ডাণ্ডাবেড়ি ফেরাতে পুলিশের চিঠি

ঢাকার জনাকীর্ণ আদালত থেকে ভরদুপুরে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার প্রেক্ষাপটে পুলিশের পক্ষ থেকে কারা সদর দপ্তরে এই চিঠি দেওয়া হল।

আদালত প্রতিবেদকজ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2022, 10:11 AM
Updated : 22 Nov 2022, 10:11 AM

কারাগার থেকে ‘সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চাঞ্চল্যকর মামলার আসামি এবং সাজাপ্রাপ্ত বা একাধিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত’ আসামিদের আদালতে উপস্থাপনের সময় ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর ব্যবস্থা নিতে কারা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে পুলিশ।

ঢাকার জনাকীর্ণ আদালত থেকে ভরদুপুরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন শাখা থেকে ওই চিঠি পাঠানো হয়।

প্রসিকিউশন পুলিশের উপ কমিশনার জসিম উদ্দিন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোর্টে হাজিরের সময় গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের ডাণ্ডাবেড়ি না পরানোর কারণে ইতোমধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। ডাণ্ডাবেড়ি পরানো থাকলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হত।

“এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কারা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারা পুলিশের মহাপরিদর্শক ওই চিঠি পাবেন।”

চিঠিতে বলা হয়েছে, “জেলখানা থেকে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চাঞ্চল্যকর ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের আদালতে হাজির করার সময় অবশ্যই জেল কোড অনুযায়ী ডাণ্ডাবেড়ি পড়ানো অবস্থায় কোর্টে হাজির করতে হবে। এছাড়া জঙ্গি ও সন্ত্রাসীসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের আলাদা প্রিজন ভ্যানে পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।”

Also Read: যাদের ছকে জঙ্গি ছিনতাই, তারা ‘চিহ্নিত’

Also Read: জঙ্গি ছিনতাই: কোথাও গাফিলতি ছিল, বলছেন মন্ত্রী

Also Read: জঙ্গি ছিনতাই: পুলিশের দুর্বলতা না অবহেলা?

রোববার দুপুরে পুরান ঢাকার আদালত থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) নেতা মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল শুনানি শেষে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশের দিকে ‘স্প্রে মেরে’ তাদেরকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

শামীম ও সিদ্দিক দুজনই জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলাতেও আবু সিদ্দিক সোহেলের ফাঁসির রায় হয়েছে।

এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পলাতক দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিলে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। সারাদেশে জারি করা হয়েছে ‘রেড অ্যালার্ট’। দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় একটি মামলাও করেছে পুলিশ

পুলিশ পাহারার মধ্য থেকে এভাবে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি উদ্বেগজনক বলছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক মনে করছেন, এ ঘটনায় পুলিশের ‘অবহেলা ও অপেশাদারিত্ব’ ছিল। গালিফতি যে কোথাও ছিল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও তা মানছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গেছে, দুজন দুজন করে আসামি আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়া হচ্ছিল। প্রতি দুজনের সঙ্গে ছিলেন একজন পুলিশ কনস্টেবল।

Also Read: দুই জঙ্গি ছিনতাই: পাঁচ পুলিশ বরখাস্ত

Also Read: পলাতক জিয়ার নির্দেশনায় জঙ্গি ছিনতাই: পুলিশ

Also Read: যেভাবে ছিনতাই ২ জঙ্গি

Also Read: আদালত প্রাঙ্গণে ‘পুলিশকে স্প্রে মেরে’ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনতাই

ফাঁসির আসামিদের আদালতে নেওয়ার সময় তাদের ডাণ্ডাবেড়ি না পরানোর বিষয়টি নিয়েও কথা ওঠে সেদিন। গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল বলেন, কারাগার থেকে আসামি আদালতে পাঠানোর সময় ডাণ্ডাবেড়ি না পড়াতে আদালতের নির্দেশনা থাকায় তাদের তা পরানো হয়নি।

কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমানও সেদিন বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা কোনো আসামিকে ডাণ্ডাবেড়ি পরান না।

ডাণ্ডাবেড়ি হল  মোটা লোহার রিং, যার এর একপাশ খোলা থাকে। বন্দিদের পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে শেকল এঁটে বন্দির হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়, যাতে সে দৌড়াতে না পারে।

২০১৭ সালে চার জঙ্গিকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করার ছবি সংবাদমাধ্যমে এলে ডিআইজি প্রিজন্সকে তলব করে হাই কোর্ট। পরে আদালতের আদেশে বলা হয়, ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালত কক্ষে কোনো আসামিকে হাজির করা যাবে না। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে কারাগার থেকে আদালতে আনা-নেয়ার সময় ডাণ্ডাবেড়ি পরানো যাবে।

এ অবস্থায় প্রসিকিউশন পুলিশের চিঠির ভিত্তিতে কারা কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নেবে জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুজাউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেইলের মাধ্যমে প্রসিকিউশনের চিঠি পেয়েছি। যে নির্দেশনা দিয়েছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ডাণ্ডাবেড়ির বিষয়ে হাই কোর্টের নির্দেশনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “২০১৭ সালে নির্দেশনা ছিল ডাণ্ডাবেড়ি পরানো অবস্থায় আদালতে তোলা যাবে না। তবে কারাগারে থেকে আদালত পর্যন্ত পথে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো যাবে। কারাগারের ফটক থেকে আসামির নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকে পুলিশের হাতে। এখন ফটক থেকে আসামি নেওয়ার সময় ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে নেওয়ার কথা আমরা পুলিশকে বলব।”