রায় যাই হোক না কেন, বিএনপি আন্দোলন থেকে সরবে না বলে জানালেন দলটির মহাসচিব।
Published : 01 Aug 2023, 06:40 PM
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়েদা রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার গতির সঙ্গে চলমান আন্দোলনের যোগসূত্র দেখছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “নিশ্চয়ই লক্ষ্য করবেন, যখনই তারেক রহমান সাহেব অ্যাকটিভ হয়েছেন, দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই অতি দ্রুততার সঙ্গে এই মামলাকে সামনে নিয়ে এসে পরিকল্পিতভাবে তাকে সাজা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। মাত্র ১৬ দিনে ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে এই মামলা শেষ করা হচ্ছে।”
ঢাকার আদালতে মামলাটির রায়ের জন্য নির্ধারিত তারিখের আগের দিন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে এই প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি মহাসচিব।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক ও তার স্ত্রী বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এই মামলাটি হয় ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। তখন তারেক গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
২০০৮ সালে তারেক জামিনে মুক্তি পেয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান চিকিৎসার জন্য। এরপর তিনি আর দেশে ফেরেননি। প্রবাসে থেকেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি, মা কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ নেন তিনি।
তারেক বিদেশে থাকা অবস্থায়ই দেশে এই পর্যন্ত চারটি মামলায় তার বিরুদ্ধে সাজার রায় এসেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে দুই বছর, অর্থ পাচারের দায়ে সাত বছর, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং একুশে অগাস্টের গ্রেনেড মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় তার।
বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় তাদের নেতার বিরুদ্ধে সাজানো রায় হচ্ছে। তবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে বিচার বিভাগ স্বাধীন এবং আদালতের উপর নির্বাহী বিভাগের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
নতুন মামলার রায়ের আগেও একই বক্তব্য আসে ফখরুলের; তিনি বলেন, “দেশের লক্ষ লক্ষ মামলার জট থাকলেও তাদের (তারেক-জোবায়দা) এই মামলায় অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ১৬ দিনে ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের আইনজীবীরা এই ধরনের বিচারকাজের বৈধতার বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে গেলে তাদের উপর পুলিশ ও সরকার দলীয় আইনজীবীরা একাধিকবার হামলা চালিয়েছে, তাদেরকে আদালত কক্ষে থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিচারের ক্যামেরা ট্রায়াল চালানো হয়েছে।
“আমরা আশঙ্কা করছি, সরকারের নীল-নকশায় পরিচালিত এই তথাকথিত বিচার প্রক্রিয়ায় জনাব তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়েদা রহমানকে ফরমায়েসি রায়ের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা হতে পারে। অতীতে বেগম খালেদা জিয়াসহ আমাদের অনেক নেতাকে ফরমায়েসী রায়ের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাদেরকে ফরমায়েসী রায়ের মাধ্যমে সাজা দেওয়ার এই চক্রান্ত করা হয়েছে।”
আয়বহির্ভূত সম্পদ: তারেক-জোবায়দার রায় ২ অগাস্ট
আয়বহির্ভূত সম্পদ: যে সাজা হতে পারে তারেক-জোবায়দার
ফখরুল বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত করা হয়েছে। আবার নতুন করে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
“মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমানসহ সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতাদের রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া। ইতিমধ্যে আমাদের দুজন সিনিয়র নেতাকে, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে।”
মামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে ফখরুল বলেন, “কারণ জনাব তারেক রহমানের সম্পদ বিবরণী ২০০৭ সালে জমা দেওয়া হয়েছিলো, পুরোপুরিভাবে আয়কর জমা দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি ডা. জোবায়েদা রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ হচ্ছে যে, ৩৫ লক্ষ টাকার এফডিআর, এই এফডিআর মামলা দায়েরের আগেই ২০০৫-০৪ অর্থ বছরে ট্যাক্স রিটার্ন দেওয়া হয়েছিল।”
‘বিরোধী দল দমন কমিশন’
দুর্নীতি দমন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশন শুধু সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানই নয়, বিরোধী দল দমন কমিশনে পরিণত হয়েছে। আমরা সর্বক্ষেত্রে বিচারের নামে প্রহসন প্রত্যক্ষ করছি।
“ইতিপূর্বে আমাদের দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। তাকে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কারা অন্তরীন এবং এখন গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে।”
বিরোধী দলকে দমনে সরকার মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “বিগত ১৪ বছরে সারাদেশে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। শত শত নেতা-কর্মীকে সাজা দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরার সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ৭০ বছর সাজা দেওয়া হয়ে্ছে। মিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
“শুধু এটা নয়, তালিকা করা হয়েছে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মামলাগুলো অতি দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রজেক্টটা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনের আগেই বিএনপির বা বিরোধী দলের নেতারা যারা নির্বাচন করেন, তাদেরকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া আর একই সঙ্গে মূল নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলা।”
‘রায়ের প্রভাব আন্দোলনে পড়বে না’
তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে রায় যাই হোক না কেন, তাতে বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন থেকে সরবে না বলে জানান ফখরুল।
“এটা(সাজা) আন্দোলনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। এজন্য প্রভাব ফেলবে না যে, মানুষ বুঝে গেছে এই সমস্ত রায়-টায় দিয়ে কোনো লাভ হবে না।”
ফখরুল বলেন, “এরা এখন ছায়া (জিয়া পরিবার) দেখলেও ভয় পায়। এখানে ডা. জোবায়েদা রহমানের নামের পেছনে রহমান, যেহেতু তারেক রহমানে স্ত্রী, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্রবধু… সুতরাং তাকেও কী করে দূরে রাখা যায় রাজনীতির সম্ভাবনা থেকে ,সেটাও ওদের এই প্রক্রিয়ার অংশ।”
জোবায়দার রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা দেখি না। এটা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সব মিলিয়ে একটা জিঘাংসা কাজ করছে এ্খানে।”
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, কায়সার কামাল ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন।