জহর সরকার জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ যেন আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার ওই চুক্তি করে, সেজন্য বিজেপি সরকার সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল কি না।
Published : 17 Feb 2023, 10:27 AM
আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চুক্তির পেছনে ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকারের ভূমিকা স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য জহর সরকার।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরকে চিঠি দিয়ে তিনি জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ যেন আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার ওই চুক্তি করে, সেজন্য বিজেপি সরকার সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল কি না।
টাইমস অব ইনডিয়া জানিয়েছে, আদানির কাছ থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেনার ওই চুক্তি নিয়ে ভারত সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গত ডিসেম্বর থেকে এ নিয়ে তিন দফা জয়শংকরকে চিঠি দিলেন জহর।
সর্বশেষ গত ১৩ ফেব্রুয়ারির চিঠিতে তিনি লিখেছেন, আদানির সাথে ওই চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশে মানুষের মধ্যে ‘ক্ষোভ’ তৈরি হয়েছে। ‘অন্যায্য দামে’ আদানির বিদ্যুৎ বাংলাদেশের কাছে বিক্রির ওই চুক্তি বাংলাদেশে ভারতবিরোধী অসন্তোষ তৈরি করতে পরে।
এস জয়শংকরকে লেখা চিঠিতে জহর সরকার বলেছেন, “নথিপত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের পর প্রথম বাংলাদেশ সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে আদানির ওই প্রজেক্ট নিয়ে সমর্থন যুগিয়েছেন। এবং পরে আপনি নিজে এ বিষয়ে সক্রিয় ছিলেন।”
India as a nation is being misunderstood by Bangladeshis— because Modi helped his crony Adani profiteer at their expense. His Power Purchase Agreement with B’desh is unfair —he’ll get paid even if B’desh doesn’t take power! He’s selling coal at $400 when B’desh usually pays @250. pic.twitter.com/FmSk9STwIC
— Jawhar Sircar (@jawharsircar) February 15, 2023
১৩ ডিসেম্বর লেখা প্রথম চিঠিতে তৃণমূলের এই এমপি ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ১.৭ বিলিয়ন ডলারে ১৬০০ মেগাওয়াটের ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের সঙ্গে আদানির ১৬৩ পৃষ্ঠার যে ক্রয় চুক্তি হয়েছে, তার খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, আদানির ওই প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশকে যদি বিদ্যুৎ নাও নিতে হয়, তারপরও ক্যাপাসিটি ও মেনটেইন্যান্স চার্জ বাবদ বছরে ৪৫৫ কোটি ডলার দিতে হবে।
“ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন বিদ্যুতের সর্বোচ্চ যে চাহিদা থাকে, তার ৪০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশেরই আছে। তারপরও ওই চুক্তি অনুযায়ী দেশীয় বাজারের পাইকারি দামের পাঁচ গুন বেশি দরে আদানির বিদ্যুৎ নিতে হবে বাংলাদেশকে।”
ভারত সরকারকে সতর্ক করে তৃণমূলের এই এমপি বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে আাদের সম্পর্ক খুবই স্পর্শকাতর। এ অবস্থায় এরকম বিরূপ প্রতিবেদন যদি আসে, তাহলে সেটা বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে অস্থিরতার কারণ ঘটাতে পারে।”
ওয়াশিংটন পোস্টের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় আদানির ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে কয়লা ব্যবহার করা হবে তা তাদের নিজস্ব উৎস থেকে আসবে নিজেদের জাহাজে করে। আদানির মালিকানাধীন বন্দরে সেই কয়লা খালাস করে আদানির নির্মিত রেলে করে তা বিদ্যুৎকেন্দ্রে নেওয়া হবে। উৎপাদিত বিদ্যুৎও সঞ্চালন করা হবে আদানির বানানো হাই-ভোল্টেজ লাইনে। চুক্তি অনুযায়ী, জ্বালানি পরিবহন ও সঞ্চালনের পুরো খরচ বাংলাদেশকে দিতে হবে।
আদানি গ্রুপের সাথে ২০১৭ সালে করা ওই বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির শর্ত পুনর্বিবেচনার জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আদানির কোনো জবাব এখনও আসেনি।
টাইমস অব ইনডিয়া লিখেছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, ওই চুক্তি হয়েছে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং একটি বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে। সেখানে ভারত সরকারের কোনো অংশগ্রহণ নেই। সরকার বরং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বেশি মনোযোগী।