“ফোন কলে গেছেন; তার মানে আপনি বহিরাগত। কেন গেছেন ওখানে”, আসামিদের উদ্দেশ্যে করে বলে আদালত।
Published : 21 Apr 2025, 04:51 PM
প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যা মামলার আসামিরা 'হিরোইজম’ দেখাতে গিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছে আদালত।
সোমবার মামলার রিমান্ড শুনানিতে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্যাহ বলেন, 'হিরোইজম দেখিয়েছে, জিরো হয়েছে। ওদের (আসামিদের) তো কোনো ক্ষতি নেই; ক্ষতি ওদের বাবা-মায়ের।'
এদিন তিন আসামি আল কামাল শেখ (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) ও আল আমিন সানিকে (১৯) আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) এ কে এম মঈন উদ্দিন।
রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড শুনানি করেন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী।
শুনানিতে তিনি বলেন, 'তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন করা হয়েছে। এদের (আসামিদের) হায়ার করে আনা হয় খুনের জন্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহিরাগত ছাত্র এনে আক্রমণ করে। এটা নেক্কারজনক ঘটনা। এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।
“এভাবে ছুরি মেরে তাকে হত্যা করতে হবে! এরাও কারো না কারো মায়ের সন্তান। ছেলেদের কাঠগড়ায় দেখে তাদের কী অবস্থা হচ্ছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ঘটনার মাস্টার মাইন্ডরা বের হয়ে আসবে।”
আসামি কামালের আইনজীবী লুৎফর রহমান বলেন, “সে সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী। বনানী এলাকায় থাকে না, যাতায়াতও নেই; একটা দোকানের কর্মচারী। ঘটনার সময় সেখানেই কর্মরত ছিল। ঘটনাস্থলের একজন তাকে ফোন দেয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। ওই ফোনের কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
আলভি ও সানির আইনজীবী মাহবুবুর রহমান বলেন, “এ ঘটনায় আমরাও দুঃখ প্রকাশ করছি। যারা জড়িত, তাদের বিচার হোক। যারা জড়িত নয়, তারা যেন ন্যায় বিচার পায়।”
এসময় বিচারক বলেন, “ফোন কলে গেছেন। তার মানে আপনি বহিরাগত। কেন গেছেন ওখানে?”
তখন আইনজীবী বলেন, “ঘটনাস্থলে যায়নি। দূরে ছিল। তারা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। এ কারণে খোঁজ নিতে গিয়েছিল।”
এসময় বিচারক বলেন, “তারা যে ভর্তি হতে গিয়েছিল, এমন কোনো ডকুমেন্ট আছে?”
তখন আইনজীবী বলেন, “এখন তেমন কিছু নাই।”
তখন বিচারক বলেন, “হিরোইজম দেখিয়েছে, জিরো হয়েছে। ওদের (আসামিদের) তো কোনো ক্ষতি নেই; ক্ষতি ওদের বাবা-মায়ের। ধাক্কাধাক্কি-হাতাহাতি হয়। প্রতিষ্ঠানের লোকজন এনে মিউচ্যুয়াল করে দিল। ফোন করে অন্যদের ডেকে এনে খুনের ঘটনা ঘটাল।”
এরপর আদালত তাদের সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
এর আগে রোববার মধ্যরাতে মহাখালীর ওয়্যারলেস গেইটে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত শনিবার বিকালে রাজধানীর বনানীতে বেসরকারি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে বিবাদের জেরে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২২৩ ব্যাচের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়।
টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে চায়ের দোকানে আড্ডার সময় ছোট একটি ঘটনায় বহিরাগতদের নিয়ে এসে বুকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয় পারভেজকে।
নিহতের মামাত ভাই হুমায়ুন কবীরের করা মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই নেতাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া নাম না দিয়ে আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবু জর গিফারী পিয়াস (২০), মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজী (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)।
তাদের মধ্যে এজাহারে সোবহান নিয়াজ তুষারের পরিচয় দেওয়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে। হৃদয় মিয়াজীর পরিচয় দেওয়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একই ইউনিটের যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে।
এদিকে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে পারভেজকে নিজেদের কর্মী দাবি করে এ হত্যাকাণ্ডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানীর কয়েকজন নেতার জড়িত থাকার অভিযোগ করে ছাত্রদল।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিজেদের ফেইসবুক পেইজে ছাত্রদলের এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এই ঘটনায় তাদের নেতারা জড়িত নন; ছাত্রদল মিথ্যাচার করছে।