শরীফার গল্প: মাহতাবকে চুক্তিতে না রাখার কারণ জানাল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

“ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি প্রত্যেকটি মানুষের সমান অধিকার এবং সম্ভাবনা বিকাশের পথে সমান সুযোগ সৃষ্টিতে বিশ্বাস করে,” বলেছে কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2024, 07:02 AM
Updated : 29 Jan 2024, 07:02 AM

স্কুলের পাঠ্যবইয়ের পাতা ছিঁড়ে আলোচনায় আসা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে চাকরিতে না রাখার কারণ জানাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সোমবার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সাম্প্রতিক সময়ে জনাব আসিফ মাহতাব উৎস কর্তৃক বাংলাদেশ সরকারের প্রকাশিত সপ্তম শ্রেণির জাতীয় পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা ছেঁড়া এবং পাবলিক ফোরামে অন্যদেরকে একই কাজ করতে বলার ঘটনাটিকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি একটি ধ্বংসাত্মক কাজ বলে মনে করে এবং এ ধরনের অশিক্ষকসুলভ আচরণকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না।”

গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ‘শরীফার গল্প’ নামের একটি সচেতনতামূলক পাঠ ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান আসিফ মাহতাব।

‘শরীফার গল্প’ পাঠে বলা হয়েছে ‘হিজড়া ও তৃতীয় লিঙ্গের’ মানুষদের জীবনের কথা। কিন্তু আসিফ মাহতাবের দাবি, পাঠ্যবইয়ে ‘ট্রান্সজেন্ডারের গল্প’ ঢুকিয়ে ‘সমকামিতাকে’ উসকে দেওয়া হচ্ছে। 

সেদিন নিজে ওই বই থেকে ‘শরীফার গল্প’ ছিঁড়ে ফেলার পাশাপাশি অন্যদেরও একই কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

বিষয়টি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় নানা আলোচনার মধ্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০ জানুয়ারি এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, আসিফ মাহতাবের সঙ্গে বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো চুক্তি নেই।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী আসিফ মাহতাবকে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামে। বিতর্কের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শরীফার গল্প পর্যালোচনা করার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।

সে সময় আসিফ মাহতাবের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করার কারণ ব্যাখ্যা না করলেও সোমবারের বিবৃতিতে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সেখানে বলা হয়েছে, “সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি সব মত ও আদর্শের জন্য সহনশীলতা ও সম্মানের ভিত্তিতে গঠনমূলক আলোচনা, বিতর্ক এবং পারস্পরিক মতবিনিময়ে বিশ্বাস করে। কিন্তু ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জাতীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য আচরণ যা ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি সমর্থন করে না।”

প্রকাশ্যে পাঠ্যবই ছেঁড়ার বিষয়টিকে ‘অশিক্ষকসুলভ’ আখ্যা দিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, “এ কারণে ব্যাক ইউনিভার্সিটি ২০২৪ সালের স্প্রিং সেমিস্টারের জন্য জনাব আসিফ মাহতাব উৎসকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নতুন চুক্তি না দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ইউনিভার্সিটি জনাব মাহতাবকে এই সেমিস্টারের প্রস্তুতিমূলক কাজে তার সময় ও প্রচেষ্টার জন্য পারিশ্রমিক প্রদান করবে।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি সকল ক্ষেত্রে দেশের সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং দেশের প্রচলিত বিধিবিধান মেনে চলার বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাই ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি সমকামিতার প্রচার ও প্রসারের সাথে যুক্ত-- সামাজিক মাধ্যমে কিছু মহলের এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

“তবে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি প্রত্যেকটি মানুষের সমান অধিকার এবং সম্ভাবনা বিকাশের পথে সমান সুযোগ সৃষ্টিতে বিশ্বাস করে।”

পুরনো খবর

Also Read: পাঠ্যপুস্তকের কোনো রচনা প্রত্যাহার করে নতি স্বীকার নয়: নির্মূল কমিটি

Also Read: ‘লিঙ্গ বৈচিত্র্যের মানুষদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ উদ্বেগের’

Also Read: ‘শরীফার গল্প’: মৌলবাদী ‘চক্রান্ত’ প্রতিরোধের আহ্বান উদীচীর

Also Read: বই থেকে ‘শরীফার গল্প‘ বাদ দিতে উকিল নোটিস

Also Read: 'উগ্র’ আসিফ মাহতাবকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জাসদের

Also Read: শিক্ষক হিসেবে আসিফ মাহতাবের যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ: মহিলা পরিষদ

Also Read: ‘শরীফার গল্প’ পর্যালোচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি

Also Read: 'শরীফার গল্প' নিয়ে বিতর্ক কেন?

Also Read: আসিফ মাহতাবকে পুনর্বহালের দাবিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

Also Read: ‘শরীফার গল্পের’ উপস্থাপনায় বিভ্রান্তি থাকলে পরিবর্তন করা হবে: শিক্ষামন্ত্রী

Also Read: শরীফার গল্প: যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী নওফেল