“বাংলাদেশের পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা ভারতের উচিত হবে না; দুই দেশ একে অপরের সঙ্গে থাকলে উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক কাজ করা সম্ভব হবে,” বলেন তিনি।
Published : 15 Nov 2024, 12:33 AM
জুলাই-অগাস্টের গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগের চালানো ‘হত্যাকাণ্ডকে’ ভারত কীভাবে দেখছে, সে বিষয়টি তারা এখনও স্পষ্ট করেনি বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
উল্টো ‘হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের’ ভারত আশ্রয় দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, “অনেক দেশ বলেছে, তারা (বাংলাদেশের) মানুষের পাশে আছে, কিন্তু ভারত এ বিষয়ে চুপ রয়েছে। আওয়ামী লীগ জুলাই-আগস্টে যে গণহত্যা করেছে, সেটাকে ভারত কীভাবে দেখছে? এখন পর্যন্ত ভারত তার অবস্থান স্পষ্ট করেনি।
“যাদের আমরা হারিয়েছি, তাদের প্রতি ভারত যদি সমবেদনা দেখায়, তাহলে মানুষ ভারতের প্রশংসা করবে। আমরা চাই, ভারত আমাদের সহযোগিতা করবে, যাতে এখানে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার আইন অনুযায়ী চলে।”
বিবিসি হিন্দিকে দেওয়ার সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের গণআন্দোলনে হত্যাকাণ্ড ও সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক থেকে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে জায়গা পাওয়া তরুণ এ উপদেষ্টা। বৃহস্পতিবার ওই সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়।
গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন পরে তুমুল গণআন্দোলনে রূপ নিলে ৫ অগাস্ট পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, তখনকার সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তিনি ভারতেই অবস্থায় করছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের চেষ্টায় ‘গণহত্যার’ দুই অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গত ১৭ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আদালতের বেঁধে দেওয়া এক মাস সময়ের মধ্যে তাকে ভারত থেকে দেশে ফেরানোর সব চেষ্টা করা হবে পরোয়ানা জারির পর বলেছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
এরপর গত ১২ নভেম্বর শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে গণহত্যার অভিযোগ ওঠা শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের জন্য ভারতের সহযোগিতা কামনা করেন উপদেষ্টা নাহিদ।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ধারাবাহিক বিক্ষোভও করেন। মণ্ডপে হামলার ঘটনা নিয়ে নিন্দা জানায় ভারত। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সেসব প্রশ্নেও কথা বলেন নাহিদ।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভারতের আহ্বান জানানো নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আমাদের নাগরিক। তাদের সুরক্ষা আমাদের দায়িত্ব। এ জন্যে ভারতের কিছু বলার দরকার নেই। যে ইস্যু নিয়ে ভারতের বলার দরকার, তা হল এখানে জুলাই-অগাস্ট মাসে গণহত্যার ইস্যু। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায়ে ভারতের কী সহযোগিতা করতে পারে, সে বিষয়ে কথা হওয়া দরকার।
“আমি এটা বলতে চাইব যে, ভারতের মিডিয়া আমাদের সরকার নিয়ে মিথ্যা খবর পরিবেশন করছে। ভারতের এ বিষয়টি দেখা দরকার। অবাধ তথ্য প্রবাহ ও সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হোক তা আমরা চাই।”
সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, “আমরা এসব বিষয়ে সজাগ রয়েছি। এখানে যেসব ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়েও আমরা অবগত রয়েছি। কিন্তু এটা বোঝা উচিত, আমাদের সরকার যদি যথাসময়ে ব্যবস্থা না নিত, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আমরা পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী নিয়োজিত রেখেছি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসব পালন করেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করেছি। তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছে।”
বাংলাদেশে আর কোনো সরকার ‘সংখ্যালঘুদের সঙ্গে এতটা সম্পৃক্ত হয়ে’ কাজ করেনি দাবি করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “যেটা আমরা গত তিন মাসে করে দেখিয়েছি। আগের সরকার কেবল রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছে। এ নিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আস্থায় ঘাটতি ছিল। আমাদের সেটা ঠিক করতে হবে। আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এর মধ্যে কিছু পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে আমাদের সময় লাগবে।”
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ কখনও উগ্রবাদী ও কট্টরপন্থি সংগঠনকে সমর্থন করে না। তারা একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে চায়। আপনি যেটা বলছেন, আওয়ামী লীগের মিথ্যা বয়ান। তারা বলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে এখানে কট্টরপন্থিদের উত্থান হবে। এটা বলেই তারা এত বছর রাজনীতি করেছে। এ ন্যারেটিভকে ভারতও সমর্থন করে।
“প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে থাকুক বা না থাকুক, এতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে কেন প্রভাব পড়বে? এর কারণ হচ্ছে, ভারত তাদের সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে নয়, বরং শুধু আওয়ামী লীগের সঙ্গে তৈরি করেছে। যদি সম্পর্ক জনগণের সঙ্গে হত, তাহলে এ প্রশ্নই উঠত না।”
প্রতিবেশী ভারতের ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে নাহিদ বলেন, “আমরা এভাবে দেখি, যেমন ভারতে বিজেপি কিংবা কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে কিনা, তাতে সম্পর্কের তারতম্যে হওয়ার সুযোগ নেই। তেমনি এখানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে কি নেই, তাতে কিছু যায় আসে না। অর্থাৎ যে কোনো সময় ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তন হবে না।”
বাংলাদেশের পরিস্থিতি ‘আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা’ ভারতের উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেন নাহিদ।
“দুই দেশ যখন একে অপরের সঙ্গে থাকবে, তখন সাফল্যের সঙ্গে দুই দেশের জন্য মঙ্গলজনক কাজ করা সম্ভব হবে। আমরা কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করিনি, কোনো প্রকল্পও বন্ধ করিনি। সব আগের মতেই চলছে,” বলেন তিনি।
সরকার পতনের পর ভারতের সঙ্গে প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করার কারণ জানতে চেয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, “আমরা কিছু প্রকল্পের পর্যালোচনা করছি। তবে শুধু ভারতের সঙ্গের প্রকল্পগুলো নয়, সব প্রকল্পেরই পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আমরা এটা দেখতে চাচ্ছি এ প্রকল্পগুলোতে কোথাও দুর্নীতি বা দেশের স্বার্থ নষ্ট হয়েছে কি না।”
পুরনো খবর-
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
শেখ হাসিনাকে ১ মাসের মধ্যে ফেরাতে ব্যবস্থা নেব: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
রেড নোটিস জারি করতে আইজিপিকে প্রধান কৌঁসুলির চিঠি
ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুরা ক্ষতিপূরণ পাবেন: নাহিদ ইসলাম
মণ্ডপে হামলা ও মুকুট চুরিকে 'কঠোরভাবে নিন্দার যোগ্য' বলল ভারত
বাংলাদেশে 'সংখ্যালঘু নির্যাতন' আমি থাকলে ঘটত না: ট্রাম্প