সংসদে ভূমিকা কী হবে, এই প্রশ্নে ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য বলেন, “একজন স্বতন্ত্র এমপি হিসাবে নিশ্চয় আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরব। ভালো পরামর্শ সরকারকে দেব, যদি কোনো ভুল করে আমি কণ্ঠ উচ্চকিত করব।”
Published : 28 Jan 2024, 04:39 PM
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হলে সংসদে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকত না। তবে ক্ষমতাসীন দলের যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জিতে এসেছেন, তাদের সে বাধা নেই। আইনসভার সদস্য হিসেবে সেই সুযোগ প্রয়োজনে কাজে লাগাতে চান এ কে আজাদ।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত এই স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য বলছেন, সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করার পাশাপাশি ভুল দিক তুলে ধরার কাজটি তিনি করতে চান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠান ইনসাইড আউটে অংশ নিয়ে এ কে আজাদ বলেন, “বিরোধী দল সাধারণত সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও ভালো কাজের স্বীকৃতি দেয় না, তারা সবক্ষেত্রে সমালোচনা করে।
“কিন্তু আমার ও স্বতন্ত্র বিজয়ীদের ভূমিকা হবে, সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করা এবং আমরা নিশ্চয় তা করব। তবে (সরকারের) কোনো ভুল হলে এবং তাদের কী করা উচিত, তারা ইশতেহারে যেটার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাস্তবায়নের বিষয়ে, আমরা নিশ্চয় সেগুলো অনুসরণ করব।”
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আজাদ ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া উন্মুক্ত করে দিলে তিনি নৌকার প্রার্থী শামীম হকের বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে নামেন।
আজাদের মতো আরো ৫৮ জন আওয়ামী লীগ নেতা এই সুযোগে সংসদে এসেছেন, যাদের মধ্যে ৪৫ জনের মতো নৌকার প্রার্থীদের হারিয়েছেন।
৭ জানুয়ারির ভোটের ফলাফল এ কে আজাদের জন্য ছিল তৃপ্তিদায়ক, যিনি বহু বছর ধরে নৌকা প্রতীকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং ফরিদপুর সদর আসনে ভোটে লড়াইয়ে আগ্রহী ছিলেন।
ফরিদপুর-৩ আসনে শামীম হকের নৌকায় ভোট পড়েছে ৭৫ হাজার ৮৯ টি, ঈগল প্রতীকের আজাদকে সমর্থক করেছেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮ জন ভোটার।
এক ঝাঁক স্বতন্ত্র প্রার্থীর জিতে আসার ভিড়ে এই নির্বাচনে তীব্রভাবে হতাশ জাতীয় পার্টি, যাদের ১১ জন প্রার্থী জয় পেয়ে সংসদে আসতে পেরেছিলেন, যদিও ২৬টি আসনে দলটিকে ছাড় দিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তুলে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
এত কম আসন নিয়ে জাতীয় পার্টি আবারও বিরোধী দল বসবে নাকি স্বতন্ত্র এক জোট হয়ে তাদের জায়গা দখলে নেবে, এমন প্রশ্নও উঠেছে।
বিরোধী দল কারা হবে, এমন আলোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জিতে আসা সংসদ সদস্যদের আলোচনার জন্য ডেকেছেন।
সেই বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে ইনসাইড আউটে অংশ নিয়ে এ কে আজাদ সংসদ সদস্য হিসেবে তার ভূমিকা, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি, সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।
রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হয়।
বিরোধী দলে থাকছে না স্বতন্ত্ররা, ‘বাড়তি সুবিধার’ সুযোগও নেবেন
সংসদে স্বতন্ত্রদের ভূমিকা কী হবে, এমন প্রশ্নে নিজেকে ‘আওয়ামী লীগার’ হিসাবে পরিচয় দেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ।
একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবারও সেই ভূমিকায় থাকছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মূলত বিরোধী দল ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। সরকারও তাদেরকে বিরোধী দল হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।”
তবে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হওয়ায় সংসদে সরকারি দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে পিছপা হবেন না বলেও জানান এ কে আজাদ।
তিনি বলেন, “স্বতন্ত্র হিসাবে আমরা বলতে পারি, সরকারের কী করা উচিত, জটিলতা কোথায়, আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছে তা কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে।
“তারা (আওয়ামী লীগ) বলেছে, দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহিষ্ণুতা দেখাবে। সব ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। আরেকটি হচ্ছে আর্থিক স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জ্বালানি, পরিবেশের বিষয়ও রয়েছে।
“একজন স্বতন্ত্র এমপি হিসাবে নিশ্চয় আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরব। ভালো পরামর্শ সরকারকে দেব, যদি কোনো ভুল করে আমি কণ্ঠ উচ্চকিত করব।”
এ কে আজাদ বলেন, “আমি যদি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী হতাম, তাহলে আওয়ামী লীগের বা সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারতাম না। তবে, এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ক্ষমতাসীন দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমি সেটা দিতে পারব। আমার সেই সুযোগ ও বিকল্প রয়েছে।”
স্বতন্ত্ররা কি জোট গড়বেন?
বিএনপির বর্জনে দশম সংসদ নির্বাচনে জয় পাওয়া স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো এবারও সংসদে জোট হবে কি না, সেই প্রশ্ন ছিল এ কে আজাদের কাছে।
এই প্রশ্নে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে মত ভিন্নতা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কেউ আওয়ামী লীগে যেতে চায়, কেউ কেউ স্বতন্ত্র হিসাবে কাজ করতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর মত পাওয়া পর্যন্ত এখনো পাকা কোনো সিদ্ধান্ত তারা নেয়নি।
জোট করার আলোচনা হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখনো হয়নি।”
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে কী বার্তা দেবেন, এমন প্রশ্নে এ কে আজাদ বলেন, “প্রথম বার্তা হবে, আমি তাকে অভিনন্দন জানাব প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায়।
“দ্বিতীয়ত, তিনি একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়েছেন, সে কারণে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে জয়ী হতে পেরেছি, সেই কৃতিত্ব আমি তাকে দেব।”
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোট করলে সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে ১০টি তারা পাবে। এই বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এ কে আজাদ আবার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের মত বিনিময়ের কথা। জানিয়েছেন, অনেক আগ্রহী নারী যোগাযোগ করছেন, তবে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মত বিনিময়ের পর এ নিয়ে আগাবেন।
আওয়ামী লীগের কৌশল তৃণমূল ‘বিভক্তি বাড়াবে’
বিএনপির বর্জনের ভোট জমিয়ে তুলতে আওয়ামী লীগ নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়াতে দলের নেতাদেরকে বাধা না দেওয়ার যে নীতি নিয়েছে, তা দলের বিভক্ত বাড়াবে কি না, এই প্রশ্নে আজাদ বলেন, “হ্যাঁ, দলের তৃণমূলে বিভক্তি বাড়াবে।
তার নিজের নির্বাচনি এলাকা কেবল না, গোটা ফরিদপুর জেলাতেই দলে বিভেদ আরো চাঙা হয়েছে বলে মনে করছেন জেলা কমিটির উপদেষ্টা আজাদ।
তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগেই বিভক্তি ছিল দুই নেতার মধ্যে। শামীম হক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষের। আমি বিপুল ঘোষ গ্রুপে রয়েছি, সেখান থেকে আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি।”
ফরিদপুরে চারটি আসনের দুটিতে স্বতন্ত্রের জয় এবং আরো দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠে আসার পরিপ্রেক্ষিতে এ কে আজাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ ভুল করেছে কি না।
জবাবে তিনি নিজের আসনের কথা উল্লেখ করে বলেন, “প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধান প্রমাণ করছে, শামীম হক ‘যথাযথ ব্যক্তি ছিলেন না।
“ভোটের পার্থক্য দেখে নেতারা নিশ্চয় বুঝবেন, তারা কাকে মনোনয়ন দিয়েছে এবং স্বতন্ত্র হিসাবে কেন আমি এত ভোট পেয়েছি। আমি মনে করি, ভবিষ্যতে তারা নিজেদেরকে শোধরাবে।”
ফরিদপুর-৪ আসনে পর পর তিনবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়ের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
আওয়ামী লীগের তৃণমূলের বিরোধ মেটাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়ার উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসাবেও দেখছেন আজাদ। তবে তিনি বলেছেন, “বিরোধ একরাতে চলে যাবে না।”
‘আওয়ামী লীগের ইচ্ছার বাইরে স্বতন্ত্র নয়’
এ কে আজাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আগামী নির্বাচনে বিএনপি এলে যদি আওয়ামী লীগ মনোনয়ন না দেয়, তাহলে আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কি না।
জবাবে তিনি সরাসরি ‘না’ বলে দেন।
আজাদের বক্তব্য ছিল, “আমি সবসময় আমার দলের কথা শুনি। আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি না। এবার দল আমাদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দিয়েছে, সে কারণে আমি আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি।
“কিন্তু ভবিষ্যতে যদি এমন সিদ্ধান্ত না থাকে এবং আমাকে মনোনয়ন না দেয়, তাহলে আমি দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না।”
ব্যবসা নিয়ে এত ব্যস্ততার মধ্যে নির্বাচনে আগ্রহী কেন কেন?
এ কে আজাদ দেশের পোশাক শিল্প খাতের সবচেয়ে বড় উদ্যোক্তাদের একজন। পাশাপাশি ব্যাংক, বীমা, গণমাধ্যমসহ নানা ব্যবসায় সময় দিতে হয় তাকে।
এত ব্যস্ততার মধ্যে নির্বাচনে কেন আগ্রহ- আর সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন কঠিন হয়ে যাবে কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমার ব্যবসা ও অন্যান্য সব কিছু ঠিকঠাক। আমার সন্তানরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, তারা ব্যবসা চালাচ্ছে।
“আমার এলাকার মানুষ আমাকে খুব পছন্দ করে। তারা আমার মত প্রার্থী চায়, এ কারণে তারা খুব আবেগ নিয়ে আমার জন্য কাজ করেছে। তারা চেয়েছে আমি যেন তাদেরকে ভালোভাবে সেবা দেই।”
এলাকাবাসীর জন্য আসলে কী করতে চান- এই প্রশ্নে তিনি আগে থেকেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুদান, শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া, স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরেন।
“এসব করার কারণে মানুষ ভাবে, যদি আমি তাদের এমপি হয়ে আসতে পারি তাহলে কর্মসংস্থান ও সামাজিক কাজে আমি আরও ভালো কিছু করতে পারব,” বলেন এ কে আজাদ।
আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য কমানো এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সরকার ও প্রশাসনের চাঁদাবাজি দূর করার উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
পোশাক খাত কেন পশ্চিমা চাপে
এক প্রশ্নে শ্রম অধিকার নিয়ে পশ্চিমাদের কঠোর অবস্থানের মধ্যে উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা জানিয়েছেন এই খাতের অন্যতম শীর্ষ এই ব্যবসায়ী।
শ্রম অধিকার হরণসহ নানা কারণে নিষেধাজ্ঞার যে কথা বলা হচ্ছে, সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা নিশ্চিতভাবে উদ্বিগ্ন। কেননা, শ্রমসহ অনেক বিষয় তারা তুলে ধরছে। এবং তারা কী জানতে চাচ্ছে এবং তারা কেন শ্রম ইস্যু আরোপ করতে চায়, আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি। আমরা পরামর্শও চাচ্ছি যে, কীভাবে আমরা উন্নতি করতে পারি।”
করোনাভাইরাস মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে পোশাক রপ্তানিতে প্রভাব পড়ার কথা তুলে ধরে আজাদ বলেন, “পুরো পৃথিবী অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করছে, পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
“মধ্যবিত্ত কষ্টের মধ্যে আছে, তারা আগের তুলনায় কম কিনছে। খাদ্য ও জরুরি পণ্যের উপর তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছে, কাপড়চোপড়ের দিকে কম গুরুত্ব দিচ্ছে। সে কারণে আমাদের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য নয়। ২০২২ সালে আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২৩ শতাংশ। এই বছর তা ২ শতাংশের কিছু বেশি, এটা খুবই নামমাত্র।”
অর্থনীতিতে সংকট বহুমুখী
অন্য এক প্রশ্নে এ কে আজাদ বলেন, “মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমছে, বেসরকারি খাতের অর্থের প্রবাহ কম ও ঋণ কমছে, আর সরকারি ঋণ বাড়ছে। ফলে আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি।
“জ্বালানি সংকটও আছে। ৬০ শতাংশ গ্যাস আমরা আমাদের মজুদ থেকে খরচ করছি, ৪০ শতাংশ আমদানি করছি। অনেক খরচ জড়িত এখানে।”
বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার কথা তুলে ধরে এ কে আজাদ বলেন, “আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো হয়েছে। তবুও ডলার সংকট চলছে। আমরা গ্যাস আমদানি করছি ডলার খরচ করে। আরেকটা সহায়তা আমরা পাচ্ছি প্রবাসী আয় থেকে। রপ্তানি থেকে মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার, প্রবাসী আয় থেকে ২ বিলিয়ন ডলার পাচ্ছি, এখনো ২ বিলিয়ন ডলার কম আছে।”
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী বোঝেন সমস্যা কোথায়, কী ঘটছে? তিনি যদি আর্থিক শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারেন, মন্ত্রণালয় ও সব বিভাগের, তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবে এই সমস্যা মোকাবেলা করতে পারব।”
দুয়েক বছরের মধ্যে এই পরিস্থিতি উৎরানো সম্ভব কি-না, এমন প্রশ্নে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এই সভাপতি বলেন, “সরকার কীভাবে চলে তারা উপর এটা নির্ভর করবে। সরকার যদি আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে দুই বছরের মধ্যে আমরা এটা পার করতে পারব।”
ডলার সংকটের বিষয়ে এক প্রশ্নে বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, “অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মত হচ্ছে, বাজারকে উন্মুক্ত করে দেওয়া। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করছে।
“এটা যদি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, তাহলে হঠাৎ করে বাড়বে, তবে স্থিতিশীলতা আসবে। কিন্তু সরকার ভাবছে, মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে যাবে, এ কারণে সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে। দুই ধরনের বক্তব্য আছে, একটি হচ্ছে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ও আইএমএফের এবং অন্যটি সরকার অন্যভাবে ভাবছে।”
ব্যাংকে এত খেলাপি ঋণ কেন?
বেসরকারি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের এই উদ্যোক্তার কাছে প্রশ্ন ছিল ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চেয়ে।
জবাবে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক আরও শক্তিশালী করা, লোকবল ও কর্তৃত্ব বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “সরকারি ব্যাংকের উপর তাদের তেমন কর্তৃত্ব তাদের নেই। বেসরকারি ব্যাংক তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সরকারি ব্যাংক পারে না।
“একটি ব্যাংকে যখন খেলাপি হয়, তা অন্য ব্যাংকেও প্রতিফলিত হয়। কিছু ব্যাংকের পরিচালকরা একে অপরকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে থাকে, যেটা পরে পরিশোধ করা হয় না। এটা বেসরকারি ব্যাংকেও হয়। ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকও ভুগছে।”
খেলাপি ঋণ রোধে ঋণ প্রস্তাব পাসের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, কারা বোর্ড সভায় বসেছে, কারা ঋণ দিয়েছে, টাকা কেন চলে গেছে, সব কিছু একটা চেইনের মধ্যে রয়েছে। এই চেইনে আপনি যদি তদন্ত করেন তাহলে এটা বেরিয়ে আসবে।”
আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের চেয়ে হুন্ডিতে বেশি অর্থপাচার হচ্ছে মন্তব্য করে এ কে আজাদ বলেন, “পি কে হালদার অনেক টাকা নিয়ে গেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায়। আমি মনে করি, আন্ডার ইনভয়েসিং নয়, হুন্ডি হচ্ছে বড় খাত যেটার মাধ্যমে টাকা বাইরে যাচ্ছে।”
নিজে অর্থমন্ত্রী হলে কী করতেন, এই প্রশ্নে তিনি ঋণ অনুমোদন এবং ব্যয়ের দিক তদারকি করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে বলেন, “চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নিয়োগ দেব, তাদের মাধ্যমে দেখব কোন প্রক্রিয়ায় ঋণ দেওয়া হয়েছে। সেটা ঠিক জায়গায় খরচ করা হয়েছে কি-না, না করলে কেন করা হয়নি- সেটা দেখব।
“এরপর মন্ত্রিসভার মাধ্যমে তাদেরকে দুর্নীতি দমন কমিশন বা অন্যদের জবাবদিহির আওতায় আনব।”
বিদেশি বিনিয়োগে পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও আর্থিক সমস্যার পাশাপাশি জ্বালানি সংকটকেও কারণ হিসাবে মনে করছেন এ কে আজাদ।
তিনি বলেন, “বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য দেশীয় বিনিয়োগের পরিবেশ ভালো করা প্রয়োজন। দেশের পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ দেখেই তবে বিনিয়োগ করেন বিদেশিরা। প্রধানমন্ত্রী যেসব পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন, তা বাস্তবায়ন হলে আগামী দুই বছরে বাংলাদেশে ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হবে।”
আরও পড়ুন:
স্বতন্ত্রদের বিরোধী দল, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই: এ কে আজাদ
আগামীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা কঠিন হবে: মেনন
‘হিংসাত্মক রাজনীতির’ সমাধান সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে: তোফায়েল আহমেদ