প্রত্যাশার পর সতর্ক বার্তাও দিয়েছিল ইসি, তাতে ফল আসেনি, একনেকের বৈঠকে ওঠেনি ইভিএম কেনার প্রকল্প।
জানুয়ারির প্রথম ভাগে এই প্রকল্প পাস না হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ সম্ভবপর হবে না বলে ইসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল।
মধ্য জানুয়ারিতে মঙ্গলবার একনেক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, এই প্রকল্পটি সভায় আসেনি।
তিনি বলেন, “আজকের বৈঠকে ইভিএম প্রকল্পটি তালিকায় ছিল না। কাজেই এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে কোনো কিছু জানতে চাননি।”
সেক্ষেত্রে প্রকল্পটির বর্তমান হাল কী- জানতে চাইলে মান্নান বলেন, এটি ‘যথাযথভাবে প্রক্রিয়াধীন’ আছে।
“যদি এই প্রকল্প না আসলে এটা জাতীয় প্রশ্ন। ইলেকশন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের মতো কাজ করবে।”
আগামী বছরের শুরুতে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের যে পরিকল্পনা ইসি সাজিয়েছে, তাতে অর্ধেক সংসদীয় আসনে (১৫০টি) ইভিএমে ভোটগ্রহণের ভাবনা রয়েছে।
সে লক্ষ্যে গত ১৯ অক্টোবর প্রায় দুই লাখ ইভিএম কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ের জন্য ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় ইসি। এক দফা ফেরত আসার পর সংস্কার করে পুনরায়ও পাঠানো হয় প্রস্তাব।
কিন্তু কোনো অগ্রগতি না দেখে নভেম্বরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছিলেন, মধ্য জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্পটি পাস না হলে পরবর্তী কাজগুলো করা সম্ভব হবে না।
এরপর জানুয়ারির শুরুতে আরেক নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছিলেন, মধ্য জানুয়ারির মধ্যে ইভিএমের প্রকল্প পাস না হলে আগামী নির্বাচনে ১৫০ আসনে এই যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
এখন মঙ্গলবারের সভায় প্রকল্পটি না উঠলেও আশা ছেড়ে দেয়নি নির্বাচন কমিশন।
একনেক বৈঠকের পর জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা নিয়ে আমাদের তোড়জোড় নেই। আজ উঠেনি; যে কোনো সময় উঠতে পারে সামনে। আমাদের দিক থেকে সব ধরনের কাগজপত্র এবং যা যা চাহিদা ছিল সব দেওয়া হয়েছে।”
তবে তিনি জানান, ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালটে ভোট নেওয়ার প্রস্তুতিও রাখছে ইসি। হাতে থাকা ইভিএম দিয়ে যতগুলো আসনে সম্ভব, সেগুলোতে যন্ত্রে ভোটগ্রহণ হবে।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ইতোপূর্বে জানিয়েছিলেন, ইসির হাতে এখন যতগুলো ইভিএম রয়েছে, সেগুলো দিয়ে অর্ধ শতের মতো আসনে ভোটগ্রহণ সম্ভব।
এক দশক আগে বাংলাদেশে এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি প্রথম ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু করে। পরে নির্বাচন কমিশনগুলো স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করলেও বর্তমান কমিশন বড় পরিসরে যন্ত্রে ভোটগ্রহণে এগোতে চাইছে।
এদিকে ইভিএম নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে থাকলেও বিএনপিসহ তাদের মিত্র দলগুলোর প্রবল আপত্তি ইভিএম নিয়ে; তাদের ভাষ্য, এতে ভোটের ফল বদলে দেওয়া সহজ; যদিও ইসি বলে আসছে, ইভিএমে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই।