“আমাদের সমস্যা সমাধান করবেন উপদেষ্টা মহোদয়। আমরা জনদুর্ভোগ চাই না। দুঃখ প্রকাশ করছি। এখন থেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলাম।”
Published : 29 Jan 2025, 08:23 AM
রানিং স্টাফদের কর্ম বিরতিতে প্রায় ৩০ ঘণ্টা সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর মধ্যরাতের সমঝোতায় সচল হয়েছে রেলপথ।
বুধবার সকালে ঢাকার কমলাপুর থেকে জয়দেবপুরগামী কমিউটার ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয় বলে স্টেশন মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা রাত আড়াইটার পর কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা পেয়েছি। এরপর প্রস্তুতি নিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করতে হয়েছে।
“প্রথমে জয়দেবপুর কমিউটার, এরপর রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে গেছে। সোয়া ৭টার কিছুক্ষণ পর কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস ছেড়ে গেছে।”
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিকের দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন রানিং স্টাফরা। তাতে মঙ্গলবার সারাদিন সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। নজিরবিহীন এই পরিস্থিতিতে স্টেশনে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হয় আগাম টিকেটের যাত্রীদের।
রেলকর্মীদের বুঝিয়ে কাজে ফেরাতে মঙ্গলবার দিনভর দফায় দফায় বৈঠক করেও সমঝোতার পথ বের করতে পারেননি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। রানিং স্টাফদের নেতা মজিবুর রহমানকে খুঁজে না পাওয়ায় বিষয়টি আটকে থাকে।
এই চেষ্টায় যুক্ত হন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসও। কিন্তু তিনিও কোনো সমাধান দিতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত গভীর রাতে রাজধানীর মিন্টো রোডে যোগাযোগ ও রেল উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের বাসায় বৈঠকের পর চলমান কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে ট্রেন চলাচল শুরুর ঘোষণা দেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে প্রকাশ্যে না থাকা রানিং স্টাফদের নেতা মজিবুর রাত আড়াইটায় প্রেস বিফ্রিংয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে বলেন, “আমাদের সমস্যা আগামীকালের (বুধবার) মধ্যে সমাধান করবেন উপদেষ্টা মহোদয়। আমরা জনদুর্ভোগ চাই না। দুঃখ প্রকাশ করছি। এখন থেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলাম।
“মিডিয়ার মাধ্যমে কর্মী ভাইদের বলতে চাই আপনার কাজে ফিরুন। উপদেষ্টা বলেছেন, আগের মত আমরা যা পেয়ে আসছি তা পাব।”
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, “আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমি এটা (তাদের দাবি পূরণ) করতে সক্ষম হব। বিদ্যমান সুবিধাদি বহাল থাকবে। আগে থেকে যেসব সুবিধা চলে আসছে তা পরিবর্তন হবে না।”
গভীর রাতের ওই বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহও অংশ নেন।
বৈঠক শেষে বিফ্রিংয়ে মজিবুর বলেন, “উপদেষ্টা বলেছেন দ্রুত কালকের (বুধবার) মধ্যে সমস্যার সমাধান করবে। আগের সুবিধা বিদ্যমান থাকবে, আগের ন্যায় পাব। আর ২০২২ সালের পরের নিয়োগপ্রাপ্তদের বিষয়ে কালকের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।”
জটিলতা কী নিয়ে
গার্ড, লোকামাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, সাব লোকো মাস্টার এবং টিটিইরা রেলের রানিং স্টাফ। এরা ট্রেন চালানোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত। সারাদেশে রেলওয়েতে ১৭ শর বেশি রানিং স্টাফ কাজ করেন।
দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫–১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সেজন্য তাদের আগে দেওয়া হত বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ।
প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হত।
এ ছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয়, তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হত।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন।
গত ২২ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদান এবং নিয়োগপত্রের দুই শর্ত প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবি জানান রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। তা না হলে ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন।
রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের এসব দাবির পক্ষে থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয় এ জটিলতা সৃষ্টি করেছে বলে রানিং স্টাফদের নেতা মজিবুর রহমানের ভাষ্য।
সেই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ২০২২ সালের পর নিয়োগপত্রে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের জন্য রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা পাবেন না এবং মাসিক রানিং অ্যালাউন্সের পরিমাণ মূল বেতনের চেয়ে বেশি হবে না।
এছাড়া অবসরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বশেষ আহরিত মূল বেতনের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক পাবেন, যা রেলওয়ের কোনো আইন বা বিধি বিধানে বলা নেই।
পুরনো খবর
রেল যোগাযোগহীন নজিরবিহীন দুর্ভোগের একদিন
বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সব ট্রেনের যাত্রা বাতিল
রেল বন্ধে দিনভর ভোগান্তি, চট্টগ্রামে বিআরটিসির বাসে গেছেন কেউ কেউ
খুলনা স্টেশনে দুর্ভোগে যাত্রীরা, কেউ কেউ ফিরেছেন বিকল্প পথে
ট্রেন বন্ধের সুযোগে বাস ভাড়া বৃদ্ধি, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা
ট্রেন বন্ধে নারায়ণগঞ্জে ভোগান্তিতে যাত্রীরা
ট্রেন বন্ধ: বিভিন্ন স্টেশন থেকে ছেড়েছে বিআরটিসির ২৯ বাস
কর্মবিরতি চলবে, আলোচনার পথও খোলা: গার্ড কাউন্সিল সভাপতি
ময়মনসিংহে যাত্রীভর্তি ট্রেন রেখে পালিয়েছে চালক, অবরুদ্ধ স্টেশন সুপার
রানিং স্টাফদের দাবি পূরণ 'অর্থ বিভাগের হাতে', আলোচনার দরজা খোলা:
ট্রেন বন্ধ: রাজশাহী স্টেশনে ভাঙচুর যাত্রীদের