৮৩ বছর বয়সী এই জামায়াত নেতার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল, জানিয়েছেন বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক।
Published : 14 Aug 2023, 09:13 PM
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা গেছেন।
কাশিমপুর কারাগারে থাকা সাঈদী অসুস্থ হয়ে পড়লে রোববার তাকে গাজীপুরের তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
পরে রাতে তাকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
সেখানে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. রেজাউর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি হার্টের পেশেন্ট ছিলেন, সাথে ডায়াবেটিস ছিল। আমাদের এখানে গতকাল রাত সাড়ে ৮টা-৯টার দিকে এসেছিলেন হার্ট অ্যাটাক নিয়ে। আজকে আবার আরেকটি অ্যাটাক হয়। আমাদের টিম সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। আমরা রাত ৮ টা ৪০ মিনিটে ডেড ডিক্লেয়ার করেছি।”
মৃত ঘোষণার পর পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, “উনার দুই ছেলে এখানে উপস্থিত আছেন। আনুষ্ঠানিকতা সেরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”
সাঈদীর মৃত্যুর জামায়াতে ইসলামীর কর্মী-সমর্থকরা বিএসএমএমইউতে জড়ো হন। সে এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির রমনা জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সালমান ফার্সী।
জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির সাঈদীর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন ঢাকার শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই কারাগারে রয়েছেন সাঈদী। এরপর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা হয় তাকে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিল।
ওই রায়ের পর দেশজুড়ে সহিংসতা চালায় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। ওই তাণ্ডবে প্রথম তিন দিনেই নিহত হন অন্তত ৭০ জন। এছাড়া বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়।
সাঈদী আপিল করলে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেয়। তাতে সাজা কমে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ আসে। ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন হলেও তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
এরপর থেকে সাঈদী কাশিমপুর কারাগারেই ছিলেন। সেখানে বুকে ব্যথা অনুভব করার কথা জানালে রোববার সন্ধ্যায় সাঈদীকে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
তাকে দেখে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. রফিকুল ইসলাম বলেছিলেন, সাঈদী দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
যুদ্ধাপরাধের জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা গোলাম আযমেরও আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছিল। তিনি দণ্ড ভোগ করার সময় হাসপাতালে মারা যান।
দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা সাঈদীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান এক শোকবাণীতে বলেন, “মিথ্যা ও যড়ন্ত্রমূলক মামলায় তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে তার উপর চরম অন্যায় করা হয়েছে। তার ইন্তিকাল বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তার এ শূন্য স্থান সহজে পূরণ হবার নয়।”
একাত্তরে ‘দেইল্লা রাজাকার’ হিসেবে পরিচিত সাঈদী পরে ইসলাম ধর্মীয় বক্তা হিসেবে পরিচিতি কুড়ান। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জামায়াতের মনোনয়নে পিরোজপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্যও হন।
তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের রায় দেওয়ার সময় ট্রাইব্যুনালের বিচারক বলেছিলেন, “এই মামলা যার বিরুদ্ধে তিনি বাংলাদেশে অত্যন্ত সুপরিচিতি। তার ওয়াজ শুনতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করে।
“দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কেবল মাওলানা হিসাবেই সুপরিচিত নন, তিনি দুইবার সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন। তার আরেকটি পরিচয় হল, তিনি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির।”
এভাবে আসামির পরিচয় দেওয়ার পর বিচারক বলেন, “আজ এখানে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার রায় হচ্ছে না। দুই বারের সংসদ সদস্য বা জামায়াতের নেতা সাঈদীরও রায় দিচ্ছে না ট্রাইব্যুনাল।
“আজ যার রায় বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হচ্ছে, তাকে জানতে হলে আমাদের চল্লিশ বছর পেছনে তাকাতে হবে। তখন পিরোজপুরে সাঈদীকে মানুষ চিনত দেলু নামে।”
বিচারক বলেন, সেই সময়ের ৩০ বছরের যুবক সাঈদী ছিলেন রাজাকার বাহিনীর একজন সদস্য। উর্দু ভালো বলতে পারতেন বলে পাকিস্তানি সেনাদের সব অপারেশনেই তিনি তাদের সঙ্গে ছিলেন।
যে ২০টি অভিযোগে সাঈদীর বিচার হয়, তাতে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও নির্যাতনের মতো ঘটনা ছিল।