মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা সংসদকে অবহিত করেন আইনমন্ত্রী।
Published : 05 Feb 2024, 06:35 PM
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে দেশটির সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর অনুপ্রবেশের ঘটনার মধ্যে বিরাজমান পরিস্থিতি বাংলাদেশ খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। দেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনীকে ধৈর্য ধারণ করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার বিরোধী দলীয় চিফ হুইপের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মিয়ানমারের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সীমান্তের এপারে সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার বিষয়টি সংসদকে অবহিত করেন।
এ দিন বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।
মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের যুদ্ধের মধ্যে সোমবার সকাল পর্যন্ত গত দুই দিনে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৯৫ জন সশস্ত্র বিজিপি সদস্য।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে গত কয়েকদিন ধরেই। রোববার সেই যুদ্ধ আবার জোরালো হয়েছে। ওই দিন ৬৮ জন বিজিপি সদস্য পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন, তাদের মধ্যে ১৫ জন আহতও রয়েছেন।
সংঘর্ষের মধ্যে সোমবার দুপুরের দিকে তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে উড়ে আসা মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশিসহ দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার বিকালে সংসদ অধিবেশনে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রশ্ন রাখেন, মিয়ানমারে সংঘাতের মধ্যে সাধারণ মানুষ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। গোলাগুলি হচ্ছে, সে গুলি এসে বাংলাদেশে পড়ছে। এ অবস্থায় সীমান্তে নিরাপত্তার প্রশ্নে, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা প্রশ্নে সরকার থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে প্রশ্নোত্তরে অংশ নিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে সরকার ওয়াকিবহাল আছে। আজকেও ওখানকার সীমান্ত রক্ষা বাহিনী অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের মধ্যে কিছু আহতও রয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, একটা স্কুলে রাখা হয়েছে।
“মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটা আলোচনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং আমরা সে আলোচনা করার জন্য তাদেরকে ফেরত পাঠানো বা ফেরত যদি পাঠানো না যায় অন্যান্য ব্যবস্থা কী করা যায় সেটাও হবে।”
সার্বিক বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেটা নির্দেশ দিয়েছেন সেটা হচ্ছে আমাদের যে সশস্ত্রবাহিনী বা প্যারা মিলিটারি বাহিনী, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তাদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্ডারে স্কুল বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “মর্টার শেলে আমাদের একজন ও ওদের একজন মারা গেছে এটাও সঠিক। এ পরিস্থিতি বাংলাদেশ খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এটার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয়
সংসদে আরেক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময়ে বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয়।
সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে তিনি বলেন, মামলাটি কঠিন হওয়ায় তদন্তকারী সংস্থা সঠিকভাবে তদন্ত করে এ মামলার সুরাহা করবে।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ সম্পূরক প্রশ্ন রেখে জানতে চান, সাগর-রুনি হত্যা মামলার এক যুগ পেরিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন বের হয়নি। একটা মামলার তদন্ত করতে কত বছর লাগবে? ২০২৪ সালের মধ্যে সাগর-রুনি হত্যা মামলার চার্জশিট থানায় পৌঁছাবে কি না?
সীমান্ত রক্ষীদের ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা বেড়ে ৯৫
মিয়ানমারের যুদ্ধ ছেড়ে সশস্ত্র অনুপ্রবেশ, বাড়ি ছাড়ছেন স্থানীয়রা
অভ্যুত্থানের ৩ বছরে প্রথমবার বেকায়দায় মিয়ানমারের জান্তা প্রধান
জান্তা আমলে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে: ভলকার তুর্ক
জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, “সংসদ সদস্যের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে আমি সাধুবাদ জানাই। একটা জিনিস আমাদের লক্ষ্য করতে হবে যারা তদন্ত করে তারা যতক্ষণ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের ইয়ে (রহস্য) উদঘাটন না করতে পারেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত শেষ করা সমীচীন হয় না।
তিনি বলেন, “আমি এইটুকু বলতে পারি অবশ্যই তদন্তকারী সংস্থা সঠিকভাবে তদন্ত করে এ মামলার সুরাহা করবে। যারা অপরাধী তাদের অবশ্যই ধরা হবে। তবে আমি এ মামলার সময় বেঁধে দিতে চাই না। আমি আইনজীবী জানি, এটার সময় বেঁধে দেওয়া সম্ভব না।”
বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক সাগর এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনিকে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে তাদের ভাড়া বাসায় হত্যা করা হয়।
মহানগরে ১৫ বছরে ট্রাফিক পুলিশের জরিমানা আদায় ৭৭৫ কোটি টাকা
দেশের বিভিন্ন মহানগরীতে গত দেড় দশকে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ জরিমানার মাধ্যমে ৭৭৫ কোটি ২৪ হাজার ৮০৭ টাকা আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।
নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান সংসদে এ তথ্য জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে আইনমন্ত্রী তার পক্ষে জবাব দেন।
মিয়ানমার সীমান্তে লাগাতার গোলাগুলি, নাইক্ষ্যংছড়ির ৫ স্কুলে ‘ছুটি’
সীমান্তে ‘সর্বোচ্চ সতর্ক’ থাকার নির্দেশ বিজিবি মহাপরিচালকের
মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে ফের গোলাগুলি, এপারে আতঙ্ক
মিয়ানমারের গুলি এসে ভেদ করল টেকনাফের বাড়ির দরজা
চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে সংবাদে জানানো হয়, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ২০২৩ সালে ৯৭ হাজার ২৪১টি মামলা দায়ের করে এক লাখ ২০ হাজার ২৮৭ জন অবৈধ মাদক চোরাকারবারিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনেছে।
নোয়াখালী-৩ আসনের মো. মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিজিবি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৯৯৬ কোটি ৯৯ লাখ ৭২৯ টাকার অন্যান্য অবৈধ চোরাচালানী পণ্য এবং বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আটক করেছে। এ সময়ে দুই হাজার ৮১৭ জন আসামীর বিরুদ্ধে ৩৮ হাজার ৬৯২টি মামলা দায়ের করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।