আটক শিক্ষার্থীরা হলেন জালাল আহমেদ, মোহাম্মদ সুমন, মোত্তাকিন সাকিন, আল হোসেন সাজ্জাদ, আহসান উল্লাহ ও ওয়াজিবুল আলম।
Published : 19 Sep 2024, 06:50 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হোসেন নামে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ যুবককে হত্যার ঘটনায় ‘অজ্ঞাত কিছু ছাত্রের’ বিরুদ্ধে মামলা করার পর ছয়জনকে পুলিশে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহবাগ থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ মামলাটি করেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, “জড়িতদের গ্রেপ্তারে কাজ চলছে।”
তোফাজ্জলকে মারধর করার অভিযোগে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জালাল আহমেদ, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের মোহাম্মদ সুমন, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মোত্তাকিন সাকিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আল হোসেন সাজ্জাদ, গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ এবং ওয়াজিবুল আলম নামে ছয় জনকে থানায় দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তাদেরকে হেফাজতে নেওয়ার বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার এসআই আল আমীন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ১৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার সময় একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কিছু ছাত্র’ তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে যান। মোবাইল চুরির অভিযোগ করে তারা তাকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারেন।
এ সময় পিটুনির শিকার যুবক নিজের নাম তোফাজ্জাল বলে জানান। তিনি মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাওয়ান। পরে তাকে হলের দক্ষিণ ভবনের গেস্টরুমে নিয়ে জানলার সঙ্গে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে বেধরক মারধর করলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন।
বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষককে জানানো হলে তাদের সহায়তায় অচেতন তোফাজ্জলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত পৌনে একটার সময় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠন
এই ঘটনার তদন্তে ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক আলমগীর কবীরকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে হল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার সকালে গঠন করা এই কমিটিকে সন্ধ্যার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন হলটির আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিউল আলম খান, অধ্যাপক শেখ জহির রায়হান, মো. মাহাবুব আলম, আছিব আহমেদ, সহকারী আবাসিক শিক্ষক এম এম তৌহিদল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর (বিজ্ঞান অনুষদ) কে এম নূর আলম সিদ্দিকী।
দুঃখ প্রকাশ
তোফাজ্জলকে হত্যার ঘটনাটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সংঘটিত অমানবিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুঃখিত ও মর্মাহত। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।”
প্রক্টরিয়াল টিম বিষয়টি অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কালবিলম্ব না করে ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জানিয়ে এতে আরও বলা হয়, “তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেছে “
এ বিষয়ে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বদ্ধপরিকর বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “ক্যাম্পাসের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। কেউ চুরি করতে আসলেও তাকে পিটিয়ে হত্যার অধিকার কারও নেই। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দায়ীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ঘটনাটি আমরা ন্যায্যতার সাথে সমাধান করার চেষ্টা করছি।”
কে এই তোফাজ্জল
ঢাকা মেডিকেল মর্গে তোফাজ্জলের মরদেহ শনাক্ত করেন বন্ধু বেলাল গাজী, জানান, তার বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলি ইউনিয়নে।
বেলাল বলেন, “বরিশাল বিএম কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞানে মাস্টার্স করলেও মানসিক সমস্যার কারণে তোফাজ্জল কোনো কাজকর্ম করছিল না।
“গত ৩-৪ বছর ধরে তার এই মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এরপর থেকে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ভবঘুরের মত বেড়াত সে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশেও থাকত অনেক সময়।”