Published : 04 May 2025, 07:07 PM
বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম কেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কিছু সরকারি এজেন্সির ‘চাপ’ এবং কালোটাকাওয়ালা কিছু ব্যবসায়ীর ‘আক্রমণের’ কথা বললেন দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের মালিক কোম্পানির চেয়ারপারসন একে আজাদ, যিনি ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে নেমে সংসদেও গেছেন।
তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশে সংবাদ প্রকাশে অনেক সংস্থা ডমিনেট করে। এজন্য সংবাদ প্রকাশ করা যায় না।”
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে রোববার ধানমন্ডিতে টিআইবি আয়োজিত ‘ব্রেভ নিউ বাংলাদেশ: রিফর্ম রোড ম্যাপ ফর প্রেস ফ্রিডম’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন হামিম গ্রুপের কর্ণধার একে আজাদ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ। তিনি গণমাধ্যম সংস্কারে দীর্ঘমেয়াদী এবং তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।
এ সময় কামাল আহমেদ মুক্ত সাংবাদিকতা চর্চায় সংবাদপত্র মালিকদের ভূমিকা কী–তা একে আজাদের কাছে জানতে চান।
জবাব দিতে গিয়ে আজাদ বলেন, “কারা আমাদের পত্রিকা ডমিনেট করে, কেন আমরা সত্য প্রকাশ করতে পারি না? প্রথম হল তথ্য মন্ত্রণালয় কার্যকর না। কারা আমাদের নিউজ করতে বাধা দেয়? সরকারের বিভিন্ন সিক্রেট এজেন্সি। দে ডিকটেট আজ হুইচ নিউজ উইল বি পাবলিশড, হুইচ নিউজ উইল নট বি পাবলিশড।”
তিনি বলেন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেফারুজ্জামানকে তিনি সম্মান করেন, কারণ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ‘সামনাসামনি’ কথা বলেন, আবার রাতে একা চলাফেরা করেন।
“আমরা কিন্তু পারি না। যখন কোনো এজেন্সি ধমক দেয়, আমরা বলি ভাই এই নিউজটা ছাপাইও না। আমার তো প্রটেকশন নাই। আমি চাই ওই সমাজ ওই রাষ্ট্র, ওই রাষ্ট্রপ্রধান যে আপনাকে আমাকে জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারবে।”
কিছু কিছু ব্যবসায়ী ‘কালো টাকা দিয়ে মিডিয়া করেছে’ মন্তব্য করে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আজাদ বলেন, “যেন অন্যরা তাদের দুর্নীতি, যত ধরনের অপকর্ম আছে সেটা যাতে কোনো পত্রিকায় পাবলিশ না করতে পারে সেজন্য সে অ্যাটাক করে বসে। এই কারণে তার মিডিয়া।”
কামাল আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমে সংস্কার নিয়ে আলোচনার মধ্যে স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বৈরী পরিবেশের কথা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এখনও সাংবাদিকরা ‘গালাগালি, হুমকি, হামলা এবং মিথ্যা মামলার’ শিকার হচ্ছে।
“সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হচ্ছে। সাংবাদিকরা তো হত্যা করতে যায় নাই। হ্যাঁ অনেকে রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে সহিংসতায় উসকানি দিয়েছে। এ কারণে সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার মামলা করা যায়। আইনে সেই বিধান আছে, কিন্তু হত্যা মামলা দিয়ে আটক রাখা হয়। এটা গ্রহণযোগ্য না। এর ফলেই এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশ, বৈরী পরিবেশ বলে মনে হয়।”
কামাল আহমেদ বলেন, সাংবাদিকতায় যে ভীতির কথা বলা হচ্ছে, তার পেছনে অনলাইনে হুমকির বিষয়টিও আছে।
“কেউ একজন অনলাইনে একটা কথা বললেই হুমকি দেওয়া হয়। কিছু সংখ্যক লোক পত্রিকা অফিস বা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ করে। এর মাধ্যমেই ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়। এই ভীতির পরিবেশ কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর প্রভাব ফেলছে না।”
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুশান ভাইজ, বাংলাদেশে সুইডিশ রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, এএফপির ব্যুরো প্রধান শেখ সাবিহা আলম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।