পুরো কারিকুলামের পরিবর্তনই মৌলবাদী অপশক্তির মূল এজেন্ডা বলে মন্তব্য করেছেন শাহরিয়ার কবির।
Published : 28 Jan 2024, 02:59 PM
নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যপুস্তকের কোনো রচনা প্রত্যাহার বা পরিবর্তন করে মৌলবাদী অপশক্তির কাছে নতি স্বীকার না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবের পাঠ্যপুস্তক ছেঁড়ার প্রসঙ্গে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, “সরকারকে কোনোভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে মাথা নত করা যাবে না। আসিফ মাহতাবের বক্তব্য ধর্মের অপব্যবহার।
“আসিফ সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে তৃতীয় লিঙ্গের ‘শরীফার গল্প’ রচনাটি ছিঁড়ে ফেলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, এটিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই এবং সেখানে সমকামিতার বিষয়টির কথা বলেছেন বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।”
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘স্কুল পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নিয়ে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাম্প্রতিক ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
পাঠ্যপুস্তকে মুদ্রণ ও তথ্যগত যেসব ভ্রান্তি রয়েছে তা দ্রুত নিরসনের দাবি জানান শাহরিয়ার কবির।
এছাড়াও পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনায় গঠিত তদন্ত কমিটিতে জীববিজ্ঞানী, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের রাখা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
শাহরিয়ার কবির বলেন, “জেন্ডার ডিবেটে মুখ্য বিষয় হিসেবে বলা হয়েছে পুরো কারিকুলামকে পরিবর্তন করতে। অর্থাৎ কারিকুলামের পরিবর্তনই তাদের মূল এজেন্ডা।
এদের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস বা সমঝোতা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ, দেউলিয়া, সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করবে।”
গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীতে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে এক আলোচনায় ‘সমকামিতার উসকানির’ অভিযোগ তুলে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন আসিফ মাহতাব, যিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন।
এই ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর পাঠ্যবই নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক চলছে।
আসিফ মাহতাবের ছিঁড়ে ফেলা অংশে জায়গা পেয়েছে হিজড়াদের জীবন নিয়ে ‘শরীফার গল্প’ নামে জনসচেতনতামূলক একটি পাঠ। আসিফের দাবি, এই গল্পের মাধ্যমে ‘সমকামিতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে’।
তবে পাঠ্যবই রচনার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, একটি গোষ্ঠী না বুঝে পাঠ্যবইয়ের বিরোধিতা করছে।
এরপর গত বুধবার ‘শরীফার গল্প’ পর্যালোচনায় পাঁচ সদস্যের কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, “আসিফ মাহতাবের উদ্ধত ও অশিক্ষকসুলভ আচরণ শিক্ষকরা যদি গ্রহণ করে, তাহলে তা গোটা সমাজের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা একজন মুক্তিযোদ্ধা, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কনিষ্ঠ শিক্ষকের এ আচরণ... সে কীভাবে সেখানে নিয়োগ পেলেন, তা খতিয়ে দেখতে হবে। এটি পরিকল্পিত।”
শিক্ষাক্রম নিয়ে আসিফ মাহতাব ‘মিথ্যাচার করেছেন’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, “বইয়ে যা নেই, তা নিয়ে কথা বলেছেন। তৃতীয় লিঙ্গ আল্লাহর সৃষ্টি এবং আমাদের সংবিধান জেন্ডার সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেয়। তার বক্তব্যে ধর্মের অপব্যবহার ও সংবিধান বিরোধিতা দেখা গেছে।”
আসিফের উপযুক্ত শাস্তি না হলে এ ধরণের প্রবণতা বাড়তে থাকবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, “আসিফ মাহতাব বই ছিঁড়ে ফেলে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ করেছে। তাকে এ ঘটনায় অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ব শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম ও শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ।
আরও পড়ুন...
'উগ্র’ আসিফ মাহতাবকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জাসদের
'শরীফার গল্প' নিয়ে বিতর্ক কেন?
শান্ত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাকে সাড়া নেই
আসিফ মাহতাবকে পুনর্বহালের দাবিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
শিক্ষক হিসেবে আসিফ মাহতাবের যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ: মহিলা পরিষদ