Published : 05 May 2025, 01:29 PM
ডিবি পরিচয়ে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে গভীর রাতে এক বাসায় ঢুকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি ভাঙচুর ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকার কলাবাগান থানার ওসি মোক্তারুজ্জামানসহ দুই এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট আব্দুল ওয়াদুদের অভিযোগ, গত ২৯ এপ্রিল রাতে তার বাসায় ঢুকে ওই ঘটনা ঘটান পুলিশ সদস্যরা।
তিনি ডিএমপি কমিশনারের কাছে অভিযোগ করার পর ওসির সঙ্গে একই থানার এসআই বেলাল ও মান্নানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় বলে রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম জানান।
সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিএমপি সদর দপ্তর। এর প্রেক্ষিতে প্রথমে ওসি ও দুই এসআইকে প্রত্যাহার করে রমনা বিভাগে সযুক্ত করা হয়। পরে তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।"
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, "ওসি মোক্তারুজ্জামান গতকালই সব বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেছেন। তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।"
কলাবাগান থানাধীন সোনারগাঁ রোডের বাসিন্দা আব্দুল ওয়াদুদের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২৯ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে কলাবাগান থানার এসআই বেলালের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য ও ১৫/২০ জনের একদল সন্ত্রাসী তার বাড়িতে জোরপূর্বক ঢুকে পড়ে।
গত ২ মে তিনি অভিযোগ করলেও সেটি গ্রহণের তারিখ হিসেবে ৪ মে লেখা হয়। এরপরই ওসি ও দুই এসআইকে প্রত্যাহার ও পরে সাময়ইক বরখাস্ত করা হয়।
ঘটনার বর্ণনায় সেখানে লেখা হয়েছে, "ঘটনার সময় আমার ম্যানেজার ৯৯৯-এ টেলিফোন করলে এক গাড়ি পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই শাহবাগ ও নিউ মার্কেট থানার টহল টিমের দুটি গাড়ি এসে বাড়ির সংলগ্ন মেইন রাস্তায় থামে। ম্যানেজার দেখতে পান কলাবাগান থানার ওসি নিউ মার্কেট ও শাহবাগের টহল টিমকে চলে যেতে বলেন।"
শাহবাগ ও নিউ মার্কেটের টহল টিমকে খবর দেওয়ার জন্য আমার এক ষাটোর্ধ্ব ভাড়াটিয়া লাল মিয়া ও নাইট গার্ড লুৎফরকে কলাবাগান খানার ওসি পুলিশের গাড়িতে তুলতে ‘নির্দেশ দেন’ বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
"এদিকে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়া এসআই বেলালের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য আমার ঘরের তৃতীয় তালার দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। একটি দরজা ভাঙার পর দ্বিতীয় দরজা যখন ভাঙার চেষ্টা চলছিল, তখন আমি কলাবাগান থানার ওসিকে সাহায্যের জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে বাড়ি থেকে পুলিশের সাথে বের হয়ে আসতে বলেন। ডিবির লোক এসেছে তাদেরকে সহযোগিতা করতে বলেন।"
আব্দুল ওয়াদুদ লিখেছেন, কোনো উপায় না দেখে তিনি পুলিশের সঙ্গে থানায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন ও দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে এসআই বেলাল ও মান্নান ধাক্কা মেরে তাকে ঘরের ভিতরে টেনে নেয়।
"তারা বাসার মধ্যে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করেন ও কী যেন খুঁজতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর মান্নান নামের একজন পুলিশ সদস্য আমাকে একটু আড়ালে নিয়ে বলে, এই মুহূর্তে এক কোটি টাকা দিতে পারলে আমার থানায় যেতে হবে না।
"কী মামলা হয়েছে জানতে চাইলে তারা জানায় কোনো মামলা হয়নি, তারা টাকার জন্য এসেছে। যদি টাকা না দিই আমার বিরুদ্ধে দশটা মামলা হবে।"
পরে দেন দরবার করে ২ লাখ টাকা পুলিশ সদস্য বেলাল ও মান্নানের হাতে তুলে দেওয়ার কথা জানিয়ে আব্দুল ওয়াদুদ লিখেছেন, "ব্যাংকিং আওয়ারের মধ্যে বাকি টাকা দেওয়ার শর্তে তারা তিনজন সিভিল ড্রেস পরা ব্যক্তিকে আমার পাহারায় রেখে যায়। তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়েছে। যাওয়ার সময় এসআই বেলাল বাড়ির কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এরকম একটা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে আদায় করে ভিডিও ধারণ করে।"
বাড়ি সংলগ্ন মিনি চিড়িয়াখানায় সরকারি লাইসেন্স নিয়ে ২০০৬ সকল থেকে হরিণ প্রতিপালন করে আসার কথাও লিখেছেন আব্দুল ওয়াদুদ। মিনি চিড়িয়াখানা থেকে ম্যাকাও, কাকাতুয়া, ইলেকট্রিস, রেইনবো লরিসহ বিদেশি দুর্লভ ও মূল্যবান পাখিগুলো লুট হয়ে যায় বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, পুলিশ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সিসি ক্যামেরার হার্ডডিক্সও নিয়ে যায়। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টাব্যাপী আইন বহির্ভূত অভিযানটি বাড়ির পাশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখভাল করেন কলাবাগান থানার ওসি।
তিনি পহেলা মে থানা থেকে ল্যাপটপটি পাঠিয়ে দিলেও বাদবাকি মালামাল এখনো ফেরত দেননি জানিয়ে ঘটনার 'সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত' করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন ওয়াদুদ।