নির্বাচন কমিশন আপত্তি জানালেও আওয়ামী লীগ সরকার গতবছর এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে দিতে নতুন আইন পাস করে।
Published : 10 Sep 2024, 10:20 PM
জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে আইন করা হয়েছিল, ক্ষমতার পালাবদলে এবার তা বাতিল চেয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।
তাদের দাবি অনুযায়ী আইনটি বাতিল হলে এনআইডি সেবা বরাবরের মতই নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকবে।
ইসি সচিব শফিউল আজিম স্বাক্ষরিত ওই আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জন বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনির কাছে পাঠানো হয়।
সেখানে বলা হয়- “জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্তকরণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ বাতিলের বিষয়টি আপনার নজরে আনার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগের আগে) সদয় অনুমোদন দিয়েছেন।”
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে শফিউল আজিম সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ বিষয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। কমিশন পদত্যাগের আগে এ বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মহোদয়কে একটি ডিও লেটার দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে গেছেন। আমি সচিব হিসেবে ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছি।”
নির্বাচন কমিশন ২০০৭-০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু করে। ভোটার তালিকার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজটিও হয় ইসির মাধ্যমে। ২০১০ সালে ইসির অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ একটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১ সালে এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এর ধারবাহিকতায় গত বছর সেপ্টেম্বরে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিল, ২০২৩ সংসদে পাস হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্রর সেবা কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অধীনে একটি নিবন্ধকের আওতায় নেওয়ার কথা বলা হয় সেখানে।
ওই আইনে বলা হয়েছে, নিবন্ধন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, সমন্বয় ও পরিবীক্ষণের জন্য একটি সমন্বয় কমিটি থাকবে। এই কমিটির সভাপতি হবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব। নিবন্ধক হবেন কমিটির সদস্য সচিব। নির্বাচন কমিশন ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন সদস্য।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সবখানে সংস্কার চলছে। এর ধারাবাকিতায় ৫ সেপ্টেম্বর সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশনও পদত্যাগ করেছে।
তাদের বিদায়ের পাঁচ দিনের মাথায় জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্তকরণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন বাতিলের জন্য এই চিঠি দিল ইসি সচিবালয়।
আধা সরকারিপত্রে বলা হয়েছে, “তৎকালীন সরকার সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্যসমৃদ্ধ জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যস্তকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের মতামত গ্রহণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রক্রিয়ার কোনো পর্যায়েই নির্বাচন কমিশনের মতামত গ্রহণ করা হয়নি।”
এনআইডি কার্যক্রম স্থানান্তরে দ্বিমত জানিয়ে ২০২১ সালের ৭ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছিল ইসি। এরপরও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ বাতিল করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়।
তবে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ওই আইন কার্যকরের তারিখ নির্ধারিত না হওয়ায় এখনও নির্বাচন কমিশনের অধীনেই এনআইডি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়, এ আইন কার্যকর হলে ভোটার তালিকা প্রণয়নে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতা খর্ব হবে। তথ্যের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন নিবন্ধকের ওপর নির্ভর করতে হবে, যা সংবিধানে প্রদত্ত নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন অস্তিত্বের পরিপন্থি।
পুরনো খবর
জন্মের পরই এনআইডি, সংসদে বিল পাস
এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিতে কারিগরি কমিটি
এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্রে নেওয়ার প্রস্তাব, ইসি কর্মকর্তাদের আপত্তি