“সেরাটা দেওয়ার অঙ্গীকারে আমরা আজও অবিচল,” বলেন প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
Published : 20 Nov 2024, 03:36 AM
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের উন্মোচন হয়েছিল দেড় যুগ আগে; উদযাপনের সেই মাহেন্দ্রক্ষণে উচ্চারিত হল পুরনো সংকটের অভিঘাত পেরিয়ে ‘পুনর্গঠন, মেরামত আর নবায়নের’ মন্ত্র।
দেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ১৮ বছর পূর্তির আয়োজন পরিণত হল সমাজের নানা শ্রেণির প্রতিনিধিদের মিলনমেলায়।
মঙ্গলবার রাতে ঢাকার হোটেল র্যাডিসন ব্লু ওয়ার্টার গার্ডেনের গ্র্যান্ড বলরুমে ছিল এ আনন্দ আয়োজন; তাতে শামিল হয়েছিলেন বিভিন্ন অঙ্গনের বাঁকবদলের সাক্ষীরা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী তাদের শোনান ১৮ বছরের পথচলার অম্ল-মধুর গল্প।
‘সবার আগে সঠিক খবর’ দেওয়ার প্রত্যয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এগিয়ে চলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা কক্ষচ্যুত হইনি। ২০০৭-০৮ সালে প্রতিদিনই আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করে গেছি। কয়েক বছর আগেও আমাদের পাঠক সংখ্যা ছিল বাকি সব সংবাদমাধ্যমের মিলিত পাঠকসংখ্যার চেয়ে বেশি।
“এরপর আর্থিক সংকট আমাদের গতি কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে ঠিক, কিন্তু সেরাটা দেওয়ার অঙ্গীকারে আমরা আজও অবিচল। সময় এখন পুনর্গঠন, মেরামত আর নবায়নের।”
এ আয়োজনে সঙ্গী হয়েছেন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বিচারপতি, ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা, চিকিৎসক, কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী-সংগঠক, ক্রীড়া তারকা, কূটনীতিক, ব্যাংকার ও সরকারি কর্মকর্তারা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের উদযাপনে সঙ্গী হয়েছেন বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর হেলাল উদ্দিন, ফারজানা শারমিন পুতুল, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ।
এসেছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির একদল তরুণ তুর্কি। তাদের মধ্যে ছিলেন কেন্দ্রীয় সংগঠক আতাউল্লাহ, সাইফুল্লাহ হায়দার ও মনিরা শারমিন।
দেড় যুগ আগে দেশের প্রথম এই অনলাইন সংবাদপত্রের যাত্রা শুরুর সময়কে স্মরণ করে অনুষ্ঠানে জিএম কাদের বলেন, “বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের যাত্রা শুরুর সময় ভেবেছিলাম কী রকম হবে, চলবে কী চলবে না। এ ধরনের সংবাদমাধ্যম তো দেশে একটি নতুন মাধ্যম। কিন্তু শুরুর পর থেকে এটি খুব ভালোভাবে চলেছে এবং এখন পর্যন্ত ঠিক পথেই আছে।
“আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যম সাধারণত একটু চাপে থাকে, সেই জায়গা থেকে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিকভাবে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পেরেছে তাদের মধ্যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর একটি।”
অনুষ্ঠান শুরুর সময় ঘনিয়ে আসতে একে একে এসে হাজির হন অতিথিরা। তাদের আসন গ্রহণ এবং তাদের সঙ্গে প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর কুশল বিনিময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান শুরুর সময় হয়ে যায়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক মঞ্চে উঠে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তৃতা দেন। তার বক্তব্যের মধ্যে জুলাই-অগাস্টের গণ আন্দোলন এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ওপর দুটি ভিডিও দেখানো হয়।
বক্তৃতা শেষে প্রধান সম্পাদক অতিথিদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে আসেন ১৮ উদযাপনের কেক কাটতে।
কেক কাটার আগে বর্ষীয়ান সাংবাদিক শফিক রেহমান জুলাই-অগাস্ট অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে সবাইকে নিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
প্রবীণ এই সাংবাদিকের ভাষায়, সংবাদপত্রের জগতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম একটি ‘নতুন লাইন’ তৈরি করেছে।
কয়েকদিন আগে জীবনের ৯০ বছর উদযাপন করা এই সাংবাদিক একসময় বিবিসিতে কাজ করেছেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীও এক সময় লন্ডনে বিবিসিতে সাংবাদিকতা করেছেন।
সেই স্মৃতি স্মরণ করে শফিক রেহমান বলেন, “১৯৫৭ সাল থেকে আমি লন্ডনে বিবিসিতে পার্ট টাইম, ফুল টাইম নানাভাবে কাজ করেছি। তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে পেয়েছিলাম। একমাত্র ব্যক্তি তৌফিক, যে বিবিসির চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল। আমি খুব অবাক হয়েছি। সে বলেছিল, আমি দেশে ফিরে যাব। ফিরে স্বাধীন সাংবাদিকতা করব। তো, তার ভিশন ছিল। সে ভিশনারি।
“সংবাদপত্রের জগতে বিডিনিউজ একটা নতুন লাইন তৈরি করল। বিডিনিউজ প্রাপ্তবয়স্ক হল। সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি অভিনন্দন জানাই।”
কেক কাটার শুরুতে জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘লাল গোলাপ’ এর এই উপস্থাপক বলেন, “১৮ বছর হয়েছে বিডিনিউজের। ১৮ এবং ২৪ এটা মনে করিয়ে দেয় সম্প্রতি এতোগুলো ছাত্রজনতা নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে তাদের কথা। আমার জন্মদিনেও তাদের স্মরণ করছিলাম।
“মুক্তির মন্দির সোপানতলে… এই গানটার কথা আমার মনে পড়ছিল। এই গানের দুটি লাইন আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ‘যারা স্বর্গগত তারা এখনও জানে, স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি’। ‘তারা কী ফিরিবে আর?’ ২৪ এর আহত ও নিহতদের সব সময় মনে রাখা উচিত।”
বক্তৃতা ও কেক কাটার শেষে প্রধান সম্পাদক সবাইকে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান। এর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়; পুরো অনুষ্ঠানটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ১৮ বছর পূর্তির আয়োজনে সঙ্গী হয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী, দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান সাংবাদিক কামাল আহমেদ, বিএসএমএমইউর এমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, চক্ষু সার্জন ডা: নিয়াজ আবদুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল আলম, নিজেরা কবির সমন্বয়কারী খুশী কবির।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই, আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত মার্সেলো কার্লোস সেসা, আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আবদেল ওয়াহাব সাইদানী, অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার নার্ডিয়া সিম্পসন, ফিলিপিন্সের রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল অসান জুনিয়রসহ ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার ঊর্ধ্বতন কূটনীতিকসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও আয়োজনে যোগ দেন।
আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম রহমান, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মনজু, তথ্য সচিব মাহবুবা ফারজানা, আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক মাঈনুল আলম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া ও প্রবাসী সাংবাদিক সৈয়দ নাহাস পাশাও ছিলেন অনুষ্ঠানে।
এ আয়োজনে আলো ছড়ান উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, সহ-অধিনায়ক মারিয়া মান্দা, দুই ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীন ও নিলুফার ইয়াসমিন নীলা এবং ফরোয়ার্ড আইরিন।
এছাড়া জাতীয় পুরুষ দলের ডিফেন্ডার ও বর্তমান অধিনায়ক তপু বর্মন ও ফরোয়ার্ড শেখ মোরসালিন এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার ও মিডিয়া ম্যানেজার সাদমান সাকিবও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা রকিবুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের আয়োজনে যোগ দেন।
চিত্রনায়ক আলমগীর ও ইলিয়াস কাঞ্চন, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার, যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, সংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন, একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম, সংগীত শিল্পী সুজিত মুস্তাফা ও কনক চাঁপা, নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ এসেছিলেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে।
এসেছিলেন সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা, বিডার সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম, সাবেক সিএজি মুসলিম চৌধুরী, পিএসসির সদস্য নাজমুল আমিন মজুমদার, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাইনুল ইসলাম।
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ‘অনন্য ভূমিকা’ রেখে চলেছে বলে মন্তব্য করেন সংগীত শিল্পী রফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “বিডিনিউজের সংবাদের রিলায়েবিলিটি নিয়ে আমরা খুব কনফিডেন্ট থাকি। তথ্যটা সঠিক পাচ্ছেন পাঠক।“
আয়োজনে অংশ নেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন, সন্ত্রাসবিরোধী ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও নাগরিক আন্দোলনের নেতা রফিউর রাব্বি।
ফেরার তাড়া থাকায় সবার আগে এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে যান সংগীত শিল্পী মেহরীন মাহমুদ। বাজার কাটতির কথা না ভেবে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম হিসেবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম মানুষের আস্থা অর্জন করবে- এমন প্রত্যাশার কথা তিনি বলেন।
কর্মসংস্থান ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব এ এফ এম মতিউর রহমান, বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নবনির্বাচিত পরিচালক মিনহাজ মান্নান, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, আনোয়ার সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজম খান, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুন্সি শফিউল হক, এশিয়া হাউজ ও এশিয়া পাবলিশিং হাউজের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রদূত শাহেদ আক্তার, কর্মসংস্থান ব্যাংকের জিএম শফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে এসেছিলেন।
সাবেক সিএজি মুসলিম চৌধুরী বলেন, তিনি দেশের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘নিয়মিত পাঠক’।
“সমসাময়িক সংবাদের বিস্তারিত জানতে আমি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের উপর নির্ভরশীল। দেশের অনলাইন সংবাদ পোর্টাল জগতে বিডিনিউজ ট্রেন্ড সেটার। বিডিনিউজ প্লাটফর্ম আমাদের পরিচিত করিয়ে দিয়েছে অনলাইন সংবাদ জগতে।”
অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, অনলাইন সংবাদ প্রকাশে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর নতুন ধারা তৈরি করেছে। গত ১৮ বছর ধরে অনলাইন সাংবাদিকতায় নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জব্বার, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রকাশ বিশ্বাস, আইনজীবী মাহবুব শফিক এসেছিলেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ আয়োজনে।
অভিনেতা তারিক আনাম খান, আজিজুল হাকিম, মিশা সওদাগর, আহসান হাবিব নাসিম, বটতলা নাট্যগ্রুপের প্রধান আলী হায়দার সিদ্দিকী, নাট্যকার মাসুম রেজা, নাট্য গবেষক কামালউদ্দিন কবির, অভিনেতা রহমত আলী ও ওয়াহিদা মল্লিক জলি, চিত্রশিল্পী রশীদ আমিন, লেখক ও কবি ব্রাত্য রাইসুও ছিলেন।
যোগ দিয়েছেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু ও মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বন্ধু খেতাবে ভূষিত ব্রিটিশ নাগরিক জুলিয়ান ফ্রান্সিস, অবসরপ্রাপ্ত মেজর রুহুল আমিন ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর মাহমুদ আকবর, ক্রীড়াবিদ নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
সংবাদের যে কোনো ঘটনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ‘স্পষ্টভাবে’ প্রকাশ করছে বলে মন্তব্য করেন অধিকার ও উন্নয়ন কর্মী খুশী কবির।
তিনি বলেন, “সত্য প্রকাশ করছে, আরও করতে হবে। মানুষ কখনও সত্য কথা সঠিকভাবে বলে না। আমি জানি না, যারা থাকে ক্ষমতায় তারা শুনতে চায় কিনা নেগেটিভ কিছু, না শুনতে চাইলেও শুনতে হবে তাদের।”
‘নিজেরা করি’ এর সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, “বিডিনিউজে নতুনত্ব থাকে। সেই নতুনত্বই আমরা দেখতে চাই। অবসরে যখন খোঁজ নিতে যাই যে কী হচ্ছে না হচ্ছে, তখন বিডিনিউজে চলে আসা হয়।”
বাংলাদেশে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সারিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ‘এক নম্বরে’ রাখেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে অনলাইন গণমাধ্যম যে সংবাদের বিশ্বস্ত সূত্র হতে পারে, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তা করে দেখিয়েছে। প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পরেও অনলাইন গণমাধ্যমে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর এক নম্বর বলে আমি মনে করি। কারণ সবাই এটাকেই সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে।”
উদযাপন স্থল বলরুমের প্রবেশ পথেই ডিজিটাল স্ক্রিনে অডিও-ভিজ্যুয়াল আর বিলবোর্ডে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হার না মানা পথ-পরিক্রমার অংশবিশেষ তুলে ধরা হয়।
অডিও-ভিজ্যুয়ালে উঠে আসে বহু বাধার মুখেও বিগত দিনে পাঠক-দর্শকদের ভরসা জায়গা হয়ে ‘সবার আগে সঠিক সংবাদ’ দেওয়ার যাত্রা।
বিলবোর্ডের উপস্থাপনায় উঠে আসে ২০০৬ সালের ২৩ অক্টোবর ডিজিটাল মাধ্যমে প্রথম সংবাদ সেবা থেকে শুরু করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনেক প্রথমের জন্ম দেওয়ার সচিত্র ঘটনা বলি।
২০০৭ সালে মোবাইল ফোনে দেশের প্রথম অ্যালার্ট সার্ভিস থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রথম বাংলা ওয়্যাপ সাইট চালু, নাগরিক সাংবাদিকতার প্রথম বাংলাদেশি সাইট, শিশুদের জন্য প্রথম সাংবাদিকতার ওয়েবসাইট, বাংলায় খবরের প্রথম এসএমএস সার্ভিস রয়েছে এই তালিকায়।
তুলে ধরা হয় কেবল সংবাদ প্রকাশের কারণে কীভাবে বহু বার বহু অজুহাতে ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছিল; চেষ্টা করা হয়েছিল সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধের।
ডিজিটাল বিলবোর্ডের উপস্থাপনায় উঠে আসে ২০১৯ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বিনিয়োগের খবরের পর দুদকের মামলা আর নানা হয়রানির চিত্র।
ওই বিনিয়োগকে কেন্দ্র করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের যে অভিযোগ দুদক করেছে, সেটা যে ‘ভিত্তিহীন ও মিথ্যা’, সে কথা শুরু থেকেই বলে আসছিলেন প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী। দীর্ঘ পাঁচ বছর নানাভাবে হেনস্তার পর চলতি বছর সেই মামলা তুলে নেয় দুদক।
প্রধান সম্পাদকের কথায়
প্রভাবশালী মহলের অন্যায় রোষ আর মিথ্যা মামলার দুর্বিপাকের বছরগুলোতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কোন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে, তা ১৮ বছর উদযাপনের এ অনুষ্ঠানে সামনে আনেন প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
তিনি বলেন, “দুদক, বিচার বিভাগ, এমনকি গোয়েন্দা সংস্থা– সবগুলো প্রতিষ্ঠান অবৈধ পন্থায় ধনী হওয়া কিছু লোকের হাতে ব্যবহৃত হয়েছে; তাদের মধ্যে রাজনীতিবিদ যেমন আছেন, তেমনি আছেন ব্যবসায়ী। এই সবগুলো ক্ষেত্রে সংস্কার দরকার, এবং সেটা অতি জরুরি।”
তার ভাষায়, জবাবদিহিতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার স্বার্থেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা দরকার, আর নেতৃত্ব দিতে হবে দক্ষ ও পেশাদার ব্যক্তিদের হাতে।
যাদের ঘিরে আবর্তিত হয় সংবাদ, প্রতিষ্ঠবার্ষিকীর সুযোগে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে একসময় প্রায় নিয়মিতই বার্ষিক এ আয়োজনে মিলিত হত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। কিন্তু দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পর নানা ক্ষেত্রে বাঁক বদলের সাক্ষীদের আবার এক মঞ্চে আনতে কেন আট বছর অপেক্ষা করতে হল, সেই ব্যাখ্যা বক্তব্যের শুরুতেই দেন খালিদী।
তিনি বলেন, “গত কয়েক বছর যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা গেছি, তাকে আর যাই হোক, স্বাভাবিক বলা চলে না। চ্যালেঞ্জিং এই সময়ে বার্ষিক এ অনুষ্ঠানের মত আরো অনেক রেওয়াজই আমাদের ভুলে থাকতে হয়েছে। যে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে, মোটা দাগে তার খানিকটা কেউ কেউ জানেন। তবে পুরো গল্পটা কখনো বলা হয়নি। সত্যিকার অর্থে যা ঘটেছিল, তার আভাস আজ রাতে আমি আপনাদের দিতে চাই।”
প্রধান সম্পাদকের ভাষায়, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের গল্পটা কেবল প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে নতুন ধরনের এক সংবাদমাধ্যমের নতুন বিজনেস মডেলের পরীক্ষায় উৎরে যাওয়ার গল্প নয়; সর্বোচ্চ মানে পৌঁছানোর আকাঙ্ক্ষায় গভীর অভিনিবেশ, অবিচল সংকল্প আর নিরলস সাধনারও গল্প।
তিনি বলেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কখনো ভয় কিংবা অনুগ্রহের পথে পরিচালিত হয়নি; দায়বদ্ধ থেকেছে কেবল মানুষের প্রতি, পাঠকের প্রতি।
‘নির্লজ্জ!’
সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে সরকারের পুরনো ও ত্রুটিপূর্ণ নীতির কারণে জনগণের করের টাকার যে অপচয় হচ্ছে, সে বিষয়টিও আবার এ অনুষ্ঠানে বলেন প্রধান সম্পাদক খালিদী।
তিনি বলেন, “ফোলানো ফাঁপানো প্রচার সংখ্যা দেখিয়ে জনগণের করের টাকাগুলো নিয়মিত হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যমের ভেতরে থেকে আমরা যারা এসব মেনে নিচ্ছি, তারাও সেজন্য সমান দোষী।”
খালিদী বলেন, “মান্ধাতা আমলের গণমাধ্যম নীতিমালা ও সরকারি বিজ্ঞাপন বিতরণ নীতির কারণে আমাদের এখনও সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। অথচ সেখানে সুবিধা পাচ্ছে অসৎ প্রকাশকরা।”
চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন তালিকাভুক্ত দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ৫৮৪টি, যদিও এর বেশির ভাগের নাম পাঠক কখনো শোনেনি।
এসব সংবাদপত্র মিলিয়ে তাদের প্রচার সংখ্যার যে হিসাব ডিএফপিকে দেয়, তাতে বাংলাদেশে প্রতিদিন ১ কোটি ৮৫ লাখ কপির বেশি পত্রিকা ছাপা হয়, যা বাস্তব সংখ্যার চেয়ে বহুগুণ বেশি।
প্রধান সম্পাদক বলেন, “খবরের কাগজের প্রচার সংখ্যা নিয়ে সরকারি প্রতিবেদনগুলোর খবর যারা রাখেন, তারা জানেন যে ওই পরিসংখ্যান কতটা অবাস্তব। ওই সংখ্যাগুলোর ভিত্তিতেই সরকারি বিজ্ঞাপন বিতরণ এবং দর নির্ধারণ করা হয়। যুগ যুগ ধরে এমনটা চলছে। আর অনেক সংবাদপত্র মালিক নির্লজ্জের মত এই কায়দায় বিজ্ঞাপন নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এর শেষ হওয়া দরকার।”
গণমাধ্যম নিয়ে সরকারের আরো ভালো বোঝাপড়া এবং নীতি কাঠামো প্রয়োজন বলেও মনে করেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে টেলিভিশন লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে যোগ্যতার বদলে রাজনৈতিক বিবেচনায়। এটা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার এক জাজ্বল্যমান নমুনা।
“কেবল ক্ষমতাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্যেই নয়, বরং নেতৃত্বে যারা থাকেন, তাদের সামনে গঠনমূলক বিষয়গুলো তুলে ধরার জন্যও বস্তুনিষ্ঠ আর স্বাধীন গণমাধ্যম অপরিহার্য। তা না হলে ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্তগ্রহণ আর বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে ভুল ধারণা এড়ানোর উপায় কর্তৃপক্ষের থাকে না।”
তবে সমস্যা যে সংবাদমাধ্যমের ভেতরে ও বাইরে দুই জায়গাতেই রয়েছে, সে কথা বলতে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।
তিনি বলেন, “সংবাদমাধ্যমের আত্মমর্যাদার উন্নয়ন এবং সাংবাদিকতায় নৈতিকতার চর্চাকে উৎসাহিত করতে ২০১৮ সালে আমরা এডিটরস গিল্ড চালু করি। কিন্তু মুক্ত সংবাদমাধ্যমের নৈতিক বিকাশ যারা দেখতে চায় না, তাদের হস্তক্ষেপের কারণে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সেই প্রচেষ্টা বেশিদূর এগোয়নি।
“সভাপতি হিসেবে আমার দুই বছরের মেয়াদ হঠাৎ করেই যেভাবে মাঝপথে শেষ হয়ে গিয়েছিল, বলতে হয় সেটা ছিল একরকম ক্যু। তখনকার শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশে ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন প্রধান সেই নীল নকশা সাজান বলে অভিযোগ আছে। সংগঠনের সদস্য দুজন সম্পাদক এ গল্পের পেছনের গল্পটা আমাকে বলেছেন।”
এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর পুরনো মামলা নিয়ে এক যুগ আগে ছাপা হওয়া খবর তার জন্য সমস্যা তৈরি করছিল। সেসব প্রতিবেদন মুছে ফেলার জন্য বছর তিনেক আগে তিনি নানাভাবে চাপ দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু ওই অযৌক্তিক দাবিতে সাড়া না দেওয়ায় জেলায় জেলায় মানহানির মামলা শুরু হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ সম্পাদকদের বিরুদ্ধে, যদিও তার কোনোটি শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি।
এ ধরনের অন্যায্য চাপের বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদকীয় অবস্থান তুলে ধরে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “আমাদের নীতি স্পষ্ট: ‘রাইট টু বি ফরগটেন’ যখন বৈধ, ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্তও মুছে ফেলা উচিত নয়। সাংবাদিক হিসেবে, আমরাই ইতিহাসের প্রথম খসড়াটা লিখি। এবং আমাদের আর্কাইভ অবশ্যই অক্ষত রাখতে হবে।
“সংবাদ প্রতিবেদন মুছে ফেলার জন্য বিরাট চাপের মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। উকিল নোটিস দিয়ে হুমকি থেকে শুরু করে অসৎ প্রলোভন- সবই ছিল। সেজন্য চড়া মূল্য দিতে হয়েছে, তবু আমরা নত হইনি। কারণ আমরা সাংবাদিকতার সততায় বিশ্বাস করে গেছি।”
খালিদী বলেন, “প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা কক্ষচ্যুত হইনি। ২০০৭-০৮ সালে প্রতিদিনই আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করে গেছি। কয়েক বছর আগেও আমাদের পাঠক সংখ্যা ছিল বাকি সব সংবাদমাধ্যমের মিলিত পাঠকসংখ্যার চেয়ে বেশি। এরপর আর্থিক সংকট আমাদের গতি কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে ঠিক, কিন্তু সেরাটা দেওয়ার অঙ্গীকারে আমরা আজও অবিচল।”
দরকার শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, দক্ষ ও পেশাদার নেতৃত্ব: তৌফিক ইমরোজ খ
বিজ্ঞাপনে হরিলুট: 'যারা মেনে নিচ্ছে তারাও দোষী'
'অনলাইন গণমাধ্যমে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর এক নম্বর'
সংবাদপত্রে 'নতুন লাইন' তৈরি করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর: শফিক রেহমান
বিডিনিউজ ভবিষ্যতেও সাহস রাখবে: রামেন্দু মজুমদার