“ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হয়েছে যে এটা নির্বাচন কমিশনে থাকবে।”
Published : 19 Mar 2025, 07:22 PM
তথ্য যাচাইয়ের জন্য কক্সবাজারের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ডেটাবেজ নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআর।
বুধবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান ইসির এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর।
ইউএনএইচসিআর-এর জেনিভা ও কক্সবাজারের প্রতিনিধি এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে এনআইডি উইংয়ের ডিজি বলেন, “রোহিঙ্গাদের যে ডেটা ইউএনএইচসিআর-এর কাছে আছে, আমরা ওই ডেটা পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করছে। আজকে জানতে পারলাম, ২০১৮ সাল থেকে এ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”
তথ্য পাওয়ার বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক হয়েছে জানিয়ে হুমায়ুন কবীর বলেন, “এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের ডেটা আমাদের সাথে শেয়ার করতে সম্মত হয়েছে। এ ডেটা কীভাবে ব্যবহার করতে পারি, আর উনারা কীভাবে দিতে পারে- এ বিষয় নিয়ে আজ একেবারে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।”
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্টের পর রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে স্রোতের মত ঢুকতে শুরু করে রোহিঙ্গারা।
কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। যেখানে আগে থেকেই ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ।
শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে তাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করা হয়, ২০১৮ সালেই ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নিবন্ধনের আওতায় আসে।
ডেটা ইসিতে থাকবে
এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক বলেন, ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার এ ডেটা নির্বাচন কমিশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নাকি অন্য কোথাও থাকবে, তা নিয়ে সরকারের একটি সিদ্ধান্তের বিষয় ছিল।
“ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হয়েছে, এটা নির্বাচন কমিশনে থাকবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মত হয়েছে যে এটা ইসিতে থাকতে পারে। সব কিছু মিলিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এটা ইলেকশন কমিশনেই থাকবে।”
তবে এ ডেটাবেজ কোথায়, কীভাবে, কখন ব্যাবহার করতে হবে, সেসব নিয়ে আরো অনেকবার বসতে হবে বলে জানান তিনি।
তিন পক্ষের কারিগরি টিম
এনআইডি ডিজি বলেন, “ইউএনএইচসিআর পরামর্শ অনুযায়ী আজ তিন পক্ষ (ইসি, পররাষ্ট্র, ইউএনএইচসিআর) মিলে একটা টেকনিক্যাল টিম করা হয়েছে। এনআইডি উইং এর সিস্টেম ম্যানেজার মোহম্মদ আশরাফ হোসেন এ টিমের সমন্বয় করবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একজন সহকারী সচিব এবং ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি থাকবে সেই টিমে।”
আগামী সপ্তাহে এ কারিগরি টিম বৈঠক করবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এরপর একটা টাইম পাব। যখন থেকে এই ডেটা পাব, তখন আমাদের কাজে ব্যবহার করতে পারব। আমাদের আর্জেন্সিটা তাদের বলেছি।”
আঙুলের ছাপে যাচাইয়ে সুবিধা
বর্তমানে ইসিতে ১২ কোটি ৩৭ লাখের বেশি ভোটারের তথ্য রয়েছে জাতীয় তথ্যভাণ্ডারে। হালনাগাদ কাজও চলমান; যাতে অর্ধকোটি নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের এনআইডি ও পাসপোর্ট পেতে রোহিঙ্গাদের মরিয়া চেষ্টার মধ্যে দ্রুত ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা ডেটাবেজ পেতে চায় ইসি।
এনআইডি মহাপরিচালক বলেন, “নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। ভোটার রেজিস্ট্রেশনের কাজ চলছে। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে, তারা এনআইডি ও পাসপোর্ট পাওয়ার চেষ্টা করছে। যত দ্রুত এই ডেটা পাব তত সুবিধা হবে।”
তিনি বলেন, “ডেটা পেলে ইসির সুবিধা বহুমাত্রিক। রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে আর এত কষ্ট করতে হবে না।
“কেননা, আমরা ওই ডেটা পাব, হাতের আঙ্গুলের ছাপ দিলেই জেনে যাব ম্যাচ করছে কি করছে না। ম্যাচিং হলেই বুঝে যাব এটা রোহিঙ্গা। ম্যাচ না করলে সহজেই বুঝতে পারা যাবে এ ভোটার রোহিঙ্গা না।”
হুমায়ুন কবীর বলেন, “এটা প্রথমে ইসিরই কাজে লাগবে। এটা আমাদের খুবই উপকার হবে। তাদের সঙ্গে বৈঠকে পাসপোর্টের বিষয়টাও আলোচনা এসেছে।”
মহাপরিচালক বলেন, “পাসপোর্ট আমাদের এনআইডি ডেটা ইউজ করে। যদি এনআইডিকে আমরা ক্লিন করতে পারি, এবং রোহিঙ্গা নেই এটা যদি নিশ্চিত করতে পারি, এটা উনাদের জন্য (পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ) কনফর্টেবল হবে। এটাই আজকের আলোচনা।”
পুরনো খবর
১০ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধিত
রোহিঙ্গা ডেটাবেইজে মেলানোর পরই এনআইডি: ডিজি
রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে 'ডেটাবেজ' হচ্ছে
প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান: গুতেরেস
রোহিঙ্গা: এবার হুঁশিয়ার ইসির কড়া হুঁশিয়ারি
জুনে স্থানীয় সরকার সম্ভব নয়, টার্গেট ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন