বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে মামলা করেছে, সেই প্রতিবেদন তলব করেছেন বিচারক।
Published : 25 Sep 2024, 05:26 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ওই হলের প্রাধ্যক্ষ শাহ মো. মাসুমসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২৫ থেকে ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে আদালতে।
নিহত তোফাজ্জল হোসেনের মামাত বোন আসমা আক্তার বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদনটি করার পর বিচারক তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
আদালত শাহবাগ থানায় চলা অন্য একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদনও তলব করেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন আইনজীবী জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, “হল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে শাহবাগ থানায় একই বিষয়ে একটি মামলা করেছে। ওই মামলাটিতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই আমরা ভিডিও দেখে ১৫ জনকে শনাক্ত করে তাদের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেছি যেন নিরীহ কোনো ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন।”
আবেদনে প্রাধ্যক্ষ ছাড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জালাল মিয়া, সুমন মিয়া, ফিরোজ কবির, আবদুস সামাদ, মোত্তাকিন সাকিন শাহ, আল হোসাইন সাজ্জাদ, ওয়াজিবুল আলম, আহসান উল্লাহ, ফজলে রাব্বি, ইয়ামুস জামান, রাশেদ কামাল অনিক, শাহরিয়ার কবির শোভন, মেহেদী হাসান ইমরান ও মো. সুলতানের নাম আছে।
১৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার সময় তোফাজ্জল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে ঘোরাফেরা করছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কিছু ছাত্র’ তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে যান। মোবাইল চুরির অভিযোগ করে তারা তাকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারেন।
তাকে হলের ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাওয়ান। পরে তাকে হলের দক্ষিণ ভবনের গেস্টরুমে নিয়ে জানলার সঙ্গে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে বেধরক মারধর করা হয়।
এর আগে তোফাজ্জল নিজের নাম জানিয়ে স্বজনদের ফোন নম্বর দেন। স্বজনরা জানান, তিনি মানসিক রোগী। তাকে যেন পেটানো না হয়। তবে স্বজনদের সেই বক্তব্য বিশ্বাস করেনি শিক্ষার্থীরা।
পিটুনিতে অচেতন হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় তুমুল সমালোচনা হলে পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাহবাগ থানায় মামলা করলে সেদিনই গ্রেপ্তার করা হয় ছয়জনকে।
এরা হলেন হলেন- ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও হল ছাত্রলীগের সাবেক (সদ্য পদত্যাগকারী) উপ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক জালাল মিয়া, হল ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক উপ-সম্পাদক আহসান উল্লাহ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আল হোসাইন সাজ্জাদ, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সুমন মিয়া, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মুত্তাকীন সাকিন শাহ, সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াজিবুল আলম।
তাদেরকে পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে বহিষ্কার এবং ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহ মো. মাসুমকে সরিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আর ঘটনার সঙ্গে জড়িত উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফিরোজ কবির এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আবদুস সামাদকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
গ্রেপ্তার ছয় শিক্ষার্থী পরে তফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।
আরও পড়ুন
তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা: ঢাবির ছয় ছাত্রের 'স্বীকারোক্তি'
বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কেমন 'নির্মমতা': শিউরে উঠছে মানুষ
'ও পাগল', ফোনে মামাত বোনের আকুতি শুনেও তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা
তোফাজ্জল হত্যা: ঢাবির ৮ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার, হল প্রাধ্যক্ষ বদল
ঢাবিতে পিটিয়ে হত্যা: 'কিছু ছাত্রকে' আসামি করার পর ছয়জনকে পুলিশে
ঢাবিতে পিটিয়ে হত্যা: ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল
তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা: ঢাবির ৮ ছাত্রের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তদন্ত