দুদক বলছে, পূ্র্বাচলে ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ৩ হাজার কোটি টাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয় সিকদার গ্রুপের ‘পাওয়ার প্যাক হোল্ডিং লিমিটেড’ এর নামে।
Published : 21 Apr 2025, 07:05 PM
পূর্বাচলে নতুন শহর প্রকল্পে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক পরিচালক রন হক সিকদারের ১০০ একর জমি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনে সোমবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেয়।
দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান আদালতে সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হকের জমি জব্দের আবেদন করেন বলে সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম তথ্য দেন।
আবেদনে বলা হয়, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে সাত সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ১৯ নম্বর সেক্টর এলাকায় প্রস্তাবিত ১০০ একর (কম/বেশি) ভূমিতে ১০০/১৪২ তলা আইকনিক টাওয়ার ‘সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট’ (সিবিডি) নির্মাণে রন হক সিকদারের (জয়নুল হকের ছেলে) মালিকানাধীন ‘পাওয়ার প্যাক হোল্ডিং লিমিটেড’ এর নামে সাময়িক বরাদ্দ দেয় রাজউক।
দুদক বলছে, একটি পাতানো নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজউকের অনুমোদনে একর প্রতি ৩০ কোটি ২৫ লাখ ১০০ টাকা নির্ধারণ করে সাময়িক বরাদ্দ দেওয়া হয়। যদিও প্রতি একরের প্রকৃত বাজার মূল্য আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ৩ হাজার কোটি টাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
“নথি পর্যালোচনা ও প্লট পরিদর্শনে দেখা যায়, ২৭০ কোটি ৫০ লাখ ১ হাজার টাকার একটি কিস্তি দিয়ে প্লট বাউন্ডারি করে সিকদার গ্রুপের নিজস্ব সিকিউরিটি ফোর্স দখলে নিয়ে নেয়। এ ছাড়া রাজউকের অনুমোদন ছাড়া এসব ভূমির একাংশে তিন তলা পর্যন্ত একটি ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। নিজস্ব পাওয়ার হাউজ নির্মাণ করে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উন্নয়নমূলক কাজের নামে ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখার মাধ্যমে ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে রেকর্ডপত্র তৈরি করে ১১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ দেখিয়ে ঋণের অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করা হয়।”
অনুসন্ধানের এসব তথ্যের ভিত্তিতে আদালতে ১০০ একর জমির ‘সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট’ (সিবিডি) প্লট ক্রোকের আবেদন করে দুদক।
জয়নুল হক সিকদার ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি মারা যান। তার ছেলে রন হক ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ভেঙে দেওয়া হয়।
সরকার পতনের আগে ২০২৪ সালের এপ্রিলে রন হক সিকদার ও তার ভাই রিক হক সিকদারের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে দুটি মামলাও করে দুদক। রন হক এর আগে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।
সিকদার পরিবারের গড়া সিকদার গ্রুপের ব্যবসা ছড়িয়ে আছে ব্যাংক ও বীমা, বিদ্যুৎ, ইকনোমিক জোন, এভিয়েশন, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মত নানা খাতে। সহযোগী কোম্পানির মধ্যে রয়েছে পাওয়ার প্যাক পোর্টস, পাওয়ার প্যাক ইকনোমিক জোন, সিকদার ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংস, সিকদার রিয়েল এস্টেট ও মাল্টিপ্লেক্স হোল্ডিংস।
পুরনো খবর-
অর্থপাচারের অভিযোগে রন ও রিকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা