মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন পায়নি ইউনেস্কো।
Published : 18 Apr 2025, 12:10 AM
বর্ষবরণের 'মঙ্গল শোভাযাত্রা'র নাম পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই জানা গেল, এ শোভাযাত্রার জন্য ইউনেস্কোর স্বীকৃতি ধরে রাখতে হলে নতুন করে আবেদন ও অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
ইউনেস্কোর বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়েছে, অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের 'জীবন্ত প্রকৃতি এবং গতিশীলতাকে' বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের (নাম) পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রক্রিয়া রাখা হয়েছে।
বিবিসি বাংলার প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো বলেছে, এর জন্য 'ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ কমিটি' বা অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন হবে। ওই কমিটি ২৪টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত।
এখনো পর্যন্ত এর (মঙ্গল শোভাযাত্রা) নাম পরিবর্তনের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হয়নি বলেও বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে ইউনেস্কো।
গত ১১ এপ্রিল বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম আয়োজন 'মঙ্গল শোভাযাত্রা'র নাম পাল্টে 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা' করার সিদ্ধান্ত জানায় শোভাযাত্রার আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নাম পরিবর্তনের বিষয়টি ইউনেস্কোকে জানানো হয়েছিল কিনা–এই প্রশ্নে চারুকলার ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, "ইউনেস্কোর স্বীকৃতির ব্যাপারটি তো সরকারের দিক থেকে দেখা হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ব্যাপারটি ইউনেস্কোকে জানিয়েছিল কিনা, তা আমার জানা নেই।"
নাম পরিবর্তনের কারণে ইউনেস্কো স্বীকৃতি ধরে রাখতে যে নতুন করে আবেদন ও অনুমোদনের প্রয়োজন হবে, সে বিষয়টি চারুকলার ডিনের নজরে আনলে তিনি বলেন, “শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তো একটা কেন্দ্রীয় কমিটি করা হয়। সেই কমিটি থেকে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন ব্যাপারটি নিয়ে কমিটির সঙ্গে আলাপ করে আমাদের পরবর্তী করণীয় বিষয়ে চিন্তা করব। যদি ইউনেস্কোর কাছে আবার আবেদন করা লাগে, তা করা হবে কিনা তা কমিটির সঙ্গে আলাপ করে জানাব।"
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিভাগের তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারা কেউই বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে তারা বলেছেন, মন্ত্রণলয় থেকে 'মঙ্গল শোভাযাত্রা'র নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে ইউনেস্কোকে অবহিত করা হয়েছে বলে তাদের জানা নেই। এ বিষয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তারা।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।
সংস্কৃতি সচিব মফিদুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে ফোন কেটে দেন।
২০১৬ সালে 'মঙ্গল শোভাযাত্রা অন পহেলা বৈশাখ' শিরোনামে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত হয়েছিল 'মঙ্গল শোভাযাত্রা'।
এবার 'আনন্দ শোভাযাত্রা' নামে আয়োজনটি হলেও ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে এখনো 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নামেই আয়োজনটির ব্যাপারে বলা রয়েছে।
১৯৮৯ সালে যাত্রা শুরুর সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের আয়োজনটির নাম ছিল 'আনন্দ শোভাযাত্রা'।
পরে এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে পরিচিত হয়। ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পর মঙ্গল শোভাযাত্রা নতুন মাত্রা পায়।
তবে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটি নিয়ে প্রতিবছরই ইসলামপন্থি বিভিন্ন দল আপত্তি জানিয়ে আসছিল। এবারও একাধিক ইসলামপন্থি দল 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নামের বিরোধিতা করে। কেউ কেউ মনে করেন, তাদের বিরোধিতার কারণেই এবার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
তবে তা অস্বীকার করেছেন চারুকলার ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম। গত ১১ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাইরের কোনো চাপে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, “নাম পরিবর্তন নয়, বরং 'পুনরুদ্ধার' বলা যেতে পারে। আমরা পুরনো নামে ফিরে গেলাম।”
এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল- 'নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান'। পহেলা বৈশাখ সকাল ৯টায় 'আনন্দ শোভাযাত্রা' অংশ নেয় দেশের ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর লোকজন। এছাড়া ব্যান্ডশিল্পীরাও অংশ নেন শোভাযাত্রায়।