমসজিদে মাওলানা আবদুস সালাম, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা তাজউদ্দিন, কাশ্মীরী নাগরিক আবদুল মাজেদ ভাটের সঙ্গে পরামর্শ করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে জানান তিনি।

উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন গ্রেনেড সরবরাহ করার দায়িত্ব নিয়েছিল জানিয়ে মুফতি হান্নান বলেন, “তাজ ভাই বলেন, আব্দুস সালাম পিন্টু ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর আমাদের সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন। তারেক রহমানের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর একদিন মুরাদনগরের এমপি কায়কোবাদ সাহেব আমাদের হাওয়া ভবনে নিয়ে গিয়ে তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

“আমরা আমাদের কাজকর্মের জন্য তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা চাইলে তারেক রহমান সর্বপ্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন।”

মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে আরও বলেন, ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে সিলেটে গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ঢাকার মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভার সংবাদ জানার পর সেখানে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পুনরায় তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত হয়।

হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান দিয়ে যান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

সেই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে মাওলানা আবু তাহের, শেখ ফরিদ, মাওলানা তাজউদ্দিন ও মাওলানা রশিদসহ ‘হাওয়া ভবনে’ যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সেখানে হারিছ চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামীর আলী আহসান মুজাহিদ, ব্রিগেডিয়ার রেজ্জাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার আবদুর রহিমও উপস্থিত ছিল। কিছুক্ষণ পর তারেক রহমান আসেন।

“তখন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তাদের সহায়তা চাওয়া হয়। তখন তারা সকল প্রকার প্রশাসনের সহায়তার আশ্বাস দেয়।”

তারেককে উদ্ধৃত করে জবানবন্দিতে মুফতি হান্নান বলেন, “তারেক রহমান সাহেব বলেন, ‘আপনাদের এখানে আর আসার দরকার নাই। আপনারা বাবর সাহেব ও আবদুস সালাম পিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করবেন। তারা আপনাদের সকল প্রকার সহায়তা করবেন’।”

২০ অগাস্ট সালাম পিন্টুর বাসা থেকে সে অনুযায়ী জান্দাল ও কাজল গি ১৫টি গ্রেনেড ও ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করে বাড্ডার বাসায় নিয়ে আসে বলে জানান তিনি।

এদিকে, হুজি নেতা মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন আসামি লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের পক্ষে গত ২৭ অগাস্ট যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে গিয়ে তার আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, “একজন আসামি এক মামলায় একবার স্বীকারোক্তি করার পর দ্বিতীয় বার স্বীকারোক্তি করার বিধান নেই। উচ্চ আদালতেরও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আছে।

“প্রথম স্বীকারোক্তিতে তিনি যেখানে বাবর সাহেবের নাম বলেননি, সেখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই বাবর সাহেবের নাম বলানোর জন্যই তাকে দিয়ে দ্বিতীয় স্বীকারোক্তি করিয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা কাহার আকন্দ।”

যা বলেছিলেন তারেকের আইনজীবী

একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তারেক রহমানকে নির্দোষ দাবি করে যুক্তি উপস্থাপন পলাতক এই আসামি পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী এ কে এম আখতার হোসেন।

তারেক রহমান

গত ২৪ জানুয়ারি তিনি আদালতে বলেন, মামলার প্রথম তদন্তে গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্র, গ্রেনেডের উৎস, সংরক্ষণ, সরবরাহে তারেক রহমানের নাম আসে নাই। পরে অধিকতর তদন্তে তার নাম আসে মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় বারের ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে। অথচ প্রথম অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষের ৪০৮ সাক্ষীর কেউ তারেকের সম্পৃক্ততার কথা বলেননি।

মুফতি হান্নানের জবানবন্দি জোর করে নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন এই আইনজীবী।

তিনি বলেন, “শেষ তদন্ত কর্মকর্তা হাওয়া ভবনের মানচিত্রের আশে পাশের বাড়ির কোনো লোককে সাক্ষী করেননি, এটি তদন্তে সন্দেহের উদ্রেক করে। আর তাছাড়া হাওয়া ভবনে তারেক রহমানের কোন কার্যালয় ছিল না। অথচ শেষ তদন্তে তারেকের কার্যালয় হিসাবে হাওয়া ভবনকে দেখানো হয়েছে।”

খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান বিএনপি এবং চারদলীয় জোট সরকারের কোনো দায়িত্বশীল পদে তখন ছিলেন না বলেও উল্লেখ করেন অ্যাডভোকেট আখতার।

উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তারেকের নাম: বিএনপি

২০০৭ সালে ১৬১ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে শেখ হাসিনা কোথাও খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেননি বলে দাবি করেছে বিএনপি।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ, এখন ২১ অগাস্ট মামলাকে পুঁজি করে সরকার বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বিপদে ফেলতে ‘নগ্ন প্রয়াস’ চালাচ্ছে।

গত ২৭ অগাস্ট নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলায় নতুন মোড় নেয়। মামলায় জিয়া পরিবারের নাম না থাকায় মামলার চলমান বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। এই মামলায় ৬১ জন সাক্ষী ছিলেন। সেসময় শেখ হাসিনা এই মামলার দুই নম্বর সাক্ষী ছিলেন। কিন্তু তিনি কোর্টে আসেননি এবং এ বিষয়ে কোনো কথাও বলেননি। মূল সাক্ষী তো তিনিই। ১৬১ ধারার কোথাও তারেক রহমানের নাম উল্লেখ নেই।”

অধকতর তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা কাহার আকন্দকে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, “তিনি নিজ এলাকা কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন এবং পোস্টার, ব্যানার নিয়ে প্রচারণাও চালিয়েছিলেন। তিনি বিএনপি সরকারের সময় অনিয়মের অপরাধে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। সেই কাহারকেই তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আওয়ামী লীগ বেছে নেয়।”

মুফতি হান্নানকে বাধ্য করা হয়েছিল দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তিনি (কাহার আকন্দ) প্রায় ২ বছর পর ২০১১ সালের ২ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করে চার্জশীট দাখিল করেন। তার এই অভিযোগের ভিত্তি ছিল প্রায় ৪০০ দিন রিমান্ডে নির্মম নির্যাতনের পর আদায় করা মুফতি হান্নানের ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি।

“মুফতি হান্নান পরে তাকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করে এবং তিনি তারেক রহমানের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার হঠাৎ করে মৃত্যুদণ্ড হয়ে যাওয়ায় তিনি আর আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে বক্তব্য দিতে পারেননি।”

অধিকতর তদন্তেই মূল রহস্য বেরিয়েছে: রাষ্ট্রপক্ষ

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তারেক যে জড়িত, তা তারা ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণ করতে পেরেছেন। ২৭ জন সাক্ষী তার সপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “এ মামলায় কাউকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়ানো হয়নি।”

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল  বলেন, “দেশ তখন পরিচালিত হচ্ছিল হাওয়া ভবন থেকে। হাওয়া ভবনের নেতৃত্বে ছিলেন তারেক রহমান। তিনি যেভাবে চালাতেন, সেভাবে কাজ হত।

“তারেক রহমান পাওয়ারে থাকায় ওই কুটিল চক্র তার কাছে যায়। আর ওসব ব্যক্তির (জঙ্গি) সঙ্গে তারেক রহমানের সুসম্পর্ক থাকায় তারা সম্মিলিতভাবে ক্ষমতার থাকার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সুবিধা দিয়ে ওই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।”

সৈয়দ রেজাউর রহমান

শুনানিতে সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, “হাওয়া ভবনের সহযোগিতায় মাওলানা মো. তাজউদ্দিন এবং মুফতি আব্দুল হান্নান হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড সরবরাহ করেন।

“হামলার পর কারাগারে আর্জেস গ্রেনেড পাওয়া গেলেও তখন ওই গ্রেনেড ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল আলামত গায়েবের জন্য।”

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে যে তিনজন সিআইডি কর্মকর্তা এই মামলার তদন্ত করেছিলেন, তারা তিনজন মুন্সী আতিকুর রহমান, রুহুল আমিন ও আব্দুর রশীদ এখন মামলার আসামি। ওই আমলের তিন পুলিশ প্রধান মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরীরও এই মামলায় বিচারের মুখোমুখি।

‘হাওয়া ভবন’ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়ার পর ওই হামলা হয়েছিল উল্লেখ করে ২৬ অক্টোবর ২০১৭ সালের যুক্তিতর্কে রেজাউর রহমান বলেন, “বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু জঙ্গি নেতাদের প্রশাসনিক ও আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।”

অধিকতর তদন্ত নিয়ে আসামি পক্ষের প্রশ্ন তোলার পাল্টায় কাজল শুনানিতে বলেন, “অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে এ মামলায় মূল রহস্য উদঘাটন হয়েছে। এতে ঘটনার পরিকল্পনাকারীরা সম্পৃক্ত হয়েছেন।”

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলেন, “আসামিপক্ষ উচ্চতর আদালতের যে পাঁচটি সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করে বলেছেন, ফারদার ইনভেস্টিগেশন সঠিক হয়নি, সেসব সিদ্ধান্তের একটির সঙ্গেও আমাদের এ দুটো মামলার মিল নেই। তদন্ত দুর্বল থাকায় এ মামলায় ফারদার ইনভেস্টিগেশন চাওয়া হয়েছিল। পাবলিক প্রসিকিউটরের ক্ষমতা ও বিচারকের ক্ষমতাবলে আপনি (বিচারক) তা ফারদার ইনভেস্টিগেশনে পাঠিয়েছেন। আর প্রসিকিউশন উচ্চ আদালতের যে চারটি সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে প্রমাণ করে যে, এ দুটো মামলায় ফারদার ইনভেস্টিগেশন সঠিক ছিল।

“ফৌজদারি মামলায় যে কোনো সময় তথ্য উদঘাটন হতে পারে। মামলার কাগজপত্রে যদি আপনি (বিচারক) দেখেন যে, মূল আসামির বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়নি, তাহলে স্বপ্রণোদিত হয়ে আপনি (বিচারক) ওই আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করতে পারবেন।”

আরও খবর