সাতজনকে আটকের পাশাপাশি শতাধিক ককটেল, পাঁচ শতাধিক লাঠিসোঁটা, সাতটি দেশি-বিদেশি অস্ত্র, কয়েক বোতল পেট্রোল উদ্ধারের তথ্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন।
Published : 17 Jul 2024, 01:46 AM
রাজধানীর নয়াপল্টনে কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরণের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র ও ককটেল উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
মঙ্গলবার মাঝরাতের দিকে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে ডিবির এ অভিযানকালে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেন, বিএনপি কার্যালয় থেকে শতাধিক ককটেল, পাঁচ শতাধিক লাঠিসোঁটা, সাতটি দেশি-বিদেশি অস্ত্র, কয়েক বোতল পেট্রোল উদ্ধার করা হয়েছে।
সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী, পথচারীসহ ছয়জনের প্রাণ গেছে।
দেশের বিভন্ন স্থানে সংঘর্ষের পর মাঝরাতে বিএনপির অফিসে অভিযানে যান গোয়েন্দারা।
অভিযানের পর অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে বিএনপিসহ এর সহযোগী সংগঠনগুলোর উস্কানি রয়েছে। তারা মঙ্গলবার বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করেছে, বাসে আগুন দিয়েছে, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ককটেল, অস্ত্র ও লাঠিসোটাঁ উদ্ধার করেছেন।
হারুনের ভাষ্য, “কোটা আন্দোলনে কেউ অর্থ দিয়ে, কেউ পানি দিয়ে, কেউ লাঠি দিয়ে সহায়তা করছে। আমরা এদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করেছি। আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে স্বাধীনতা বিরোধী এই চক্র।”
‘সরকারের নোংরা নাটক’
মধ্যরাতে গোয়েন্দা পুলিশের এ অভিযানকে ‘সরকারের নোংরা নাটক’ হিসেবে অভিহিত করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার রাত ১টায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে জরুরি সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘এটা (পুলিশের অভিযান) সরকারের একটি নোংরা তামাশা, নোংরা নাটক। উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এক ধরনের বার্তা দেওয়া তারা যেন ভয় পেয়ে যায়।
‘‘কাপুরষের মত বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মধ্যরাতে অভিযান চালানো হল। তারা একাকী ঢুকে নাটক করেছে যে, বিএনপির কার্যালয়ের ভেতরে বিস্ফোরক আছে, লাঠিসোঁটা আছে ইত্যাদি।”
বিএনপিকে ‘নোংরাভাবে সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে চিহ্নিত করতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নাটকটি মঞ্চস্থ করা হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, “আমি একটা কথাই বলতে চাই, যখন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকল নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিল, সকল গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিল তখন কেন আপনারা এই কার্যালয়ে আসেননি। এই মধ্যরাতে কেন আসলেন? তার মানে শূন্য কার্যালয়ের ভেতরে যেকোনো ধরনের চক্রান্ত আঁটা যায়।”
অভিযানের আগে বিএনপি অফিসের আশপাশে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন কিংবা পুলিশের নিরাপত্তায় আশপাশের যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে করানো হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “অভিযান শুরুর আগে প্রথমে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ হল রাতে। আমরা তখন বেরিয়ে গেছি। তারপর কিছুক্ষণ পর গুলি হল। বিএনপির কার্যালয়ে তো কেউই নেই।
‘‘ আমি সেখান থেকে জানতে পেরেছি, আমাদের যেসব অফিসের পিয়নরা ভয়ে পালিয়ে গিয়ে আশেপাশে অবস্থান করেছেন তারা যতটুকু আমাকে জানিয়েছেন সেটা এটাই যে, তারা(আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) পূর্বের মতো একটা নাটক মঞ্চস্থ করার জন্যই বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে তারা হানা দিয়েছে, রেইড করেছে।”
আরও পড়ুন
আন্দোলনের মধ্যে নিহত: গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি বিএনপি-সমমনাদের
জনগণ তাদের অধিকার আদায় করে নেবে: ফখরুল
কোটা আন্দোলন: বুধবার গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল
কোটাবিরোধী আন্দোলন: দিনভর সংঘর্ষে নিহত ৬
ত্রিমুখী অবস্থানের মধ্যে ঢাবিতে কোটাবিরোধীদের কর্মসূচি স্থগিত