দেশে আইনের শাসন আছে, এ রায় তারই প্রতিফলন: আইনমন্ত্রী

“রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর পুত্র যদি এ রকম দুর্নীতি করে, আমার তো মনে হয় অবশ্যই সেখানে সাজা দেওয়টাই উচিত, বলেন আইনমন্ত্রী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2023, 11:39 AM
Updated : 2 August 2023, 11:39 AM

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের সাজার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এই রায়ে আইনের শাসনেরই প্রতিফলন ঘটেছে। 

রায় ঘোষণার পর বুধবার সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এই মামলা দায়ের করা হয়। পরে হাই কোর্ট এবং আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেয়– এই মামলা চলবে। সেই আদেশে মামলার বিচারিক কাজ সম্পন্ন হয়। 

“আমি মনে করি এটা বাংলাদেশে যে আইনের শাসন আছে তারই একটা প্রতিফলন। এবং রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর পুত্র যদি এ রকম দুর্নীতি করে, আমার তো মনে হয় অবশ্যই সেখানে সাজা দেওয়টাই উচিত। 

“আদালত যে সাজা দিয়েছেন, আমি মনে করি দেশে আইনের শাসন আছে এবং আইনের শাসনে এই মামলায় বিচার করার দায়িত্ব আদালতের ছিল, সেই দায়িত্ব আদালত সম্পন্ন করেছে।” 

ঘোষিত আয়ের বাইরে সম্পদের মালিক হওয়ার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দুই ধারায় ৯ বছরের কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। 

খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেককে দুদক আইনের দুটি ধারায় ছয় ও তিন বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা না দিলে তাকে আরও ৩ মাস সাজা ভোগ করতে হবে।

আর জোবায়দাকে দুদক আইন ও দণ্ডবিধির দুই ধরায় ৩ বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৩৫ লাখ জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে তাকে আরও ১ মাস সাজা ভোগ করতে হবে।

সেই সঙ্গে তারেক-জোবায়দা দম্পতির অপ্রদর্শিত সম্পদ হিসেবে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে। 

এদিন রায়ের আগে ও পরে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা স্লোগান দেন- ‘ফয়মায়েশি রায় মানি না’। 

বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় তাদের নেতার বিরুদ্ধে সাজানো রায় হচ্ছে। 

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “মামলাটা দায়েরের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। তখন সেই তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাথে তাদেরই নিয়োগপ্রাপ্ত সেনা প্রধানের যথেষ্ট সখ্যতা ছিল, সেটা সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই। তারাই দুর্নীতির মামলা দায়ের করেছিল। তারা (বিএনপি) যদি বলেন ফরমায়েশি বলে, তাহলে আইন সম্পর্কে তাদের সম্যক জ্ঞান আছে কি না আমার সন্দেহ।” 

নির্বাচনের আগে এই রায় দিয়ে ‘জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে’ বলে দাবি করেছে বিএনপি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইনমন্ত্রী বলেন, “এখানে বিভ্রান্ত করার কি আছে? বিচারিক কাজ হয়েছে, রায় রেবিয়েছে। সাজা দেওয়াটা… আসামি তো আগে থেকেই সাজাপ্রাপ্ত। একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন পেয়েছেন, আরেকটি দুর্নীতির মামলায় হাই কোর্ট তাকে সাত বছর দণ্ডাদেশ দিয়েছেন। নতুন করে এটা দিয়ে উনার ভাবমূর্তি খারাপ করার তো আমাদের প্রচেষ্টার প্রয়োজন পড়ে না।” 

আসামিকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার উদ্যোগ সরকার নেবে কিনা, সেই প্রশ্নও করা হয়েছিল আনিসুল হককে। 

জবাবে তিনি বলেন, “সব সময়ই থাকবে। সেটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা (আসামিকে) ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অবশ্যই করব।” 

আন্দোলন দেখে তারেক-জোবায়দার মামলার ত্বরিত গতিতে এ মামলার রায় দেওয়ারও অভিযোগ করেছে বিএনপি। সে বিষয়ে এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “এক দিকে বলা হয় যে এখানে বিচার হয় না, কারণ সবকিছু অত্যন্ত স্লথ গতিতে চলে। আবার আরেকদিকে বলা হয় বিচার তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে।

Also Read: অবৈধ সম্পদের মামলায় তারেকের ৯, জোবায়দার ৩ বছর সাজা

Also Read: আন্দোলন দেখে তারেক-জোবায়দার মামলার রায় দিচ্ছে: ফখরুল

“প্রথম কথা হচ্ছে যে তর্কটা যৌক্তিক হওয়া ভালো। এখানে অযৌক্তিক তর্ক করে শুধু একটি… দোষী বা নির্দোষ এটা আদালতের ব্যাপার, আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। কথা হচ্ছে যে দোষ যখন করেছে তখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টাটা না করাই উচিত।” 

বিএনপিকে রাজনীতির মাঠ থেকে শেষ করে দিতেই এসব রায় দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে। এ নিয়ে এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “আপনারা দেখছেন, বিএনপি যখন রাজনীতি করছে তাদেরকে কেউ বাধাগ্রস্ত করছে না। আইনের শাসনের জন্য তাদের অপরাধের বিচার করাটা আমার মনে হয় না তাদেরকে রাজনীতি থেকে বিতিাড়িত করার পরিকল্পনা।”