আগামী সংসদ নির্বাচনে দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট করার লক্ষ্য নিয়ে ৮ হাজার কোটি টাকার এক প্রকল্প সরকারকে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তা এখনও পাস হয়নি। জানুয়ারির মধ্য ভাগের মধ্যে তা পাস না হলে আগামী বছরের জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে ইসির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভবপর হবে না বলে আভাস দিলেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।
রোববার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ইভিএম প্রকল্প পাসের প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “ইভিএম প্রকল্প খুব একটা এগোচ্ছে বলে মনে হয় না। এটা আসলে খুব বেশি এগোয়নি।”
আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনের অর্ধেকে ভোটগ্রহণ ইভিএমে করার পরিকল্পনা ইসির।
১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার লক্ষ্যে প্রায় দুই লাখ ইভিএম কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ের লক্ষ্যে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে গত ১৯ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় ইসি। তবে পরিকল্পনা কমিশন কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে সেই প্রস্তাব ফেরত পাঠিয়েছিল। পরে প্রস্তাব সংস্কার করে ফের পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে।
জানুয়ারির শুরুতে এই প্রকল্প সরকার পাস না করলে দেড়শ আসনে যন্ত্রে ভোটগ্রহণ করা যাবে না বলে আগে বলেছিলেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল, রোববার তারই প্রতিধ্বনি তুললেন সহকর্মী রাশেদা।
তিনি বলেন, “প্রকল্পের অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করব বলে আমরা বলেছিলাম। মধ্য জানুয়ারির মধ্যে ইভিএমের নতুন প্রকল্প পাস না হলে ১৫০ আসনে এই যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।”
প্রস্তাব পাস না হলে কী হবে- তার উত্তরে রাশেদা বলেন, “প্রকল্প পাস না হলে আমাদের কাছে বর্তমানে যা আছে, তাই দিয়েই ভোট করব। বাকিগুলোতে ব্যালটে যেতে হবে।”
ইসির হাতে এখন যতগুলো ইভিএম আছে, তা দিয়ে ৫০টি আসনে ভোটগ্রহণ করা যাবে বলে সিইসি ইতোপূর্বে জানিয়েছিলেন। তবে রাশেদা খানিকটা বাড়িয়ে বলেছেন, তাদের হাতে থাকা ইভিএম দিয়ে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ভোটগ্রহণ সম্ভব।
প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে ইসির বৈঠক
এনআইডি সেবা নিয়ে আইটি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ও মতামত জানতে রোববার বৈঠক করে ইসি। তবে এই সেবার ভার ইসি, নাকি সরকারের হাতে থাকবে, সেই বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট মতামত আসেনি বৈঠকে।
বৈঠক শেষে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সবাই সেটা স্বীকার করে নিচ্ছি অত্যন্ত সন্দর একটা ডাটাবেজ আছে। ১৮ বছরের নিচে যারা আছে, তাদের তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এখন কমিশন, নাকি অন্য কেউ নেবে, এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হায়দার আলী বলেন, “সিদ্ধান্ত কমিশন বা সরকার নেবে। কোনো কোনো দেশে কমিশনের কাছে আছে। কোনো কোনো দেশে সরকারের কাছে আছে। আমরা কোনোটাই জোর দিইনি, কার কাছে থাকা উচিৎ।”
বুয়েটের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, “দেশের বড় সম্পদ। সুষ্ঠুভাবে মেইনটেইন হোক এবং যেখান থেকেই হোক আমরা সেটাই চাই।”
অধ্যাপক কায়কোবাদ বলেন, “কো-অর্ডিনেশনে আমরা মোটেই ভালো না। যাতে সুষ্ঠুভাবে কাজটা হয়, এটাই আমরা চাই।”
নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, “এনআইডি নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা না থাকা নিয়ে কোনো সংকট নেই। আমরা প্রযুক্তিবিদদের মতামত নিয়েছি। পরবর্তীতে কমিশন বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
২০০৮ সালে ভোটার পরিচয়পত্রের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির সময় থেকে তা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ইসি পালন করছিল। তবে এখন তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিতে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।