বই থেকে ‘শরীফার গল্প‘ বাদ দিতে উকিল নোটিস

সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে‘শরীফার গল্প’ নামে একটি পাঠ রয়েছে, যেখানে হিজড়াদের জীবন কথা তুলে ধরা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2024, 11:44 AM
Updated : 25 Jan 2024, 11:44 AM

সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই থেকে ‘শরীফার গল্প‘বাদ দিতে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী।  

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবির) চেয়ারম্যানকে ওই নোটিস পাঠান। 

সেখানে বলা হয়েছে, “এই গল্পের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ট্রান্সজেন্ডারের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়েছে। সুকৌশলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতি প্রেরণা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া এক নয়, এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। হিজড়ারা জন্মগতভাবেই কিছুটা বিকৃত অঙ্গ নিয়ে জন্মায়। এটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। কিন্তু ট্রান্সজেন্ডারদের শারীরিক কোনো ত্রুটি থাকে না, তারা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। উদাহরণস্বরূপ একজন ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ মনে করে সে একজন নারী। অপরদিকে একজন নারী ট্রান্সজেন্ডার মনে করে সে একজন পুরুষ।” 

ট্রান্সজেন্ডারদের যৌনাচার নিয়ে আপত্তি তুলে নোটিসে বলা হয়, বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় পুরুষ-পুরুষ বা নারী-নারী যৌন সহবাসের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা দশ বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। 

৩০ দিনের মধ্যে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই থেকে ‘শরীফার গল্প’ বাদ দেওয়াসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বইয়ের দোকান থেকে বইটি প্রত্যাহার করতে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সংশোধিত বই সরবরাহ করতে বলা হয়েছে আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসানের পাঠানো নোটিসে। 

Also Read: ‘শরীফার গল্প’ পর্যালোচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি

Also Read: শরীফার গল্প: যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী নওফেল

Also Read: ‘শরীফার গল্পের’ উপস্থাপনায় বিভ্রান্তি থাকলে পরিবর্তন করা হবে: শিক্ষামন্ত্রী

Also Read: আসিফ মাহতাবকে পুনর্বহালের দাবিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

তা করা না হলে এ বিষয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন এ আইনজীবী। 

‘শরীফার গল্প’ নামে জনসচেতনতামূলক ওই পাঠ সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে জায়গা পেয়েছে ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ বিষয়ে ধারণা দেওয়ার জন্য।

বইয়ের ৩৯ ও ৪০ নম্বর পৃষ্ঠায় অন্তর্ভুক্ত ওই পাঠে শিক্ষার্থীরা পড়বে নারী-পুরুষের বাইরে ‘তৃতীয় লিঙ্গের’ মানুষ বা ‘হিজড়াদের’ জীবনের কথা। 

পাঠ্যপুস্তকটির পাঠের এ অংশ নিয়েই গত কয়েকদিন ধরে তুমুল বিতর্ক চলছে দেশজুড়ে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আগে থেকেই বিভক্তরা এ প্রসঙ্গ ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আরও গরম করে তুলেছেন।

এ বিতর্কের সূচনা করেছেন আসিফ মাহতাব, যিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন।

গত শুক্রবার রাজধানীতে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে এক আলোচনায় ‘সমকামিতার উসকানির’ অভিযোগ তুলে তিনি পাঠ্যবইয়ের ওই অংশের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন। সেই ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

বইটি সম্পাদনার সঙ্গে যুক্তরা বলছেন, সেখানে ‘হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের’ মানুষদের কথা বলা হয়েছে, ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি কোথাও লেখা হয়নি। সুতরাং এ পাঠকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ নেই। 

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, হিজড়াদের অধিকার বাংলাদেশে আইনিভাবে স্বীকৃত। তারাও এ দেশের নাগরিক। তারপরও শরীফার পাঠ নিয়ে যদি কোনো বিষয় থাকে, সেটা পর্যালোচনা করার সুযোগ আছে। 

‘শরীফার গল্প’ পর্যালোচনায় ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুর রশীদকে দেওয়া হয়েছে কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব।