চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
ঘরের মাঠে জিতলেও একরাশ হতাশাই সঙ্গী হলো প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটির।
Published : 16 Apr 2025, 03:00 AM
প্রথম লেগে পরাজিত অ্যাস্টন ভিলা ঘরের মাঠে প্রথম আধা ঘন্টায় হজম করল আরও দুই গোল। দুই লেগ মিলিয়ে ব্যবধান দাঁড়াল চার গোলের। এরপর, খাদের কিনারা থেকে কী দুর্দান্ত প্রতিরোধই না গড়ল তারা। বিরতির আগে-পরে মিলিয়ে তিনবার জালে বল পাঠিয়ে পিএসজির বুকে ধরাল কাঁপন। বাকি সময়েও প্রবল চাপ ধরে রাখল তারা; কিন্তু ব্যবধান পুরোপুরি পারল না মেটাতে। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হারলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালের টিকেট পেয়ে গেল প্যারিসের দলটি।
ভিলা পার্কে মঙ্গলবার শেষ আটের ফিরতি লেগে ৩-২ গোলে জিতেও হতাশা সঙ্গী হলো স্বাগতিকদের। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ ব্যবধানে এগিয়ে টুর্নামেন্টে টিকে রইল পিএসজি, প্রথম লেগে ৩-১ গোলে জিতেছিল তারা।
আশরাফ হাকিমি ও নুনো মেন্দেসের গোলে লড়াইয়ের লাগাম হাতে নেয় পিএসজি। এরপর একটু একটু লড়াইয়ে ফিরতে থাকে ভিলা। ইউরি টিয়েলেমান্স ব্যবধান কমানোর পর, দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে জন ম্যাকগিন ও কন্সার গোলে ফিকে হয়ে যাওয়া আশা জাগায় তারা। অনেকগুলো পরিষ্কার সুযোগ নষ্ট করে স্বপ্নটাকে যদিও সত্যি করতে পারেনি উনাই এমেরির ভিলা।
তার দল শুরু থেকেই ছিল মরিয়া, ম্যাচ শুরু হতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে আক্রমণে। প্রথম দুই মিনিটেই দুটি কর্নার আদায় করে নেয় তারা। তবে, একাদশ মিনিটে তাদের একটি আক্রমণ রুখে, গতিময় পাল্টা-আক্রমণে এগিয়ে যায় পিএসজি।
গোলটির পেছনে যথেষ্ট দায় আছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেসের। এগিয়ে যাবেন কিনা-এই ভাবনায় একটু যেন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন তিনি, ফলে স্লাইড করে বল ধরতে না পেরে উল্টো তুলে দেন প্রতিপক্ষের পায়ে। আর ছুটে এসে জোরাল শটে ঠিকানা খুঁজে নেন হাকিমি। বল মার্তিনেসের পায়ে লেগে জালে জড়ায়।
১৯তম মিনিটে লক্ষ্যে প্রথম শট নিতে পারে ভিলা। দুরূহ কোণ থেকে পাউ তরেসের সোজাসুজি শটটি ঠেকাতে অবশ্য বেগ পেতে হয়নি জানলুইজি দোন্নারুম্মার।
২৭তম মিনিটে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে ভিলা। উসমান দেম্বেলের পাস ডি-বক্সে ফাঁকায় পেয়ে নিচু শটে দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন ৫-১ করেন মেন্দেস।
পিএসজির দুর্ভাগ্যে ম্যাচের ঝিমিয়ে পড়া উত্তেজনা কিছুটা ফেরে ৩৪তম মিনিটে। বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে জোরাল শট নেন ইউরি টিয়েলেমান্স, বল উইলিয়ান পাচোর গায়ে লেগে পুরোপুরি দিক পাল্টে জালে জড়ায়, কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষক দোন্নারুম্মার।
দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও হতাশ করেন মার্কাস র্যাশফোর্ড। ছয় গজ বক্সের মুখে আলগা বল পেয়ে গোলরক্ষক বরাবর দুর্বল শট নেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড।
তবে, ওই হতাশার খানিক বাদেই দুই মিনিটে দুই গোল করে লড়াই জমিয়ে তোলে ভিলা।
৫৫তম মিনিটে অসাধারণ নৈপুণ্যে ম্যাচের স্কোরলাইন ২-২ করেন ম্যাকগিন। ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শটে গোলটি করেন স্কটিশ মিডফিল্ডার। এরপরই র্যাশফোর্ডের কাটব্যাক পেয়ে ইংলিশ ডিফেন্ডার কন্সা নিচু শটে পোস্ট ঘেঁষে দলকে ম্যাচে এগিয়ে নেন।
দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৪-৫। অবশ্য কন্সার গোলের আগে-পরে র্যাশফোর্ড ও টিয়েলেমান্সের দুটি প্রচেষ্টা দুর্দান্ত সেভ করে দলকে সেমি-ফাইনালের পথে রাখেন দোন্নারুম্মা।
৭০তম মিনিটে আবারও দোন্নারুম্মার নৈপুণ্যে রক্ষা পায় পিএসজি। চার মিনিট আগে বদলি নামা মার্কো আসেন্সিওর শট এগিয়ে গিয়ে পা দিয়ে কোনোমতে আটকান ইতালিয়ান গোলরক্ষক।
পরের কয়েক মিনিটে টানা কয়েকটি আক্রমণ করে পিএসজি। সুযোগও আসে, কিন্তু কাজের কাজ কিছু করতে পারেনি তারা। নির্ধারিত সময়ের এক মিনিট বাকি থাকতে দিজিয়ে দুয়ের শট রুখে দিয়ে দলকে লড়াইয়ে রাখেন মার্তিনেস।
শেষ পর্যন্ত যদিও বাকি এক গোলের ব্যবধান আর ঘোচাতে পারেনি ভিলা। যোগ করা তিন মিনিট সময়েও নিশ্চিত দুটি সুযোগ হারায় তারা, একেবারে শেষ মুহূর্তে ইয়ান মাটসেনের শট গোলমুখে প্রতিহত হলে হাফ ছাড়ে পিএসজি, আর হতাশায় ডাগআউটে শুয়ে পড়েন কোচ এমেরি।
টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নেওয়া পিএসজি এই ধাপে আর্সেনাল অথবা রেয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলবে।