যুদ্ধের মধ্যে নতুন বছরে অর্থনীতি কিংবা রাজনীতি কোনটাই স্বস্তির বার্তা এখনও দিচ্ছে না, তবু মানুষ আশায় বুক বাঁধছে।
Published : 01 Jan 2023, 01:08 AM
নতুন বছর কিংবা পুরনো বছর- দিনমজুর মোমিন মিয়ার কাছে ‘সবই এক’; তার চিন্তা এক জায়গাতেই কেন্দ্রীভূত- “কোনো দিন কাম না পাইলে আধাপেটে থাকতে হয়। নতুন বছরের বিয়ানে (ভোরে) দেখবার চাই- আমার একটা কাম আছে; পেট ভইরা ভালা কিছু খামু।”
মোমিন মিয়ার চিন্তা আর বেশি অগ্রসর না হলেও তার এই পেট ভরে খাওয়া আদতে নির্ভর করছে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বেরও রাজনীতি আর অর্থনীতির উপর।
ফলে ২০২৩ সাল শুরুর লগ্নে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসবে- দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কি স্থিতিশীল থাকবে? ইউক্রেইন যুদ্ধ কি থামবে? অর্থনীতিতে কি স্বস্তি ফিরবে? মূল্যস্ফীতি কি সহনীয় পর্যায়ে আসবে? করোনাভাইরাস কি আবার চোখ রাঙাবে?
চীনসহ কিছু দেশে কোভিড আবারও উদ্বেগ হয়ে দেখা দিয়েছে, যদিও এক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখনও স্বস্তিতেই আছে।
কিন্তু কৃষ্ণসাগর পাড়ের যে যুদ্ধ বাংলাদেশকেও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে চাইছে, তা থামার কোনো লক্ষণ এখনও প্রকাশ পাচ্ছে না। ফলে গত এক দশকের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বিদায়ী বছরেই পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সম্ভাবনার যে দুয়ার খোলার কথা, যুদ্ধের অস্থিরতা তাতে যে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা ভাঙার কোনো ইঙ্গিত মিলছে না।
অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বলছেন, যুদ্ধ না থামলে অর্থনীতিতে এ ঝঞ্ঝাট কবে কাটবে, তা কেউ বলতে পারছে না।
সেই সঙ্গে যোগ হবে নির্বাচনের বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, যার আঁচ এরই মধ্যে অনুভব করা যাচ্ছে। আর বাংলাদেশ রাজনৈতিক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে পড়লে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ।
এই সব কিছু মাথায় নিয়ে খ্রিস্টীয় নতুন বছর ২০২৩ সালে নিজেদের জীবনযাপনের হিসাব কষতে হবে বাংলাদেশের মানুষকে।
২০২২ ফেরাল যুদ্ধ, বিশ্ব ফের অনিশ্চিত পথে
দূরের যুদ্ধ ভোগাল গ্যাস-বিদ্যুতে
২০২২: শিক্ষায় ক্ষত সারানোর বছর পেরিয়ে স্বাভাবিকতায় ফেরার চ্যালেঞ্জ
মহামারীর বিদায় কাল
তিন বছর আগে করোনাভাইরাস মহামারী বিশ্বকে অভূতপূর্ব এক অভিজ্ঞতার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল আধুনিক বিশ্বকে। বাংলাদেশও তার বাইরে ছিল না। মহামারীতে সংক্রমণ আর মৃত্যুর মিছিল তৈরি করেছিল শোকের আবহ।
২০২২ সালে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে, যা মহামারী বিদায়ের ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যদিও বছরের শেষ দিকে এসে আবার সংক্রমণ বাড়তে দেখা গেছে চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে।
তবে দেশের অধিকাংশ মানুষকে কোভিড টিকা দেওয়ার পর এখন বাংলাদেশে পরিস্থিতি আর অবনতি ঘটবে না বলেই আশা করা হচ্ছে।
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোভিড পরিস্থিতি ভালোভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আমাদের রিসোর্স ও দক্ষ লোকবল অনুসারে এটা ভালো হয়েছে।”
বাংলাদেশে ২০২০ সালে কোভিড সংক্রমণ শুরুর পর এই পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে প্রায় ৩০ হাজার জন।
মহামারীর মাঝ পর্যায়ে দৈনিক সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশও ছাড়িয়েছিল, এক দিনে ১৬ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তও হয়েছিল, দিনে মৃত্যু ছাড়িয়েছিল আড়াইশ।
তবে এখন দিনে রোগী শনাক্তের হার নেমে এসেছে ১ শতাংশেরও নিচে; গত পাঁচ দিন ধরে করোনাভাইরাস কোনো মৃত্যু ঘটাতে পারেনি দেশে।
এ বছরের মাঝামাঝি এক বৈশ্বিক জরিপের তথ্য উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশ ‘রোল মডেল’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের মানুষকে এ পর্যন্ত বিনামূল্যে ৪০ হাজার কোটি টাকার টিকা দেওয়া হয়েছে। খুব কম দেশই এটা করতে পেরেছে।
তারপরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে ডা. মুশতাক বলেন, “আগামীতে কোভিড যদি ছড়াতে থাকে, তবে খারাপ ফর্মের দিকে যাবে। এ বিষয়টা লক্ষ্য রেখে প্রস্তুত থাকতে হবে।”
অর্থনীতিতে স্বস্তি নেই
মহামারী বিশ্বে যে আঁধার নামিয়েছিল, বিদায়ী বছরের শুরুতে তা আরও গাঢ় করে তোলে কৃষ্ণ সাগর পাড়ে ইউক্রেইন ও রাশিয়ার যুদ্ধ। যুদ্ধের দামামায় টালমাটাল হয়ে ওঠে বিশ্বের অর্থনীতি, তার ছাপ পড়ে বাংলাদেশে।
শতভাগ বিদ্যুৎ বিতরণের দিকে এগোতে থাকার মধ্যে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্যের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে আনতে হয়। ডলার সংকটে সরকারকে ব্যয় সাশ্রয় আর কৃচ্ছ্রতা সাধনের পথে হাঁটতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নাভিঃশ্বাস তুলেছে জনজীবনে; দুর্ভিক্ষের অশনির কথাও উঠেছে কখনও কখনও।
এই পরিস্থিতির আশু উত্তরণ ঘটবে, তা মনে করছেন না বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যতদিন না বাণিজ্য ঘাটতি একটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে আসছে, ততদিন অর্থনীতিতে এই চাপ থাকবে। বৈদেশিক মুদ্রার জোগান না বাড়া পর্যন্ত সরকারকে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি খরচ কমাতে হবে।”
সামষ্টিক অর্থনীতির চাপ এসে পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রাতেও। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বছরজুড়ে ভুগিয়েছে সাধারণ মানুষকে, কমদামে নিত্যপণ্য কিনতে মধ্যবিত্তকেও দাঁড়াতে হচ্ছে টিসিবির ট্রাকের সামনে।
ফেব্রুয়ারি শেষে ঊর্ধ্বমুখী হওয়া মূল্যস্ফীতির পারদ চড়তে থাকে মে থেকে। ওই মাস শেষে ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে তা অগাস্টে ৯.৫২ শতাংশে উঠে, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে সেপ্টেম্বরের পর তা কিছুটা করে কমার দিকে।
তবে সরকারি এ হিসাব বাস্তবের মূল্যস্ফীতির চাপের চেয়ে অনেক কম বলে দাবি করে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।
খাদ্যপণ্যের সঙ্গে আমদানিনির্ভর আনুসঙ্গিক সব পণ্যের দামই বেড়েছে। কাগজের দাম বৃদ্ধিও স্কুলপড়ুয়াদের অভিভাবকদের কপালে ফেলেছে ভাঁজ।
আবদুল করীম নামে ঢাকার মালিবাগের এক বাসিন্দা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেভাবে বই-পত্রের দাম বাড়ছে, প্রতিবছর স্কুলের ভর্তির ফি বাড়ছে, নতুন বছরেও হেই দাম তো আরও বাড়ব। এটা নিয়া দুঃচিন্তায় আছি।”
অর্থনীতিতে কর্মচাঞ্চল্য কমে আসায় ‘দিন আনি দিন খাই’ অবস্থা যাদের, তাদেরও ভুগতে হচ্ছে। কমলাপুরের দিনমজুর মোমিন মিয়াকে এক কাজ পাওয়া নিয়েই ভাবতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, “খাওয়াইয়া পাঁচজন। কোনো দিন কাম না পাইলে আধাপেটে থাকতে হয়। আবার কাম পাইলে মজুরি ৫০০ টাকার উপরে পাওয়া যায় না। এইভাবেই আমাগো দিন যায়।”
একই অবস্থা ভ্যানচালক সুরাত আলীরও। তার ভাষ্যে, “মুই ক্যাংক করি কমু বাহে কাম তো ন পাই। নতুন বছরে নতুন নতুন কাম পাবো বাহে-হামার এটাই আশা।”
রাজনীতিতে উত্তাপের আঁচ
মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন নিরুত্তাপই ছিল। কিন্তু ভোটের এক বছর আগে রাজনীতির মাঠের উত্তাপের আঁচ পাওয়া গেছে বিদায়ী ডিসেম্বরের ১০ তারিখের এক কর্মসূচিতেই।
আর তা দেখে আগামী বছরের রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত থাকবে বলেই মনে করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০২৪ সালের প্রথম ভাগেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। প্রধান বিরোধী দল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। ফলে বিস্ফোরণমুখ উত্তেজনায় রাজপথে সংঘাত-সংঘর্ষ থাকবে।”
আওয়ামী লীগ টানা ১৪ বছর ক্ষমতায়, বিরোধী দলগুলো তাদের বড় কোনো চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি, ২০১৪ সালের পর তেমন রাজনৈতিক সহিংসতা দেখা যায়নি।
তবে এবার চিত্র বদলানোর ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পুরনো দাবি নিয়ে আঁটঘাট বেঁধে নামতে চাইছে। ইতোমধ্যে তারা কর্মসূচি শুরু করেছে, যার একটি ছিল ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ সেই সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনার প্রকাশ সহিংসতায় গড়িয়েছে, যাতে একজন নিহত হয়েছে।
আরও রাজনৈতিক দলকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে নামা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বিশ্বাস, নতুন বছর হবে গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনের বছর। সরকার দাবি না মানলে অবশ্যই এই আন্দোলনের ফয়সালা রাজপথেই হবে।”
তবে নাজুক অর্থনীতি নিয়ে হিমশিম খাওয়া সরকার বিএনপির সেই আন্দোলনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতিতে জোরেশোরেই রয়েছে। ইতোমধ্যে সম্মেলনও করেছে ক্ষমতাসীন দলটি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, বিএনপির নেতৃত্বে সরকার হটানোর আন্দোলন, সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আমাদের। পেছনের দিনগুলো আমাদের যেমন গেছে, সেখান থেকে আমরা আশা করি, নতুন বছর ভালোই যাবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।”
নির্বাচন কমিশন ২০২৩ সালের শেষের দিকে বা ২০২৪ সালের শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে।
তার আগে দুই প্রধান দলের বিপরীতমুখী অবস্থানের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক মতৈক্য চাইছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালও।
তিনি বলছেন, “রাজনৈতিক সমঝোতা, ঐকমত্য খুবই দরকার। আমরা খুব বেদনাহত হই বক্তব্যগুলো যখন সাংঘর্ষিক হয়। আমরা চাচ্ছি, বক্তব্যগুলো মিচুয়ালি একোমোডেটেড হোক এবং সমঝোতার দিকে এগিয়ে যাক, যাতে নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হয়।”
আশা কোথায়?
রাজনীতি আর অর্থনীতির অনেক অস্বস্তির লক্ষণের মধ্যে ২০২৩ সাল নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচলে আছেন অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা বলেন, “নতুন বছরটা নির্বাচনের বছর। কারণ ২০২৪ সালের প্রথম জানুয়ারিতেই ভোট। ফলে নতুন বছরে অনেক ঘটনার পেছনে ঘটনা থাকবেই।”
মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আশাবাদী হওয়ার কথাও বলেন তিনি।
বছরের শেষ মাসে দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালুর মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। তার আগে বছরের মাঝামাঝিতে খুলেছে পদ্মা নদীর উপর ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক সেতু, রেল সেতুর কাজও এগিয়ে চলছে।
যোগাযোগ অবকাঠামো বদলে দিতে কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেলের কাজও শেষের পথে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু করে বিদ্যুতের ‘এলিট ক্লাবে’ যোগ দেওয়ার পথও অনেকটা এগিয়ে গেছে।
গত এক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় একের পর এক সোপান পেরিয়েছে, ঘটিয়েছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর্ব।
ইউক্রেইন যুদ্ধ এই অগ্রযাত্রায় ছেদ ঘটালেও বাংলাদেশ নিয়ে বড় শঙ্কা দেখছেন না স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হোসে ভিনয়্যালস ।
তিনি সম্প্রতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বৈশ্বিক মন্দা বিবেচনায় রেখেই বলেন, “সৌভাগ্যবশত, বাংলাদেশিরা একটি ভিন্ন পরিস্থিতিতে আছে। বিদেশি ঋণের বোঝা কম, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেলেও ঝুলিতে এখনও কয়েক মাস চলার মতো আছে।”
বাংলাদেশের সম্ভাবনার দিক দেখাতে গিয়ে এই অর্থনীতিবিদ যে বিষয়গুলোকে সামনে আনছেন, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধও রয়েছে।
তার ভাষ্যে, বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে যে পরিবর্তন আসছে, তাতে বাংলাদেশের খুব চমৎকার সুযোগ তৈরি হয়েছে তা থেকে লাভবান হতে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে বুদ্ধিমানের মতো কার্ডটি খেলতে পারবে কি না?
পদ্মা সেতু খুলল, মেট্রোরেল চলল
নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কার মধ্যে ২০২৩ সাল সহবস্থান ও মতৈক্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছর হবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পূর্ব-প্রস্তুতি থাকা দরকার। নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়, ক্ষমতাসীন দলের কমিটমেন্ট থাকতে হবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরপেক্ষ রাখতে হবে।”
বাংলাদেশের রাজনীতি ঘিরে বিদেশিদের প্রতিক্রিয়াও আবার উদ্বেগ ছড়াচ্ছে জনমনে; যদিও তা বড় করে দেখতে চাইছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ।
তার মতে, দেশে বিভাজনের রাজনীতির সুযোগ নিতে চায় বিদেশিরা, এখন যেহেতু বিভাজন রয়েছে, সেই সুযোগ কেউ কেউ নিতে চাইবে। তবে জনগণের চাওয়ার বিপরীতে গিয়ে এই সব প্রচষ্টো সফল হয় না।
“কথাবার্তা হয়ত কিছুটা থাকবে, কিন্তু মূল বিষয় বাংলাদেশের ভেতরের যারা স্টেকহোল্ডার আছে; রাজনীতিবিদ তো বটেই, তার সঙ্গে ব্যবসায়ী মহল, ছাত্র সম্প্রদায়, নিরাপত্তা বাহিনী, স্টেক হোল্ডাররা ঠিক করে বাংলাদেশের রাজনীতির চরিত্রটা কেমন হবে। মানুষ যখন রাস্তায় নামে, তখন স্টেক হোল্ডাররাও নতুনভাবে চিন্তা করে। সেই জায়গায় যতক্ষণ না পৌঁছাবে, ততক্ষণ আমরা বড় আকারে পরিবর্তনও দেখছি না।”
বৈশ্বিক রাজনীতিতে এখন কোনো একক পরাশক্তি না থাকায় বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কেউ হস্তক্ষেপ করে সুবিধা করতে পারবে না বলেও মনে করেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ।
নিরাশা ছাপিয়ে আশাবাদী হতে চাইছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের রেবেকা সুলতানাও।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই তো ঢাকায় মেট্রোরেলের দ্বার উন্মোচন হয়েছে। এটা ঢাকার চেহারাই পাল্টিয়ে দেবে। কর্মচাঞ্চল্যে অর্থনৈতিক সূচকগুলো উর্ধ্বমূখী হবে।
“রাজনীতির মাঠ সরগরম হবে। ২০২৪ সালে যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা তার প্রাক প্রস্ততিও এই বছর জুড়েই রাজনৈতিক দলগুলো করবে। সব মিলিয়ে এক নতুন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ আমি দেখছি।”