শত শত লোক সোমবার রাতে হাটে ঢুকে পড়ে এবং হাসিল আদায় শুরু করে, বলেন এক কর্মকর্তা।
Published : 16 Apr 2025, 12:33 AM
ঢাকার গাবতলী গবাদী পশুর হাটের ইজারা দরপত্র বাতিল করা হয়েছে; এজন্য ‘প্রক্রিয়াগত ত্রুটির’ কথা বলেছে হাটের নিয়ন্ত্রক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-ডিএনসিসি।
মঙ্গলবার সংস্থার প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ দরপত্র বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রক্রিয়াগত ভুল থাকার কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে দরপত্র আহবান করা হবে।”
প্রতি বাংলা বছরের শুরুতে গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটটি ইজারা দেওয়া হয়ে থাকে। এক বছরের জন্য দেওয়া এই ইজারার জন্য প্রায় একমাস আগে থেকে কাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন।
১৪৩২ বাংলা সনের জন্য এই হাট ইজারা দিতে ৩ মার্চ দরপত্র আহবান করা হয়। দর জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ১৯ মার্চ এবং ওই দিনই দরপত্র বাক্স খোলা হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এই পশুর হাটের ইজারা সংস্থার সবচেয়ে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্র। ২০২৪ সালের চেয়ে এবার প্রায় ৫ কোটি টাকা বেশি, ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকা দর দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছিল আরাত মটরস নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
তারা বলেন, এবার দরপত্র দাখিল করা পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটির কাছ থেকে ‘ভুয়া’ পে অর্ডার পেয়েছেন তারা। আর দুটি প্রতিষ্ঠান পে অর্ডারই দেয়নি।
সর্বোচ্চ দর দেওয়া আরাত মটরসের কর্ণধার আরাত হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে তারা কোনো কার্যাদেশ পাননি। বাতিল বা পুনরায় দরপত্রের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলে তা এখনো জানতে পারেননি তারা।
এ হাটের আগের ইজারাদার ছিলেন চলচ্চিত্র প্রয়োজক ও অভিনেতা মনোয়ার হোসেন (ডিপজল)। নিয়মানুযায়ী পহেলা বৈশাখের দিন শেষে রাতে আগের ইজারাদার সিটি করপোরেশনের কাছে হাট বুঝিয়ে দিতে হয়। তিনি রোববার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাছে হাট হস্তান্তরের আবেদন করেন।
যদিও ঢাকা উত্তর সিটির এক কর্মকর্তা বিডিনিউজের কাছে দাবি করেন, ইজারাদার হাট বুঝিয়ে না দিয়ে চলে গেছেন। সে জন্য সোমবার রাতে শত শত লোক হাটে ঢুকে পড়ে এবং হাসিল আদায় শুরু করে।
এই কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তার কারণে তারা রাতে যেতে পারেননি।
তবে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ দাবি করেছেন, “পূ্র্বের ইজারাদার হাট না বুঝিয়ে দিয়ে ওদের মত করে চলে গেছে। তারপর আমাদের লোক দায়িত্ব নিয়েছে।”
তিনি বলেন, এখন যারা আছে তারা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের লোক, ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছে।
আবার কবে দরপত্র ডাকা হবে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “এ জন্য সময় লাগবে। সে পর্যন্ত আমরাই চালাবো।”
দরপত্রের প্রক্রিয়াগত ত্রুটির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশাসক বলেন, “নিয়মানুযায়ী হাট বাজারের ক্ষেত্রে কোটি টাকার উপর টেন্ডার হলে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউমেন্ট অথরিটির ওয়েব সাইটে তা দেওয়ার বিধান রয়েছে। সেটা মানা হয়নি।
“তাছাড়া আরো কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে।”
তবে সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউমেন্ট অথরিটির ওয়েব সাইটে না দেওয়ার বিষয়টি দরপত্র অংশ নেওয়া ইজারাদারদের দায়িত্ব নয়। এটা সিটি করোপরেশনের দায়িত্ব। তাছাড়া এটা ওই ওয়েবসাইটে দেওয়ার চর্চা সিটি কপোরেশনে কখনই ছিল বলে তার জানা নেই।
কয়টি দরপত্র জমা পড়েছিল?
এবার ১৪ কোটি ৬১লাখ ৭৯ হাজার ৩০০ টাকা ইজারা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, গত তিন বছরের ইজারার মূল্য গড় করে তার সঙ্গে ৬ শতাংশ বাড়িয়ে নতুন ইজারা মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
সর্বশেষ ১৪৩১ বাংলা সনে সর্বোচ্চ দরদাতা ১৭ কোটি ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে কার্যাদেশ পেয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, স্থায়ী হাট হলেও মূলত কোরবানির ঈদকে ঘিরে গাবতলী পশুর হাটের ইজারা মূল্য বেড়ে যায়। আসছে জুনের প্রথমার্ধে এবার কোরবানির ঈদ উদযাপন হবে।
এবার নির্ধারিত সময়ে পাঁচটি দরপত্র জমা পড়ে। সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছে আরাত মটরস। তার দর ছিল ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২১ কোটি ৬৫ লাখ ৭০ হাজার ৩০০ টাকার দর দিয়ে দ্বিতীয় হয়েছে এস এফ করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তৃতীয় হয়েছে রাইয়ান এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি ১৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দর দিয়েছিল। দি সিমেন্ট জয়েন্ট নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ১৪ কোটি ৬৩ লাখ দর দিয়ে চতুর্থ এবং ১৪ কোটি ৬২ লাখ দর দিয়ে পঞ্চম হয়েছে আবু বকর সিদ্দীক নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠান।
এর মধ্যে দি সিমেন্ট জয়েন্ট ও আবু বকর সিদ্দীক কোনো পে অর্ডার দেয়নি। ফলে তাদের বাদ দেওয়া হয়।
ডিএনসিসির এক কর্মকর্তার দাবি, যে প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় হয়েছে নিয়ম আনুযায়ী তার জমা দেওয়া পে অর্ডার যাচাই করে ‘ভুয়া’ পাওয়া গেছে। ফলে এ প্রতিষ্ঠানটিকেও বাদ হয়েছে।