“এমন কোনো কাজ আছে কি না, যেটা গত চার বছরে করতে না পারার কারণে কারও আক্ষেপ আছে?”, নিজের দায়িত্ব গ্রহণের চার বর্ষপূর্তিতে বলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র।
Published : 19 May 2024, 08:01 PM
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর চার বছরে ৪০ বছরের কাজ শেষ করার দাবি করেছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি এই সময়ে কোনো বিষয়ে নিজের ব্যর্থতা মানেন না।
গণপরিবহন ব্যবস্থা পাল্টে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে চালু করা ঢাকা নগর পরিবহন সফল না হওয়ার কারণ হিসেবে ‘বিনিয়োগকারী না পাওয়ার’ বিষয়টি সামনে এনেছেন তিনি।
রোববার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তাপস।
২০২০ সালের ১৯ মে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। তার চার বছর পূর্তির দিন এই সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে গত চার বছর কী কী উন্নয়ন কাজ হয়েছে, তার একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে মেয়র বলেন, “গত চার বছরে নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ২০০ কোটির বেশি টাকা দিয়ে নানা অবকাঠামো নির্মাণ, উন্নয়ন ও সংস্কার করা হয়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার ৮২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। জলাবদ্ধতার সমস্যা ৭০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।”
এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাপস।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “গত চার বছরে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, তা দেখাতে চাইলে ২০ মিনিটের ভিডিও চিত্র দিয়ে হবে না। অন্তত দুই দিন লাগবে। ৪০ বছরের কাজ ৪ বছরে সম্পন্ন করেছি।”
পরে নিজে প্রশ্ন রেখে বলেন, “এমন কোনো কাজ আছে কি না, যেটা গত চার বছরে করতে না পারার কারণে কারও আক্ষেপ আছে?”
আরেক এই প্রশ্নে তাপস বলেন, “কোনো ব্যর্থতা নেই, দুর্বলতা থাকতে পারে।”
এরপর একজন সাংবাদিক যানজটের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রশ্ন রাখেন, “আপনি নির্বাচনি ইশতেহারে ঢাকাকে সচল ঢাকা করার অঙ্গীকার করলেরও বাস্তবে সম্ভব হয়নি কেন?”
তাপস জবাব দেন, “গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে তিনটি রুটে ঢাকা নগর পরিবহন চালু করা হয়েছে। তবে সচল ঢাকা নির্মাণে নতুন বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে।
“পুরোনো বাস দিয়ে আর ঢাকা নগর পরিবহন চালু করব না। আমরা সরকারের শীর্ষ মহলে অনুরোধ করব, নতুন বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য কর মওকুফ করা যায় কি না। প্রণোদনামূলক কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া গেলে আমরা মনে করি নতুন বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবে।”
ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বিতর্কে যে জবাব
সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের একটি অংশ ছিল ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নিয়ে।
তার বক্তব্যে ডেঙ্গু রোগী আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে তার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তাপস বলেন, “রোগীর সংখ্যা কত হলো না হল, সেটা কিন্তু চিন্তার বিষয় না। বিষয় হল কর্মপরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা। এমন কোনো রোগী বলতে পারবে না, আজ অবধি সেই রোগীর বাসায় মশককর্মী যায়নি।”
গত বুধবার মালিবাগে একটি পাবলিক টয়লেট উদ্বোধন করতে গিয়ে তাপস বলেছিলেন, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমেছে ৪২ হাজার।
২০১৯ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন সাঈদ খোকন। তাপস স্পষ্টতই তার পূর্বসূরির আমলের সঙ্গে তার আমলের তুলনা দেখাতে চেয়েছিলেন।
তিন দিন পর সংবাদ সম্মেলনে এসে খোকন বলেন, এই বক্তব্যে দেশবাসী ও তিনি হতভম্ভ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে ২০১৯ সালে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। এদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটির রোগী ছিলেন ৫১ হাজার ৭৬২ জন।
সে বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছিলেন ১৭৯ জন। ঢাকায় কত জন মারা গিয়েছিলেন, আলাদা করে সেই তথ্য নেই।
চার বছর পর ২০২৩ সাল হয়ে উঠে ভয়ংকর। সেবার সারা দেশে রেকর্ড ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ রোগী শনাক্ত হন। এদের মধ্যে ঢাকার ছিলেন ১ লাখ ১০ হাজার ৮ জন।
অর্থাৎ ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ঢাকায় রোগী ছিল দ্বিগুণেরও বেশি।
মৃত্যুর দিক দিয়েও ২০২৩ সাল ছিল বেদনাবিধুর। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হিসাবে সারা দেশে ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয় ওই বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। ঢাকায় সংখ্যাটি ছিল ৯৮০।
অর্থাৎ ২০১৯ সালে সারাদেশে ডেঙ্গুতে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, ২০২৩ সালে তার পাঁচগুণ মারা যায় কেবল ঢাকা শহরে।
গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে ২০২৩ সালে ডেঙ্গুর বিস্তারের সময় তাপসের বিদেশ যাওয়া নিয়ে কথা বলেন খোকন। তিনি বলেন, “আমি চেষ্টা না করে কিন্তু বিদেশে চলে যাইনি। আমি জনগণের সঙ্গে ছিলাম। আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, আমি অসুস্থতাকে গুরুত্ব দেইনি।
সাঈদ খোকনের বক্তব্যের জবাব না দিয়ে তাপস সামনে আনেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য ও পরিসংখ্যানের বিষয়টি।
অধিদপ্তরের তালিকা ধরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ঠিকানায় গিয়ে ওষুধ ছিটানো হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভুল তথ্য দিক আর সঠিক তথ্য দিক, সেখানে লার্ভা ধ্বংস করা হয়েছে, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।”
অধিদপ্তরের দেওয়া তালিকা ধরে ২০২৩ সালে ২৭ হাজার স্থাপনায় গিয়ে ৯ হাজার ৭৬৮ জন স্থানীয় রোগী শনাক্ত করেছেন বলেও জানান মেয়র তাপস।
ডেঙ্গু: তাপসের বক্তব্যে 'হতভম্ভ' সাঈদ খোকনের 'খোঁচা'
ডেঙ্গুতে'রেকর্ড মৃত্যুর বছরে'সাফল্য দাবি মেয়র তাপসের
খোকনের বক্তব্য'ব্যক্তিগত,গুরুত্বহীন':তাপস
ব্যাংক হিসাব জব্দ:তাপসের বিরুদ্ধে'প্ররোচনার'অভিযোগ তুললেন খোকন
সময়েই কেটে যাবে তাপস-খোকনের মতপার্থক্য:স্থানীয় সরকারমন্ত্রী