দিনভর দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। তবে রেলের রানিং স্টাফরা অবস্থান থেকে সরেননি, দাবি আদায়ে অনড় ছিলেন তারা।
Published : 29 Jan 2025, 01:30 AM
দেশজুড়ে দিনভর ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার নজিরবিহীন একদিন দেখল বাংলাদেশ; ভোগান্তি হল হাজার হাজার মানুষের। ক্ষুব্ধ যাত্রীদের ভাঙচুর, স্টেশন মাস্টারকে আটকে রাখাসহ নানা তুঘলকি ঘটনার মধ্যে দফায় দফায় বৈঠকেও ঘুরল না রেলের চাকা।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দিনভর বৈঠকের নানা পর্ব আর রাতের নাটকীয়তা শেষে গভীর রাতের বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস এল। যে বৈঠকে দিনভর আড়ালে থাকা আন্দোলনকারীদের নেতা হাজির হলেন। রেল উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতির পর ঘোষণা দিলেন কর্মসূচি তুলে নেওয়ার। সহকর্মীদের আহ্বান জানালেন কাজে যোগ দেওয়ার।
এর আগে রেলকর্মীদের ডাকা কর্মসূচিতে দেশব্যাপী সারাদিন রেল বন্ধ থাকার ঘটনা ঘটল; নিকট অতীত ঘেঁটে এমন ঘটনা স্মরণ করতে পারলেন না রেল সংশ্লিষ্টদের অনেকেই।
রেলকর্মীদের কর্মবিরতির খবর জেনেও আগাম টিকিট কেটে স্টেশনে আসা যাত্রীরা গন্তব্যে যাত্রা করতে না পেরে নজিরবিহীন এমন ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশ্ন রেখেছেন, আগে থেকে এমন কর্মসূচির ঘোষণা থাকার পরও এমন কর্মবিরতি হল কীভাবে, সমাধান হল না কেন? এর দায় কার?
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিকের দাবি পূরণ না হওয়ায় রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে এমন অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়েতে।
তাদের এ কর্মসূচির কারণে দেশজুড়ে টানা ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘটেনি আর। রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কর্মসূচি বা কোভিড মহামারীর মত দুর্যোগে রেল বন্ধ থাকলেও রেলের কর্মীদের কর্মসূচিতে দেশজুড়ে এতটা সময় ট্রেন বন্ধ থাকেনি।
সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতি প্রত্যাহারের জন্য সরকারের তরফ থেকে বারবার রেলকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হলেও কাজ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে দিনভর দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। তবে রেলের রানিং স্টাফরা অবস্থান থেকে সরেননি, দাবি আদায়ে অনড় তারা।
রাতে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি মো. সাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দিনভর আলোচনা হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন তারা। কিন্তু রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কথায় তারা আশ্বস্ত হতে পারছেন না।
“উনারা আমাদের কাছে কর্মসূচী প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু আজ কর্মসূচী প্রত্যাহার করার কোনো চান্স নাই। কারণ উনারা কাগজ না দেওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচী প্রত্যাহার করব না।”
সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় রেলস্টেশনে হামলা, কর্মকর্তাদের আটকের ঘটনা ঘটেছে। ট্রেন না চলায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ এসেছে।
আগের ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার মধরাত থেকে নতুন করে কোনো ট্রেন ছাড়েনি। তবে রাত ১২টার আগে যেসব ট্রেন ছেড়েছে সেগুলো নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছেছে ঠিকঠাক।
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের মুখে ট্রেন বন্ধ থাকায় যাত্রীদের টিকেট ফেরত দিয়েছে রেলওয়ে। তবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নগরীতে যাত্রীদের পৌঁছে দিতে বিআরটিসির বাসের ব্যবস্থা করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এতে অনেকের কষ্ট কিছুটা লাঘব হলেও বেশির ভাগকে পোহাতে হয়েছে ভোগান্তি।
এসব বাস ঢাকার কমলাপুর এবং বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লা, বগুড়া ও ময়মনসিংহে যাত্রী পৌঁছে দেয়। তবে সন্ধ্যার পর ঢাকা থেকে বিআরটিসির কোনো বাস ট্রেনের যাত্রী নিয়ে যায়নি।
মজিবুরে ‘আটকে’ রেলের চাকা
রেলওয়ের রানিং স্টাফ বলতে ট্রেনের চালক, সহকারী চালক, গার্ড ও টিকিট পরিদর্শকদের (টিটি) বোঝানো হয়।
এসব রেলকর্মীদের সংগঠন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান কর্মসূচির শুরুর পর থেকে আর প্রকাশ্যে আসছেন না। এখন তাকে ছাড়া সমস্যার সমাধানও মিলছে না।
রানিং স্টাফদের কাজে ফিরিয়ে সারা দেশে ট্রেন চলাচল শুরুর চেষ্টায় দিনভর দফায় দফায় বৈঠক করেও সমঝোতার পথ বের করতে পারেননি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করানোর এই চেষ্টায় যুক্ত আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। কিন্তু তিনিও কোনো সমাধান দিতে পারেননি।
মঙ্গলবার রাত ১০টার পর কমলাপুর স্টেশনের ভিআইপি ওয়েটিংরুমে রানিং স্টাফদের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে শিমুল বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমানের নির্দেশনা ছাড়া কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে রাজি নন আন্দোলনকারীরা।
নজিরবিহীন কর্মবিরতির দায় কার
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলকর্মীদের কর্মবিরতির কারণে দিনভর ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার ঘটনা বাংলাদেশে নজিরবিহীন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন সাবেক মহাপরিচালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ৩৫ বছর রেলওয়েতে চাকরি করেছেন তিনি। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন বছর কয়েক আগে। এরকম ঘটনা এর আগে কখনও ঘটতে দেখেননি।
নামপ্রকাশ করতে চাননি সাবেক ওই মহাপরিচালক। তবে বিভিন্ন সময়ে রেলকর্মীদের দাবি-দাওয়া ও কর্মসূচির অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিভিন্ন সময় দাবিদাওয়া নিয়ে কর্মবিরতি যেগুলো হয়েছে, সেগুরো বিচ্ছিন্নভাবে, কয়েক ঘণ্টার জন্য হয়েছে। পুরো একদিনের কর্মসূচি এবারই মনে হয় প্রথম। রেল একটা জরুরি সেবা। এটা মানুষের বিপদের বাহন।
”সারাদেশে সব পরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ রেলে চড়ে। কারও পকেটে টাকা না থাকলেও সে ট্রেনে চড়ে গন্তব্যে যেতে পারে। কিন্তু আজ রেল বন্ধ, বাসে করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক।”
ওই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কর্মকর্তাদের দায় বেশি, কিছুটা দায় আন্দোলনকারী কর্মচারীদেরও আছে।
“যারা দাবি করছেন তাদের দাবিটা পুরোপুরি সঠিক না। আবার যারা বিষয়টি নিয়ে নেগোশিয়েট করছেন তাদেরও ব্যর্থতা আছে। তারা এই আলোচনা আরও আগে, সময় নিয়ে করতে পারতেন। কিন্তু তারা তা করেননি। আন্দোলনের ঘোষণাটা কিন্তু আরও অনেক আগেই দেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারা পাত্তা দেননি।”
কর্মবিরতির সংকট সমাধানে ব্যস্ত থাকা রেলওয়ের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এর সদুত্তর মেলেনি।
এ নিয়ে কথা বলেননি রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এস এম সলিমুল্লাহ বাহার কিংবা রেল সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম।
তবে রেলের দায়িত্বে থাকা যোগাযোগ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান কর্মবিরতি চলার মধ্যে সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে বলেন, আন্দোলনকারীদের দাবি পূরণের বিষয়টি নিয়ে রেল বিভাগ তাদের করণীয় করেছে। এখন বিষয়টি অর্থ বিভাগের 'হাতে রয়েছে'।
পরে রানিং স্টাফদের দাবিদাওয়া নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনরত রেল কর্মচারীদের 'যৌক্তিক দাবি' আগেই মেনে নেওয়া হয়েছে।
যেসব বাড়তি দাবি নিয়ে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি কর্মবিরতিতে গেছেন তা পূরণ করতে সরকারের বর্তমান সক্ষমতার বিষয়ে সংশয় প্রকাশ পেয়েছে তার কথায়।
তিনি বলেন, "রেল কর্মীদের ওভারটাইম সংক্রান্ত যে যৌক্তিক দাবি ছিল সেটা অর্থ মন্ত্রণালয় মেনে নিয়েছে। বেশ কয়েকদিন আগেই তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মানা হয়েছে, আমরা দিয়েছি। তারপরও তারা কেন আন্দোলন করছে সেটা তাদের ব্যাপার।
“প্রত্যেকেরই একাধিক দাবি থাকবে। তারা বলেছে এই দিতে হবে, ওভারটাইম এলাউন্স দিতে হবে। আমরা যতটুকু পেরেছি আমাদের সম্পদের হিসাব অনুযায়ী আমরা দিয়েছি।"
দেশজুড়ে ভোগান্তির একদিন
দীর্ঘসময় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সারাদেশে ট্রেন যাত্রীরা ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন। সকালে ভাগেই রাজশাহী রেলস্টেশনে ঘটে ভাঙচুরের ঘটনা।
সেখানে কয়েকশো যাত্রী ট্রেন না পেয়ে সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করার এক পর্যায়ে ভাঙচুর চালান।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার শহীদুল আলম বলেন, “ক্ষুব্ধ যাত্রীরা টিটিইদের একটি কক্ষের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। এ সময় অন্য কক্ষগুলোর দরজা তালাবদ্ধ ছিল। স্টেশনে পেতে রাখা বেশকিছু চেয়ারও ভাঙচুর করেন যাত্রীরা।
“খবর পেয়ে সেনাবাহিনী সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা শান্ত হন। পরে টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে তারা বাড়ি ফেরেন।”
ময়মনসিংহে স্টেশন সুপারিনটেনডেন্টকে আটকে রাখার ঘটনা ঘটেছে। নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে রওনা হয়। তবে সকাল ১০টার দিকে ট্রেনটি ময়মনসিংহ স্টেশনে এলে পালিয়ে যান লোকোমাস্টার। এরপরই ক্ষুব্ধ যাত্রীরা গিয়ে আটকে রাখেন ওই রেল কর্মকর্তাকে।
এছাড়া সকাল থেকে অন্য যাত্রীরা ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে এসে ট্রেন না পেয়ে ভিড় জমান শহরের বাসস্ট্যান্ডগুলোতে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাসের ভাড়া ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
দেশের অন্যান্য স্থানের মত ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে চলাচলকারীদেরও। নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রীরা তাদের মালপত্র নিয়ে আসছেন এবং রেল বন্ধ থাকায় তারা ফিরে যাচ্ছেন।
খুলনা স্টেশনে গিয়ে সকালে দেখা যায়, ইঞ্জিন ছাড়া কোচগুলো স্টেশনে দাঁড়ানো। স্টেশনে কর্মরত রানিং স্টাফ টিটিই, গার্ড ও ট্রেন চালক কারও দেখা মেলেনি। স্টেশনের মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে, অনিবার্য কারণবশত ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। যেসব যাত্রী ট্রেনের টিকিট অগ্রিম কেটেছেন তাদের টিকিটের টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এতে স্টেশন থেকে দূরের পথের যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। জরুরি কাজ ছিল যাদের তাদের বেশি বিপাকে পড়তে হয়েছে।
ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশনে হৈ চৈ থাকলেও বিকালে ছিল সুনসান নীরবতা। কর্মবিরতির কথা না জেনে স্টেশনে আসা কয়েকজনকে ফিরে যেতে দেখা গেছে। কবে নাগাদ ট্রেন চলতে শুরু করবে সেই খবর নিতে এসেছেন গুটিকয়েক।
রেলের পূর্ব আর পশ্চিম দুই জোনের স্টেশনগুলোর দিনভর একই রকম চিত্র দেখা গেছে। দুর্ভোগের একটি দিন কেটেছে রেল নির্ভর এলাকার মানুষজনের।
দফায় দফায় বৈঠকেও চাকা ঘোরেনি
সকালের বিভিন্ন উদ্যোগে কাজ না হওয়ায় বেলা দেড়টার দিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ভিআইপি বিশ্রামাগারে আন্দোলনরত রানিং স্টাফ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রেল সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। এতেও কোনো ফল আসেনি।
বেলা ৪টার দিকে রেলভবনে যান জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যিনি চলমান কর্মসূচিতে থাকা রেলকর্মী এবং সরকারের মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছেন।
রেলভবনে বৈঠক করতে উপস্থিত হন যোগাযোগ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, রেল সচিব, রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তারা। তবে যাদের কর্মসূচি সেই রানিং স্টাফরা ছিলেন না। ফলে ওই বৈঠক থেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার মত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়নি।
পরে রাত ৮টার দিকে কমলাপুর স্টেশনের ভিআইপি ওয়েটিংরুমে আবারও বৈঠকে বসেন শিমুল বিশ্বাস। সেসময় আন্দোলনকারী রানিং স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। নয়টা পর্যন্ত চলে সেই বৈঠক। তবে তাতেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
রাত আটটার দিকে কমলাপুর স্টেশনের ভিআইপি ওয়েটিংরুমে আবারও বৈঠকে বসেন শিমুল বিশ্বাস। সে সময় আন্দোলনকারী রানিং স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। রাত দশটা পর্যন্ত চলে সেই বৈঠক।
তবে সেই বৈঠকে আন্দোলনকারীদের নেতা বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান না থাকায় কোনো সুরাহা হয়নি।
এর আগে কর্মবিরতি চলার মধ্যে সকালে কমলাপুর স্টেশনে আসেন যোগাযোগ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সেখানে গিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করতে রেলের রানিং স্টাফদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংকটের সুরাহায় তাদের সঙ্গে যেকোনো সময় আলোচনায় ব্সতে প্রস্তুত আছেন বলেও জানান তিনি।
রানিং স্টাফরা কী চান
গার্ড, লোকামাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, সাব লোকো মাস্টার এবং টিটিইরা রেলের রানিং স্টাফ। এরা ট্রেন চালানোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত। সারাদেশে রেলওয়েতে ১৭ শর বেশি রানিং স্টাফ কাজ করেন।
দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫–১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সেজন্য তাদের আগে দেওয়া হত বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ।
প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হত।
এ ছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয়, তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হত।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে।
গত ২২ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদান এবং নিয়োগপত্রের দুই শর্ত প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবি জানান রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। তা না হলে ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন।
রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের এসব দাবির পক্ষে থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয় এ জটিলতা সৃষ্টি করেছে বলে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমানের ভাষ্য।
তিনি বলেন, ২০২২ সালের পর নিয়োগপত্রে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের জন্য রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা পাবেন না এবং মাসিক রানিং অ্যালাউন্সের পরিমাণ মূল বেতনের চেয়ে বেশি হবে না।
এছাড়া অবসরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বশেষ আহরিত মূল বেতনের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক পাবেন, যা রেলওয়ের কোনো আইন বা বিধি বিধানে বলা নেই।
আরো পড়ুন
বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সব ট্রেনের যাত্রা বাতিল
রেল বন্ধে দিনভর ভোগান্তি, চট্টগ্রামে বিআরটিসির বাসে গেছেন কেউ কেউ
খুলনা স্টেশনে দুর্ভোগে যাত্রীরা, কেউ কেউ ফিরেছেন বিকল্প পথে
ট্রেন বন্ধের সুযোগে বাস ভাড়া বৃদ্ধি, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা
ট্রেন বন্ধে নারায়ণগঞ্জে ভোগান্তিতে যাত্রীরা
ট্রেন বন্ধ: বিভিন্ন স্টেশন থেকে ছেড়েছে বিআরটিসির ২৯ বাস
কর্মবিরতি চলবে, আলোচনার পথও খোলা: গার্ড কাউন্সিল সভাপতি
ময়মনসিংহে যাত্রীভর্তি ট্রেন রেখে পালিয়েছে চালক, অবরুদ্ধ স্টেশন সুপার
রানিং স্টাফদের দাবি পূরণ 'অর্থ বিভাগের হাতে', আলোচনার দরজা খোলা:
ট্রেন বন্ধ: রাজশাহী স্টেশনে ভাঙচুর যাত্রীদের