বিচারকের উদ্দেশে মালেক বলেন, “তার (নার্গিস বেগম) পেসমেকারের সমস্যা। মাঝে মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সাজাটা কমিয়ে দিন।"
Published : 16 Apr 2025, 03:41 PM
জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় তিন বছরের সাজার রায় শুনে আদালত কক্ষে ‘জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আলোচিত সাবেক গাড়িচালক আব্দুল মালেকের স্ত্রী নার্গিস বেগম।
বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক জাকারিয়া হোসেনের আদালতে এ ঘটনা ঘটে। ওই রায়ে গাড়িচালক আব্দুল মালেককে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার আগে আবদুল মালেককে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা নার্গিস আক্তারও হাজির হন আদালতে।
রায় ঘোষণার আগে স্বামীর পাশে ডকে গিয়ে দাঁড়ান নার্গিস বেগম।
দুপুর একটার দিকে বিচারক জাকারিয়া হোসেন রায় ঘোষণা করেন। কারাদণ্ডে কারাদণ্ডের পাশাপাশি মালেক ও নার্গিসকে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে তাদের আরও তিন মাস করে বিনাশ্রম কারাভোগ করতে হবে।
দুদক প্রসিকিউটর আসাদুজ্জামান রানা জানিয়েছেন, আসামিদের জ্ঞাত আয় বর্হিভূত এক কোটি ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৫০ টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে।
রায় শুনে স্বামীর হাতের ওপর হাত রেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নার্গিস বেগম। এরই মধ্যে ‘জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন’ তিনি। পরে তাকে কাঠগড়া থেকে বেঞ্চে বসানোর জন্য নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু সেখানে নেওয়ার আগেই মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে দুই নারী পুলিশ সদস্যসহ তার মেয়ে তাকে বেঞ্চে নিয়ে গিয়ে বসান।
তখনও আদালতের বিচারকাজ চলছিল। এসময় বিচারকের উদ্দেশে গাড়িচালক মালেক বলেন, “তার (নার্গিস বেগম) পেসমেকারের সমস্যা। মাঝে মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সাজাটা কমিয়ে দিন।"
তবে বিচারককে এ বিষয়ে কর্ণপাত করতে দেখা যায়নি।
পরে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশের মালেক বলেন, “ওকে একটু বসতে দিন। ৪/৫ মিনিট পরে ঠিক হয়ে যাবে।"
জ্ঞান ফেরার পর নারী পুলিশ সদস্যের কাঁধে মাথা রেখে কারাগারে যান নার্গিস বেগম।
জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এক কোটি ১০ লাখ ৯২ হাজার ৫০ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আব্দুল মালেক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগমের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
তদন্ত করে একই বছরের ২৭ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তিনি।
২০২২ সালের ১১ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
গত ২৩ মার্চ অবৈধ সম্পদের এক মামলায় মালেককে পৃথক দুই ধারায় ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় এ আদালত।
এরআগে ২০২১ সালে ২০ সেপ্টেম্বর অস্ত্র আইনের মামলায় আব্দুল মালেককে দুই ধারায় ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক মালেককে আটক করে র্যাব। তার অঢেল অর্থ বিত্তের তথ্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় সে সময়।
ওই সময় র্যাব কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তুরাগের দক্ষিণ কামারপাড়ায় দুটি সাততলা ভবন, একই এলাকায় একটি বিশাল ডেইরি ফার্ম, ধানমন্ডির হাতিরপুলে সাড়ে ৪ কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০তলা ভবন ছাড়াও কলাবাগানসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে মালেকের। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থও জমা আছে।
মালেককে গ্রেপ্তারের পরদিন দুদক জানিয়েছিল, আগে থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের’ সঙ্গে জড়িত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক। তাদের মধ্যে গাড়িচালক মালেকও রয়েছেন।
পুরনো খবর
সম্পদের মামলায় স্বাস্থ্যের মালেক ও স্ত্রীর সাজা
সম্পদের মামলায় স্বাস্থ্যের মালেক ও স্ত্রীর সাজা
স্বাস্থ্যের গাড়িচালক মালেকের অস্ত্র মামলার রায় ২০ সেপ্টেম্বর
অস্ত্র মামলায় স্বাস্থ্যের গাড়িচালক মালেকের বিচার শুরু
স্বাস্থ্যের গাড়িচালক মালেকের সাড়ে ৩ কোটি টাকার সম্পদ: দুদক