মুনিয়ার মৃত্যু: চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেবেন বোন

কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পুলিশ আদালতে দাখিল করেছে, তাতে নারাজি (প্রতিবেদনের ওপর অনাস্থা) দেবেন মুনিয়ার বোন মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2021, 09:37 AM
Updated : 1 August 2021, 09:37 AM

তার অন্যতম আইনজীবী ব্যরিস্টার এম সরোয়ার হোসেন শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ কথা জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, তানিয়া গত ২৯ জুলাই মামলার ধার্য তারিখেই নারাজি আবেদন জমা দিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু লকডাউনে আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তা জমা নেওয়া হয়নি।

সরোয়ার হোসেন বলেন, নিয়মিত আদালত খুললে তখনই বাদীর নারাজি আবেদন আবার দাখিল করা হবে। পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতার শুনানিও তখন হবে।

আলোচিত এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গত ১৯ জুলাই আদালতে  ‘ফাইনাল রিপোর্ট’ দাখিল করেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সে সময় বলেছিলেন, “মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”

সায়েম সোবহান আনভীর

গত ১৯ এপ্রিল রাতে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ২১ বছর বয়সী মোশারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

সেই রাতেই আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান তানিয়া।

সেখানে বলা হয়, ‘বিয়ের প্রলোভন’ দেখিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মুনিয়ার সঙ্গে। ওই বাসায় তার যাতায়াত ছিল। কিন্তু বিয়ে না করে তিনি উল্টো ‘হুমকি’ দিয়েছিলেন মুনিয়াকে।

অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কখনো কথা বলেননি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি। এপ্রিলের শেষ দিকে তার আগাম জামিনের জন্য হাই কোর্টে একটি আবেদন করা হলেও মহামারীর মধ্যে লকডাউনে সে আবেদনের শুনানি তখন আর হয়নি।

ওই প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করে বাদীর আইনজীবী বলেন, “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের শুধুমাত্র ৯(১) ধারার ধর্ষণ নয়, ধর্ষণের ফলে উদ্ভূত বিষয় ৯(২) ধারায় সঙ্গে আসবে। আসবে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারাও। ধর্ষণজনিত কারণে আত্মহত্যা এখানে আসে।”

ঢাকার গুলশানের এই ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়।

মুনিয়া ঢাকার মিরপুর ক্যান্টনম্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি কুমিল্লার মনোহরপুরে; পরিবার সেখানেই থাকেন। মৃত্যুর মাস দুয়েক আগে এক লাখ টাকায় ভাড়া নেওয়া ওই ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন তিনি।

মুনিয়ার মৃতদেহ উদ্ধারের পর সেখান থেকে তার মোবাইলসহ বিভিন্ন ধরনের আলামত উদ্ধার করে পুলিশ, যার মধ্যে ছয়টি ডায়েরি ছিল। সিসিটিভির ভিডিও পরীক্ষা করে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের ‘প্রমাণ পাওয়ার’ কথাও সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল।

আইনজীবী সরোয়ার হোসেন বলেন, “তদন্ত কতৃপর্ক্ষ সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে তার বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি। অটোপসি রিপোর্ট দেখেননি অথবা গুরুত্ব দেননি। তদন্তে কী পাওয়া গেল তা নিয়ে বাদীর সঙ্গে আলাপ আলোচনাও করেননি।

“আমরা ২৯ জুলাই দুটো আবেদন নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আদালত সেগুলো গ্রহণ না করে আমাদের ফিরিয়ে দিয়ে বলেছে, আদালত খুললে তা নেওয়া হবে।”

পুরনো খবর