খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান এবং পুত্রবধূ জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলায় আরও পাঁচজন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
রোববার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে তারা সাক্ষ্য দেন বলে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জানিয়েছেন।
তারা হলেন- সোনালী ব্যাংক নৌ সদরদপ্তর শাখার ব্যবস্থাপক খন্দকার শহিদুর রহমান, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া, ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপক (অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) শহীদুল ইসলাম, ব্যবস্খাপক (বিপণন) এ কে এম হামিদুর রহমান এবং ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রকাশনা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার।
রোববার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সোমবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন বিচারক।
এ নিয়ে অভিযোগপত্রভুক্ত ৫৭ সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হল।
১৬ বছর আগের এই মামলায় গত ২১ মে বাদী দুদকের উপপরিচালক জহিরুল হুদা সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে বিএনপির নেতারা বলছেন, তাদেরকে (তারেক-জোবায়দা) নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই তড়িঘড়ি এই মামলার রায় দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
এর আগে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা বিক্ষোভও দেখিয়েছিল আদালত অঙ্গনে। তার পাল্টায় আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও সরব হলে ব্যাপক হট্টগোল হয়। তাতে একদিন বিচারকের এজলাস ছেড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল।
রোববারও আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপির আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। আদালতে সাক্ষ্য চলাকালে বিকাল ৩টার দিকে মিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে অবস্থান নেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা। কিছুক্ষণ পর তারা আদালতের সিঁড়িতে অবস্থান নিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে করেন।
মামলা বিত্তান্ত
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তারেক গ্রেপ্তার থাকা অবস্থায় ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার কাফরুল থানায় মামলাটি করেন দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক জহিরুল হুদা। তিনি সম্প্রতি আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, তারেক ও জোবায়দার ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে।
মামলায় জোবায়দার মা ইকবাল মান্দ বানুকেও আসামি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় আদালতে। পরে উচ্চ আদালত তার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম বাতিল করে দেয়।
অভিযোগপত্র জমা হওয়ার পর মামলা বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করা হয় জোবায়দার পক্ষেও। তখন মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করে হাই কোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাই কোর্টের আদেশ বহাল রাখে।
এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ করে রায় দেয় হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরই আপিলের আবেদন করেন জোবায়দা।
এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ লিভ টু আপিল খারিজ করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখে।
এরপর গত ১৩ এপ্রিল তারেক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার।
তারেক ২০০৮ সালে তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোতে জামিন নিয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান চিকিৎসা নিতে। তারপর থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন।