আদিবাসীর পরিবর্তে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শব্দের ব্যবহারকে ‘অবমাননাকর’ (কম্প্রোমাইজিং) বলছেন ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেছেন, “আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন আদিবাসীদের পরিচয় দিতে একটি কম্প্রোমাইজিং শব্দ ব্যবহার করেন, সেটি হল ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’।”
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসকে সামনে রেখে রোববার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ডেইলি স্টার ভবনে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাসের প্রতিষ্ঠাতা মেনন বলেন, স্বাধীনতার এতবছর পর সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে আদিবাসী পরিচয়টি বদলে ফেলাটা দুঃখজনক।
“আদিবাসী শব্দটি নিয়ে অতীতে কোনো বিতর্ক ছিল বলে আমার জানা নেই। ১৯৯৪ সালে যখন আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস অনুষ্ঠিত হল, তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি প্রধানমন্ত্রীর বাণীতে স্পষ্ট করেই আদিবাসী শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন।
“সেসময় বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। তিনিও তার বাণীতে আদিবাসী শব্দটিই ব্যবহার করেছিলেন। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতিহারেও আদিবাসী শব্দটি উল্লেখ ছিল। হঠাৎ করেই ২০১১ সালের পর থেকে আদিবাসী শব্দটির ব্যবহার সরকারের নেতৃস্থানীয়দের পক্ষ থেকে বন্ধ করা শুরু হল।”
এবারের আদিবাসী দিবস চ্যালেঞ্জের মুখে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যদিও চ্যালেঞ্জটা নতুন নয়। আমাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে বলা হয়েছে, আদিবাসী দিবসে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করা উচিত হবে না।
“কী বলতে হবে, সেটা আমি ঠিক করব। আদিবাসী বলায় সাংবিধানিভাবেও কোনো বাধা আছে বলে আমি মনে করি না।”
ন্যাশনাল কোয়ালিশন ফর ইন্ডিজেনাস পিপল (এনসিআইপি), বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এবং গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভ (আরডিসি) যৌথভাবে এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।
এনসিআইপির মহাসচিব সংসদ সদস্য ফজলুল হক বলেন, “সরকারের তরফ থেকে অনেক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমই পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আরও একটু সক্রিয় হওয়া উচিত। আদিবাসী বিষয়ক কর্মপরিকল্পনাগুলো নিয়ে আলোচনা করা উচিত।
“আগের দুই দফায় ককাসকে অনেক সক্রিয় বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু এই টার্মে তাদের তেমন একটা কার্যক্রম আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আদিবাসীদের নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তাহলে তাদের নিয়ে কাজের ক্ষেত্রগুলো সকলের কাছে পরিষ্কার হবে।”
এনসিআইপির আরেক মহাসচিব সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, “সংবিধানের সংশোধনীতেই যেহেতু আদিবাসী শব্দটিকে বাদ দেওয়া হয়েছে, সেহেতু এই সংশোধনীর সুযোগ নিয়েই বিভিন্ন সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি হচ্ছে।
“তবে যারা প্রজ্ঞাপন জারি করছেন, তাদের স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে দেওয়া উচিত আদিবাসী শব্দটি কিভাবে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হয়?”
পীর ফজলুর বলেন, “বাংলাদেশ অনেকাংশেই এগিয়েছে। কিন্তু আদিবাসীরা সেই অর্থে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। তারা পিছিয়েই আছে। দেশ এগিয়ে গেলে সবাইকে নিয়েই এগিয়ে যাওয়া উচিত।”
সরকারের উন্নয়মূলক কর্মকাণ্ডে আদিবাসীদের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা উচিত বলে মত দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ও এনসিআইপির মহাসচিব মেসবাহ কামাল, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের পরিচালক আন্না মিনজ, এমএলই ফোরামের সমন্বয়ক তপন কুমার দাস।