“আমি চেষ্টা না করে কিন্তু বিদেশে চলে যাইনি। আমি জনগণের সঙ্গে ছিলাম”, গত বছর ডেঙ্গুর মৌসুমে তাপসের বিদেশযাত্রা নিয়ে বলেন সাবেক মেয়র খোকন।
Published : 18 May 2024, 03:42 PM
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালের পর ডেঙ্গু পরিস্থিতির ‘উন্নতির দাবি’ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসের বক্তব্যে ‘দেশবাসী হতভম্ভ’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মেয়র ও ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য সাঈদ খোকন।
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো দেশে এক লাখ ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের সময় মেয়র ছিলেন খোকন, আর ২০২৩ সালে তিন লাখের বেশি রোগী শনাক্তের বছরে মেয়র তাপস।
গত বুধবার তাপস দাবি করেন, ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী কমেছে। শনিবার মিট দ্য প্রেসে সাংবাদিকদের ডেকে খোকন বলেন, “বর্তমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ২০১৯ এর তুলনায় ২০২৩ সালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪১ হাজার কম। আমি ভদ্রতার জন্য কারো নাম উল্লেখ করছি না। তবে এ ধরনের অপপ্রচার করা হলে আমি কষ্ট পাই, ব্যথিত হই।”
মিট দ্য প্রেসে মেয়র তাপসের নাম উল্লেখ না করেই তাকে উদ্দেশ করে ‘খোঁচা’ দেন খোকন। আবার বলেন, ‘আমরা একে অপরকে দোষারোপ না করি।’ পরে বলেন, “উনি (মেয়র তাপস) আমাদের দলীয় সমর্থনে একজন নির্বাচিত মেয়র। আমি এই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, আমি আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য, আমার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পাবলিকলি আমি যে কোন বক্তব্য দিতে পারি না, আমার জবাবদিহিতা রয়েছে।”
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ''এগিয়ে ছিল দক্ষিণ ঢাকা, স্মৃতির পাতায় ফিরে দেখা'' শীর্ষক মিট দ্য প্রেসে আসেন ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র খোকন, যার মেয়াদ শেষে ২০২০ সালে ১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় তাপসকে।
এরপর থেকেই খোকন ও তাপসের মধ্যে পাল্টাপাল্টি চলছে। খোকনের আমলে নানা ‘অনিয়ম ও ব্যর্থতার’ অভিযোগ বেশ কয়েকবার বক্তব্য রেখেছেন তাপস। খোকনও একাধিকবার পাল্টা অভিযোগ করেছেন।
এর মধ্যে গত বুধবার তাপস ঢাকায় মালিবাগ মোড় সংলগ্ন উড়ালসেতুর নিচে একটি গণশৌচাগার উদ্বোধন করতে এসে খোকন মেয়র থাকাকালে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবং তার আমলে ২০২৩ সালের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে খোকনের নাম বা তার আমলের কথা উল্লেখ না করে কেবল তাপসের বক্তব্য লেখা হয়।
এতে লেখা, “মেয়র তাপস বলেন, ২০১৯ সালে ঢাকা শহরে ১ লাখ ৫৫ হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত বছর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল যে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ২০১৯ সালকেও ছাড়িয়ে যাবে। আমরা যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।…সফলতার সাথে এইডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি বলেই ২০২৩ সালে উত্তর ও দক্ষিণ মিলিয়ে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগী ছিল ১ লক্ষ ১৩ হাজার।
“সুতরাং ২০১৯ এর তুলনায় ২০২৩ সালে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪২ হাজার কম ছিল। এ বছরও সকলের সহযোগিতায় ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব, ইনশাআল্লাহ।”
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে ২০১৯ সালে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। এদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটির রোগী ছিলেন ৫১ হাজার ৭৬২ জন।
সে বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে মারা দিয়েছিলেন ১৭৯ জন। ঢাকায় কত জন মারা গিয়েছিলেন, আলাদা করে সেই তথ্য নেই।
চার বছর পর ২০২৩ সাল হয়ে উঠে ভয়ংকর। সেবার সারা দেশে রেকর্ড ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ রোগী শনাক্ত হন। এদের মধ্যে ঢাকার ছিলেন ১ লাখ ১০ হাজার ৮ জন।
অর্থাৎ ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ঢাকায় রোগী ছিল দ্বিগুণেরও বেশি।
মৃত্যুর দিক দিয়েও ২০২৩ সাল ছিল বেদনাবিধুর। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হিসাবে সারা দেশে ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয় ওই বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। ঢাকায় সংখ্যাটি ছিল ৯৮০।
অর্থাৎ ২০১৯ সালে সারাদেশে ডেঙ্গুতে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, ২০২৩ সালে তার পাঁচ গুণ মারা যায় কেবল ঢাকা শহরে।
সাঈদ খোকন বলেন, “২০১৯ সালে যখন আমি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে ছিলাম, তখন ডেঙ্গুর সূচনা হয় এবং পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।
“আমার চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না, আমি চেষ্টা করে গেছি, দিন রাত পরিশ্রম করে গেছি, আমার এই হাজার চেষ্টার পরেও আক্রান্তের সংখ্যা সারা দেশে এক লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ১৫৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে এত আমি অত্যন্ত ব্যথিত ছিলাম।”
তাপসের বিদেশ যাত্রা নিয়ে ’খোঁচা’
২০২৩ সালে ডেঙ্গুর বিস্তারের সময় তাপসের বিদেশ যাওয়া নিয়ে কথা বলেন খোকন। তিনি ২০১৯ সালের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, “আমি চেষ্টা না করে কিন্তু বিদেশে চলে যাইনি। আমি জনগণের সঙ্গে ছিলাম। আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, আমি অসুস্থতাকে গুরুত্ব দেইনি।
“কিন্তু আমি খুব দুঃখ পেলাম, খুব কষ্ট পেলাম এই দুই তিন দিন পূর্বে, বর্তমান যে কর্তৃপক্ষ (মেয়র তাপস), তিনি বললেন, ‘২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ হাজার কম ছিল। আমি কষ্ট পেয়েছি, নগরবাসী হতভম্ভ হয়েছে, নগরবাসী অবাক হয়েছে। আমরা গত বছর দেখেছি, সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখের অধিক ছিল এবং সারা দেশে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭০৫ জন, এটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, যা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত।”
এখনও ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হয়নি তার আগেই চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৬ মে আক্রান্ত ২ হাজার ৫৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত এবং ৩২ জনের মৃত্যুর কথা তুলে ধরে তাপস বলেন, “এখনও কিন্তু মৌসুম শুরু হয়নি। গতকালকেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এর আগে বুধবার দিন তিনজন মারা গেছে। তারাও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।”
সামনে ডেঙ্গুর ভয়ংকর পরিস্থিততি আসছে জানিয়ে সাবেক মেয়র বলেন, “একটা সমস্যা আসতে পারে, সেটাকে আমাদের মোকাবিলা করা প্রয়োজন। আরেক জনের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজের ব্যর্থতাকে ঢাকার চেষ্টা না করে আসুন, সামনে যে একটা ভয়ংকর পরিস্থিততি হতে চলেছে, সেই পরিস্থিতিটাকে মোকাবিলার জন্য আমরা সর্বস্তরের নাগরিক, কর্তৃপক্ষ, আমাদের যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে, সবাই মিলে আগামী দিনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করি। আমরা একে অপরকে দোষারোপ না করি।দোষারোপের রাজনীতি না করে আমরা সবাই মিলে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করি।”
তাপস ডাকলে যাবেন খোকন
সিটি করপোরেশন ও মেয়র তাপসের প্রতি ইঙ্গিত করে খোকন বলেন, তিনি সহযোগিতা করতে প্রস্তুত, তাকে ডাকলে সহযোগিতা করতে তিনি যেতেও প্রস্তুত।
ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বলেন, “যেহেতু সরকারের একটা কর্তৃপক্ষ আছে, তারাই নেতৃত্ব দেবে। আমরা তাকে সাহায্য করতে চাই, সহযোগিতা করতে চাই। আমরা একটা সুন্দর ঢাকা নিরাপদ ঢাকা দেখতে চাই। আমার অভিজ্ঞতা আছে, আমাকে কর্তৃপক্ষ (তাপস) যে কোনো সময় ডাকবে আমি চলে যাব।”
জনপ্রতিনিধি হয়ে একে অপরের সমালোচনা করছেন, এতে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নে খোকন বলেন, “আমি আমার বক্তব্যে প্রেক্ষাপটটা বর্ণনা করেছি এবং আমি বলেছি আমরা অতীতের দিকে ফিরে যেতে চাই না। সামনে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি হওয়ার আভাস দিচ্ছে বিশ্লেষকরা, সেটাকে মোকাবিলা করার জন্য আমি সবার সঙ্গে কাজ করতে রাজি, কাজ করব।
“আমরা কাদা ছোড়াছুড়ি করতে চাই না। আমরা একই দলের সদস্য, আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করতে চাই। আগামী দিনে যে ভয়াবহতা আসতে পারে সেটা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবেলা করতে চাই।”
একই দলের হওয়ার বর্তমান মেয়রের সরাসরি সমালোচনা না করলেও নাগরিক হিসেবে গত চার বছরের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাজের মূল্যায়ন করবেন কি না- এই প্রশ্নে খোকন বলেন, “এই মূল্যায়নটা আমি আমার পরিবারের সদস্যের সঙ্গে বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় করতে পারি। আমি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী একজন সদস্য, আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়নের এমপি, আমার কিন্তু পাবলিক স্টেটমেন্টের ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আছে। সুতরাং এই মূল্যায়নের ভার জনগণের কাছে।”
বর্তমানে যারা আছে তাদের ব্যর্থ মনে করছেন কি না এমন প্রশ্নে জবাব আসে, “সমালোচনা আমি করছি না, কারণ আমার লিমিটেশন রয়েছে।”
সিটি করপোরেশন পরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা আছে কি না এমন প্রশ্নে, খোকন বলেন, “বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে।”
‘সাফল্যের’ ফিরিস্তি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ
২০১৫ সালের ১৭ মে থেকে ২০২০ সালের ১৬ মে পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ‘সাফল্যের’ ৪১টি তালিকাও তুলে ধরেন খোকন।
সিটি করপোরেশনকে ‘দুর্নীতি মুক্ত করে’ রাজস্ব আদায় ৫১২ কোটি থেকে ১০৩১ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া নিয়ে মেয়র তাপস যে বক্তব্য রেখেছেন, তার সরাসরি জবাব না নিয়ে খোকন বলেন, “আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম, তখন সিটি করপোরেশনকে জনকল্যাণমূলক সংস্থা হিসেবে রূপান্তর করেছিলাম। আমি আমার বাবার মত কোন ট্যাক্স না বাড়িয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করেছি। হয়ত রাজস্ব আদায় কম হয়েছে, কিন্তু তার দ্বিগুণ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিয়ে এসেছি।
“বর্তমান কর্তৃপক্ষ কবরস্থান ও শ্মশানে শেষকৃত্যের উপরেও অর্থ আদায় করছে, যা আমি বিনামূল্যে করে দিয়েছিলাম। আমি ডিএসসিসিকে কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয়, জনকল্যাণকর সংস্থা হিসেবে দেখেছি।”
এখন সিটি টোল নামে ‘চাঁদাবাজি’ হয় দাবি করে খোকন বলেন, ‘এটা বন্ধ হলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমে যাবে।”
তিনি বলেন, “ব্রয়লার মুরগিটা কিছুদিন আগেও আমার গরিব দুঃখী মানুষ কিনে নিতে পারত। সেই মুরগি ২২৫ থেকে ২৫০ টাকায় চলে গেছে। এটাকে কমানো সম্ভব যদি কাঁচাবাজারগুলোতে আমরা চাঁদাবাজিটা বন্ধ করতে পারি।”
সিটি করপোরেশনের কর্মীরাই এই চাঁদাবাজি করেন অভিযোগ করে খোকন বলেন, “পুলিশ যখন ধরতে যায় তারা একটা কাগজ দেখায় সংশ্লিষ্ট করপোরেশনের, যে তারা বৈধতা নিয়ে চাঁদাবাজি করছেন। অর্থাৎ সিটি টোলের একটা প্রটেকশন তারা পায়।
“আমি বলেছি এই সিটি টোলের নামে যে চাঁদাবাজি, এটা যদি বন্ধ করতে পারা যায়, তাহলে এই স্বল্প আয়ের মানুষগুলো এই কাঁচাবাজারের জিনিস, শাকসবজি থেকে শুরু করে ব্রয়লার মুরগি, তেলাপিয়া মাছ, পাঙাস মাছের দাম কমানো সম্ভব।”
নিজের নির্বাচনি এলাকার কথা তুলে ধরে সংসদ সদস্য খোকন বলেন, “আমার এলাকায় ইতোমধ্যে আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি, ‘আপনি এই চাঁদাবাজিটা বন্ধ করুন। সিটি টোলের নামে এই চাঁদাবাজি করতে দিতে চাই না’।”
আরও পড়ুন...
ডেঙ্গুতে 'রেকর্ড মৃত্যুর বছরে' সাফল্য দাবি মেয়র তাপসের
খোকনের বক্তব্য 'ব্যক্তিগত, গুরুত্বহীন': তাপস
ব্যাংক হিসাব জব্দ: তাপসের বিরুদ্ধে 'প্ররোচনার' অভিযোগ তুললেন খোকন
সময়েই কেটে যাবে তাপস-খোকনের মতপার্থক্য: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী