এনিয়ে এপর্যন্ত মামলার ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হল।
Published : 11 Jun 2023, 09:43 PM
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান এবং পুত্রবধূ জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ইসলাম গ্রুপের চেয়ারম্যান মনজুরুল ইসলাম।
রোববার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মনজুরুলের সঙ্গে ইসলাম গ্রুপের পরিচালক আব্দুর রহিম চৌধুরীও সাক্ষ্য দেন।
সাক্ষ্যে তারা ক্যান্টনমেন্টে শহীদ মইনুল হোসেন সড়কে বাড়ি নির্মাণ সংক্রান্ত ব্যয় নিয়ে কথা বলেন বলে জানিয়েছেন আদালতে অতিরিক্ত পিপি তাপস পাল। তিনি বলেন, ওই বাড়ির নির্মাণ কাজে ইসলাম গ্রুপ অংশ নিয়েছিল।
বাংলাদেশের শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তাদের একজন জহুরুল ইসলামের (প্রয়াত) ছেলে মনজুরুল ইসলাম বাবার প্রতিষ্ঠিত ইসলাম গ্রুপ ছাড়াও ইস্টার্ন হাউজিং, ইসলাম ব্রাদার্স প্রপার্টিজ, বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান। লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশেরও পরিচালক তিনি।
ঢাকা সেনানিবাসে মইনুল সড়কের ওই বাড়িতে জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান থাকাকালে থাকতেন। তার মৃত্যুর পর সেই বাড়ি তার স্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়াকে ইজারা দলিলের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
২০১০ সালে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ওই ইজারা বাতিল করলে তার বিরুদ্ধে আদালতে যান খালেদা জিয়া। আইনি লড়াইয়ে তিনি হারলে ওই বাড়ি ছাড়তে হয় তাকে।
মনজুরুল ও রহিমের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক আগামী ২১ জুন সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ঠিক করে দেন বলে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জানিয়েছেন।
দেড় দশক আগের এই মামলায় এ বছর বিচার শুরুর পর এনিয়ে এখন পর্যন্ত ২৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হল; মোট সাক্ষী ৫৭ জন।
গত ১৩ এপ্রিল তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিল এই আদালত। এরপর গত ২১ মে মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক জহিরুল হুদার জবানবন্দি নেওয়ার মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
দুদকের মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে বিএনপির নেতারা বলছেন, তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেককে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এই মামলার বিচার এগিয়ে নিচ্ছে সরকার।
শুনানির দিনগুলোতে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে একদিন বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের পাল্টপাল্টি হৈ চৈ, ধাক্কাধাক্কিতে বিচারককে এজলাসও ছাড়তে হয়েছিল।
তারেক ও তার স্ত্রীকে পলাতক দেখিয়ে এই মামলার বিচার চলছে। তারা দেড় দশক ধরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানাও রয়েছে।
মামলা বিত্তান্ত
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তারেক গ্রেপ্তার থাকা অবস্থায় ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার কাফরুল থানায় মামলাটি করেন দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক জহিরুল হুদা। তিনি সম্প্রতি আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, তারেক ও জোবায়দার ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে।
মামলায় জোবায়দার মা ইকবাল মান্দ বানুকেও আসামি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় আদালতে। পরে উচ্চ আদালত তার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম বাতিল করে দেয়।
তারেক-জোবায়দার মামলায় প্রথম দিনই সাক্ষী আসেনি
তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন মামলাকারী দুদক কর্মকর্তা
তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে মামলায় আবার সাক্ষী গরহাজির
তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে মামলায় সাক্ষ্য দিলেন তিন ব্যাংকার
অভিযোগপত্র জমা হওয়ার পর মামলা বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করা হয় জোবায়দার পক্ষেও। তখন মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করে হাই কোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাই কোর্টের আদেশ বহাল রাখে।
এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ করে রায় দেয় হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরই আপিলের আবেদন করেন জোবায়দা।
এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ লিভ টু আপিল খারিজ করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখে।
এরপর গত ১৩ এপ্রিল তারেক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার।
তারেক ২০০৮ সালে তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোতে জামিন নিয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান চিকিৎসা নিতে। তারপর থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন।