‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারে ’বিধিনিষেধ’ বাতিলের দাবি

আন্তর্জাতিক ‘আদিবাসী’ দিবস উপলক্ষে টেলিভিশন অনুষ্ঠানে গিয়ে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার নির্দেশনা দিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2022, 11:05 AM
Updated : 5 August 2022, 11:05 AM

টেলিভিশনের আলোচনায় ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার নির্দেশনা দিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জারি করা ’বিধিনিষেধ’ বাতিলের দাবি জানিয়েছে কয়েকটি ‘আদিবাসী’ সংগঠন।

শুক্রবার সকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ছাত্র-যুব সমাবেশ ও মিছিল থেকে এ দাবি তুলে ধরা হয়।

কয়েকটি আদিবাসী সংগঠনসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা এ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশের নিন্দা জানান।

আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই বলেন, “আমরা নিজেদের আদিবাসী পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশে বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর বাইরে চাকমা, মারমা, গারোসহ ৫৪টি জাতিগোষ্ঠী বাস করে, তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও প্রথা রয়েছে।

“সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার আমাদের কথা রাখেনি। আমাদের পরিচয় তারা চাপিয়ে দিচ্ছেন।”

অনন্ত বলেন, “২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। তারা তখন বলেছিলেন ক্ষমতায় এলে আমাদের স্বীকৃতি দেবেন এবং আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানে কাজ করবেন। কিন্তু আজকে প্রজ্ঞাপন জারি করে আমাদের অপমান করা হয়েছে।

Also Read: ‘আদিবাসী’ শব্দে বিধিনিষেধের চিঠি নিয়ে ক্ষোভ

Also Read: ‘আদিবাসী’: বিধি-নিষেধের ‘সংবিধান পরিপন্থি’ চিঠি তুলে নিতে বিবৃতি

“আমি আমার জাতি পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। আমার পরিচয় আপনারা নির্ধারণ করে দিতে পারেন না। বাঙালি জাতির মতো আমরাও একটা জাতি। আমাদের এভাবে হেয় করা ঠিক না।”

বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ বলেন, “আপনারা আমাদের উপজাতি বলছেন। আমরা সংখ্যায় কম বলে ক্ষুদ্র বলছেন। নদীর উপনদী থাকতে পারে, গাছের শাখা-প্রশাখা থাকতে পারে, কিন্তু জাতির কখনও উপজাত বা শাখা থাকতে পারে না।”

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বলেন, “সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিষয়ে আমরা বলেছি আদিবাসীদের ’আদিবাসী’ হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে হবে। জাতিসংঘ দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তাহলে কেন তাদেরকে নাম ডাক চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে?

“আগামী ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যারাই শুভেচ্ছা বাণী দেবে, সেখানে আদিবাসী না লিখলে আপনারা তা প্রত্যাখ্যান করবেন।”

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আদিবাসী যুব ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), কোচ আদিবাসী ইউনিয়ন, ত্রিপুরা ক্রিস্টিয়ান স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশন, মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, হাজং স্টুডেন্ট কাউন্সিল, গারো ছাত্র সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেন।

গত ১৯ জুলাই তথ্য মন্ত্রণালয়ের টিভি-২ শাখার উপসচিব শেখ শামছুর রহমান স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, “বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন ছোট ছোট সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃগোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

“এ অবস্থায় আগামী ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত টক শোতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্য ব্যক্তিদের বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে প্রচারের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।”

২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ২৩(ক) ধারায় সংস্কৃতি সংক্রান্ত একটি অনুচ্ছেদ সংযোজন করে বলা হয়, “রাষ্ট্র বিভিন্ন উপ-জাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

সংশোধনীর পর ’আদিবাসী’দের পরিচয় নিয়ে নানান আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হয়। জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে বাংলাদেশে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে প্রচারমাধ্যমগুলোকে আদেশ-নির্দেশ দেওয়া হয় বিভিন্ন সময়ে।