“তাকে ছাড়া সমস্যার সমাধান হবে না। কিন্তু মজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। উনার সম্মতি ছাড়া আমরাও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। যে কারণে আলোচনা ডেডলক হয়ে আছে।”
Published : 29 Jan 2025, 01:03 AM
রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কাজে ফিরিয়ে সারা দেশে ট্রেন চলাচল শুরুর চেষ্টায় দিনভর দফায় দফায় বৈঠক করেও সমঝোতার পথ বের করতে পারেননি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আটকে আছে অদ্ভুত এক কারণে।
আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করানোর এই চেষ্টায় যুক্ত আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। কিন্তু তিনিও কোনো সমাধান দিতে পারেননি।
মঙ্গলবার রাত ১০টার পর কমলাপুর স্টেশনের ভিআইপি ওয়েটিংরুমে রানিং স্টাফদের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে শিমুল বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমানের নির্দেশনা ছাড়া কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে রাজি নন আন্দোলনকারীরা।
“তাকে ছাড়া সমস্যার সমাধান হবে না। কিন্তু মজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। উনার সম্মতি ছাড়া আমরাও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। যে কারণে আলোচনা ডেডলক হয়ে আছে।”
শিমুল বিশ্বাস বলেন, “গতকাল (সোমবার) রাত ১২টার পর মজিবুর সাহেবকে আমরা কোনোভাবেই কানেক্ট করাতে পারছি না। গোপনে কারো কারো সঙ্গে ফোন করছেন। প্রকাশ্যে আসছেন না।”
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিকের দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির এই কর্মবিরতি শুরু হয়।
সে কারণে মঙ্গলবার দিনভর সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। স্টেশনে এসে ট্রেন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন আগাম টিকেট কাটা যাত্রীরা।
মজিবুর রহমানকে প্রকাশ্যে আনার চেষ্টায় আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিয়েও আশ্বস্ত করেন শিমুল বিশ্বাস।
তিনি বলেন, “অতীতে যেভাবে সরকারের পক্ষ থেকে বাধ্য করা হত, জান ও মালের ভয় দেখানো হত, এমন যেন না হয়, সে বিষয়ে আমরা আন্দোলনকারী শ্রমিক নেতাদের নিশ্চিত করেছি। তারা মজিবুরকে খুঁজে পেলে, কথা বলে আমাদের জানালে আমরা আলোচনার টেবিল তৈরি করব। সেখানে বিষয়টি নিষ্পত্তি করব।”
শুধুই কি মজিবুরের কারণে সিদ্ধান্ত আটকে আছে?
এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি মো. সাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কর্মসূচি প্রত্যাহার নিয়ে রাতেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। মজিবুর ভাইয়ের কারণে কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না বিষয়টি এমন না, আবার এমন হতেও পারে। কারণ মজিবুর ভাই ছাড়া তো আমাদের স্টাফরা আলোচনা করবেও না।
“যাই হোক, আমরা চেষ্টা করছি শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে মজিবুর ভাইকে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার।”
গত ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সংবাদ সম্মেলন করে ২৮ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা দেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান। তবে সোমবার থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
মঙ্গলবার কর্মসূচির বিষয়ে জানতে একাধিকবার মজিবুর রহমানের মোবাইলে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। দুয়েকবার কল হলেও তিনি ধরেননি।
রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের একজন নেতা মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কর্মবিরতি শুরু হওয়ার পর মজিবুর রহমান অনেকটা আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে বুধবার যোগাযোগ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে মজিবুর রহমান বা তার প্রতিনিধি থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন ওই নেতা।
তিনি বলেন, “মজিবুর ভাই আজ না থাকলেও তার প্রতিনিধিরা বৈঠকে ছিলেন। তাদের বলে দেওয়া হয়েছে মজিবুর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে তাকে বৈঠকে নিয়ে আসতে। নইলে তার প্রতিনিধিরা থাকবেন। কাল বিষয়টি সমাধান হবে বলে আমরা আশা করছি।”
রেলকর্মীদের কর্মবিরতিতে সারা দিন সারা দেশে ট্রেন বন্ধ থাকার এমন ঘটনা বাংলাদেশে নজিরবিহীন। সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতি প্রত্যাহারের জন্য সরকারের তরফ থেকে বার বার রেলকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। দফায় দফায় বৈঠকও চলছে। কিন্তু মীমাংসা হচ্ছে না।
বেলা দেড়টার দিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ভিআইপি বিশ্রামাগারে আন্দোলনরত রানিং স্টাফ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। ওই বৈঠকে কোনো ফল আসেনি।
বেলা ৪টার দিকে রেলভবনে যান জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শিমুল বিশ্বাস। তিনি চলমান কর্মসূচিতের থাকা রেলকর্মী এবং সরকারের মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেন।
রেলভবনের বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম, বাংলাদেশ রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত ডিজি সলিমুল্লাহ বাহারসহ কর্মকর্তারা থাকলেও রেলওয়ের রানিং স্টাফরা ছিলেন না।
সেখান থেকে সন্ধ্যার পর ফের কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিমুল বিশ্বাস। তবে সেখানে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, মজিবুর রহমানের নির্দেশনা না পেলে কর্মসূচি প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে না।
এই অচলাবস্থার কারণে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সব ট্রেনের যাত্রা বাতিল করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যাত্রীদের টিকেটের টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবারও ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেল স্টেশন থেকে বিআরটিসির বাসে করে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হবে ট্রেনের আগাম টিকেটের যাত্রীদের। ট্রেনের টিকেট দিয়েই তারা বাসে ভ্রমণ করতে পারবেন।