শারুনের বিরুদ্ধে হত্যামামলার আবেদন নিয়ে আদালতে মুনিয়ার ভাই

কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়াকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে থানায় মামলা করেছিলেন তার বোন; আর এখন তার ভাই হত্যা মামলার অভিযোগ নিয়ে গেলেন আদালতে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2021, 12:19 PM
Updated : 2 May 2021, 02:18 PM

আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া আসামি করেছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে।

অন্যদিকে মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান সবুজ হত্যামামলায় আসামি করেছেন হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর ছেলে চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনকে (শারুন চৌধুরী)।

মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের পাঁচ দিন পর রোববার আশিকুর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হত্যা মামলার আবেদন নিয়ে যান।

মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভুঁইয়া আবেদনটি নিলেও মুনিয়ার বোনের করা আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলার তদন্ত চলায় আপাতত এটির কার্যকারিতা স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন।

আদালতের পেশকার মাসুদ পারভেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে গুলশান থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। এ মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ৩০২ ধারার হত্যা মামলার আবেদনটি স্থগিত থাকবে।”

শারুন চৌধুরী

হত্যামামলার আবেদনে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাতে শারুন কীভাবে জড়িত ছিল, তার বিবরণ জানা যায়নি।  

এবিষয়ে আশিকুরের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার আইনজীবী সালাউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালালেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলার প্রতিক্রিয়ায় শারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বসুন্ধরা গ্রুপ ইস্যুটাকে ভিন্ন খাতে নিতে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি এই ঘটনায় সম্পৃক্ত নই। আইন এবং বিচারের প্রতি আমার শতভাগ আস্থা আছে।”

“আমি দেড় মাস ধরে চট্টগ্রামে আছি, আমি কীভাবে এই ঘটনায় জড়িত,” বলেন তিনি।

কুমিল্লার বাসিন্দা ঢাকার এক কলেজের ছাত্রী মুনিয়াকে গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

তার বোন তানিয়া কুমিল্লা থেকে এসে সেদিনই আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে গুলশান থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় তিনি অভিযোগ করেছিলেন, বসুন্ধরা এমডি আনভীর ‘বিয়ের প্রলোভন’ দেখিয়ে মুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। তাকে ওই বাসায় রেখেছিলেন। কিন্তু বিয়ে না করে তিনি উল্টো ‘হুমকি’ দেওয়ায় মুনিয়া আত্মহত্যা করেন।

এই ঘটনা নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে মুনিয়া-আনভীরের একটি ফোনালাপ সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি মুনিয়া-শারুনের হোয়াটসঅ্যাপে কথিত কথোপকথনের একটি স্ক্রিনশটও আসে।

তখন শারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেছিলেন, তার সাবেক স্ত্রী সাইফা রহমান মিমের সঙ্গে আনভীরের ‘সম্পর্ক’ গড়ে ওঠার খবর জানাতে মুনিয়া গত বছর তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তবে তিনি তখন বলেছিলেন, সাবেক স্ত্রীর বিষয়ে তার কিছু করার নেই।

মুনিয়ার সঙ্গে সেই কথোপকথন মেসেঞ্জারে হয়েছিল জানিয়ে শারুন দাবি করেন, হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনের যে স্ক্রিনশট এখন ছড়িয়েছে, তা ভুয়া।

এদিকে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ মামলা করলেও মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত এর আগে বলেছিলেন, এটা আত্মহত্যা, নাকি হত্যা,  তা তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।

মামলা তুলে নিয়ে মীমাংসা করতে আসামি আনভীরের পক্ষে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন নুসরাত। এই অভিযোগ করে শনিবার কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি।

মামলার তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ পুলিশ বলছে, তারা মুনিয়ার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন।