ব্যবহার না করলেও হাতে থাকা ইভিএমগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
Published : 12 Jan 2025, 04:57 PM
জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নিজেদের কাছে রাখতে বিদ্যমান জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ বাতিল করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ জানাবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।
রোববার এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন ইসির দ্বিতীয় কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ নিয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে সভায়।
তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ রহিত হলেও এখনও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ বলবৎ হয়নি, প্রজ্ঞাপনও জারি হয়নি। গত কমিশন থাকতেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এ আইনটি বাতিল করে আগের স্থিতাবস্থায় ফেরত নেওয়ার; একটা প্রস্তাবনা সে সময় গৃহীত হয়।
“সে আলোকে ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর একটা ডিও লেটার পাঠানো হয় কমিশন থেকে। এ ধারাবাহিকতায় আজ এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা অফিসিয়ালি কমিশনের সিদ্ধান্ত আকারে পত্রালাপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
নির্বাচন কমিশন ২০০৭-০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু করে। ভোটার তালিকার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজটিও হয় ইসির মাধ্যমে। ২০১০ সালে ইসির অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ একটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১ সালে এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
কিন্তু এনআইডি কার্যক্রম স্থানান্তরে দ্বিমত জানিয়ে ২০২১ সালের ৭ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছিল ইসি।
এরপরও ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ বাতিল করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিল, ২০২৩ সংসদে পাস হয়। জাতীয় পরিচয়পত্রর সেবা কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অধীনে একটি নিবন্ধকের আওতায় নেওয়ার কথা বলা হয় সেখানে।
তবে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ওই আইন কার্যকরের তারিখ নির্ধারিত না হওয়ায় এখনও নির্বাচন কমিশনের অধীনেই এনআইডি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এর ধারবাহিকতায় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনও বিদায়ের আগে এনআইডি সেবা ইসির হাতে রাখতে সরকারের কাছে ডিও লেটার দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করে এবং তৎকালীন সচিব তা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পত্র দেন।
এনআইডি সেবা কমিশনের কাছে রাখার যৌক্তিকতা তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “জনবল, প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এটা নিয়ে যাওয়াটা সঙ্গত হবে না। ডেটাবেজটা ইসির নিজস্ব, এখানে থাকতে হবে। এ প্রাইমারি ডেটা কারও কাছে হস্তান্তর করা যাবে না।
“আমাদের কাছে মনে হয়েছে এনআইডি সেবা (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে) নিয়ে যাওয়া কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, সংবিধান বলে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা প্রস্তুত, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ইসির। এটার ডেটাবেইজ ২০০৭ সাল থেকে ইসি ডেভেলপ করছে। এ থেকে এনআইডি ও ভোটার তালিকা প্রডিউস হয়। শুধু প্রিন্ট করার জন্য এআইডি সেবা অন্যত্র যাওয়াটা যৌক্তিক মনে করি না।”
ভোটার নিবন্ধন: বিশেষ এলাকায় ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ
২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটার নিবন্ধনের উদ্যোগ শুরু হচ্ছে। সেই সঙ্গে গত হালনাগাদে যুক্ত ভোটারদের তথ্য যাচাই-বাছাই চলবে।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকায় ভোটার নিবন্ধনের বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে সভায়।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “বিশেষ তথ্য ফরম-২ এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে কিছু ফিডব্যাক এসেছিল। এ ফরম ফিলাপ করতে গিয়ে সাধারণ নাগরিকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, দীর্ঘসূত্রতার মুখোমুখি হচ্ছেন। এমতাবস্থায় এটার সহজীকরণ করা যায় কি না।
“আমরা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সংশ্লিষ্ট উপকমিটিতে পাঠিয়ে যাচাই করে দেখব এবং এটাকে আরেকটু সহজীকরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একটি আজই দেওয়া হয়েছে-ক ক্যাটাগরির, যাদের ব্যাপারে নিশ্চিত তারা বাংলাদেশি নাগরিক, তাদের বিষয়ে ফরম-২ এর রিকোয়ারমেন্ট উঠিয়ে দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “৫৬টি উপজেলা আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিমের, যেখানে রোহিঙ্গা ও বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণামূলকভাবে ভোটার তালিকায় ঢুকে যাওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা চলমান থাকবে।”
ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প শেষ হলেও হাতে থাকা কার্যকর মেশিনগুলোকে বুঝে নিয়ে আপাতত রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে নাসির উদ্দিন কমিশন।
রোববার কমিশন সভায় ইভিএম বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
তিনি বলেন, “বর্তমানে যে মেশিনগুলো আছে সেটার রক্ষণাবেক্ষণ এবং দায়-দায়িত্ব, অপারেশন বুঝে নেওয়ার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা জরুরিভিত্তিতে এটার দায়-দায়িত্ব বুঝে নেব, রক্ষণাবেক্ষণ করব। ভবিষ্যতে ইভিএমের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত হবে, সেটা ব্যবহৃত হবে বা হবে না।”
২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে লাখো ইভিএমে কেনা হয় একটি প্রকল্পের অধীনে। পাঁচ বছর মেয়াদের প্রকল্পটি শেষ হওয়ার মধ্যিই ২০২৩ সালে এক বছর বাড়ানো হয়। এরপর অর্থের সংস্থান না থাকায় ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নতুন করে আর ইভিএম কেনা হয়নি।
দেড় লাখের মধ্যে ৭০ হাজার ইভিএম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ) সংরক্ষিত রয়েছে। বাকি ৮০ হাজার যন্ত্র মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহার হয়েছে।
রক্ষণাবেক্ষণের ঝামেলায় ইভিএমের একটি বড় অংশই অকেজো হয়ে গেছে।
এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “ইভিএমের প্রকল্প জুন মাসে শেষ হয়ে গেলেও কমিশনের পক্ষে এখন পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে ইভিএম ‘টেকওভার’ করা হয়নি। প্রশিক্ষণ অংশটুকু বাকি ছিল, এ সপ্তাহে শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় ইভিএম ভবিষ্যতে ব্যবহার করা হবে কি না- সে ব্যাপারে আমরা জানি না। আমরা জানি সংস্কার কমিশনের মাধ্যমেও কিছু প্রস্তাবনা এটার ব্যাপারে আসতে পারে। … আমরা জরুরিভিত্তিতে এটার দায়-দায়িত্ব বুঝে নেব, রক্ষণাবেক্ষণ করব।”
ত্রয়োদশ নির্বাচন যে কেবলই ব্যালট পেপারের মাধ্যমে হবে তাও স্পষ্ট করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
শনিবার সিলেটে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে হবে না, এটা পরিষ্কার। আগামী জাতীয় নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে করার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই।”
আরও পড়ুন:
আগে জাতীয় নির্বাচন করার পক্ষে ইসি
এনআইডি সেবা হাতে রাখতে ফের উদ্যোগী ইসি
এনআইডি সেবা সহজীকরণে 'তৎপর' ইসি
এনআইডি 'তথ্য হস্তান্তরে' জড়িতদের বাঁচার সুযোগ নেই: মহাপরিচালক
ইভিএমের প্রকল্প একনেকে উঠেনি, তবে ইসি আশা ছাড়েনি