বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়াকে ‘ধর্ষণ ও হত্যার’ অভিযোগে করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা পেছালো।
Published : 02 Nov 2021, 02:57 PM
মঙ্গলবার নির্ধারিত দিনে প্রতিবেদন জমা না দিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন আরও সময় চান।
তার আবেদনে সাড়া দিয়ে ঢাকার মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২১ নভেম্বর দিন রেখেছেন বলে গুলশান থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (নারী-শিশু) সাইফুর রহমান জানান।
মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ মামলায় আনভীর ও তার পরিবারের সদস্যদের অব্যাহতি দিয়ে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া ৬ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে ‘হত্যা ও ধর্ষণের’ মামলা করেন।
ওই দিন ঢাকার ৮ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মাফরুজা পারভীন বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
বসুন্ধরার এমডি আনভীরের পাশাপাশি তার বাবা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, মা আফরোজা সোবহান, আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা এবং শারমিন, সাইফা রহমান মিম, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা এবং ইব্রাহিম আহমেদ রিপনকে এ মামলায় আসামি করা হয়।
মামলার আরজিতে বলা হয়, সায়েম সোবহান আনভীর ২০১৯ সালের জুন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মুনিয়াকে কলেজ হোস্টেল থেকে ভাড়া করা বাসায় নিয়ে আসে; সেখানে ৭-৮ মাস ধরে রেখে তাকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি জেনে আনভীরের বাবা-মা পিয়াসার মাধ্যমে মুনিয়াকে তাদের বাসায় ডেকে এনে ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। তা নাহলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
পরে আনভীর বিয়ের আশ্বাস দিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাকে কুমিল্লায় বোনের বাসায় পাঠিয়ে দেন। মুনিয়ার সঙ্গে আনভীর ফোনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে বিয়ের আশ্বাস দিতেন। ১ মার্চ আবার বিয়ের প্রলোভন দিয়ে মুনিয়াকে কুমিল্লা থেকে গুলশানে ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন আনভীর।
“বাসায় একা রেখে তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে। এতে মুনিয়া ২-৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে মুনিয়া আনভীরকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এতে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও বিরোধ সৃষ্টি হয়।”
তখন ‘পারিবারিক সুনাম, সুখ্যাতি রক্ষায়’ মুনিয়াকে ‘দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত হয় অপর আসামিরা। এক পর্যায়ে আনভীর মুনিয়াকে হত্যার হুমকি দিয়ে কুমিল্লায় চলে যেতে বলেন।
“তখন মুনিয়া লাইভে এসে সবকিছু ফাঁস করে দেবে বলে আনভীরকে জানায়। তখন আনভীর মুনিয়াকে বলেন, ‘এত সময় তুই পাবি না। আমি তোকে দেখে নেব’।”
আসামিদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মুনিয়া ঢাকা ছেড়ে যশোর পালিয়ে যেতে চায়। এ জন্য তিনি ২৬ এপ্রিল সকালে দুই দফা বাড়িওয়ালা ও তার স্ত্রীর কাছে গাড়ি ব্যবস্থা করে দিতে বলেন।
“তারা গাড়ি না দিয়ে উল্টো বিষয়টি অপর আসামিদের কাছে ফাঁস করে দেয়। তখনই সকল আসামি পরস্পর যোগসাজশে মুনিয়াকে বাসায় আটকে রেখে হত্যার ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করে এবং ‘কিলিং মিশন দিয়ে মুনিয়াকে ধর্ষণোত্তর হত্যা’ করে তাদের উদ্দেশ্যে হাসিল করে।”
গত ২৬ এপ্রিল রাতে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ২১ বছর বয়সী মোশারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
সেই রাতেই আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন নুসরাত জাহান তানিয়া।
সেখানে বলা হয়, ‘বিয়ের প্রলোভন’ দেখিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মুনিয়ার সঙ্গে। ওই বাসায় তার যাতায়াত ছিল। কিন্তু বিয়ে না করে তিনি উল্টো ‘হুমকি’ দিয়েছিলেন মুনিয়াকে।
সেই অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কখনো কথা বলেননি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি। মুনিয়ার মৃত্যুর সঙ্গে তার কোনো ‘সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে গত ১৯ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।
পুলিশের ওই প্রতিবেদনে অনাস্থা (নারাজি) জানিয়ে মুনিয়ার বোন, মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া অন্য কেনো সংস্থার মাধ্যমে মামলাটি তদন্তের আবেদন করেছিলেন। তা খারিজ করে ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী গত ১৮ অগাস্ট চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে সায়েম সোবহান আনভীরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।
পুরনো খবর