বৃষ্টি নিয়ে কিছুটা আশার বার্তা থাকছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে; সন্ধ্যার পর বৃষ্টি নামতে পারে ঢাকাসহ চার বিভাগে।
Published : 18 Apr 2023, 06:22 PM
চৈত্রের শেষ দিন থেকে তাপমাত্রা চড়তে থাকার রেকর্ড ভাঙ্গার যে প্রবণতা শুরু হয়েছিল তা থেমেছে; তবে গরমের অস্বস্তি কমেনি।
মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে রাজশাহীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার ঈশ্বরদীতে যা ছিল দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিন পারদ এক ডিগ্রি নেমে এলেও এবং আগের রাতে সিলেটে বৃষ্টি হলেও গরমের অস্বস্তি কমার সম্ভাবনার দেখা নেই আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে। তবে এদিনও বৃষ্টি নিয়ে আশার বার্তা থাকছে; সন্ধ্যার পর বৃষ্টি নামতে পারে ঢাকাসহ চার বিভাগে।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে রাজশাহীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।"
বৃষ্টির আভাস দিয়ে তিনি বলেন, "সন্ধ্যার পর থেকে আগামী ২৪ ঘন্টার পূর্বাভাসে ঢাকাসহ চারটি বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বিভাগগুলো হচ্ছে- ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট।"
সোমবার পাবনার ঈশ্বরদীতে এ মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করার দুদিন আগে শনিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আর এর আগের দিন রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। তারও আগে ১৯৯৫ সালে এবং ২০০২ সালে দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল সোমবারের সমান, ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দেশের ইতিহাসে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, দেশে আবহাওয়ার রেকর্ড রাখা শুরুর পর এটাই সর্বোচ্চ।
এদিকে মঙ্গলবারের মত রাজধানীতে সোমবারও তাপমাত্রা সামান্য কমেছিল, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আগের দিন রোববার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ১৯৬৫ সালে এপ্রিল মাসে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর ১৯৬০ সালে ঢাকায় পারদ উঠেছিল রেকর্ড ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
‘বৃষ্টি হলে শান্তি লাগতো’
আগের দিনের চেয়ে ঢাকায় থার্মোমিটারে পারদ নেমেছে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাথার ওপর সূর্য্যের খাড়া অবস্থানের কারণে দিনের বড় অংশ আগের কয়েক দিনের মতই তপ্ত ছিল; গরমের অনুভূতি ছিল অস্বস্তিকর।
দেশের অন্যান্য স্থানেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় কিছুটা হেরফের হলেও উত্তাপ কমেনি। প্রখর তাপে ঘরে বাইরে মানুষের ভোগান্তি ছিল আগের কয়েক দিনের মতই।
ঢাকার সড়কে অঝোরে ঘামতে থাকা রিকশাচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, "গরমের তাপের কথা কইয়া লাভ নাই মামা। আজকেও গরম লাগতাছে অনেক। সন্ধ্যার পরও গরম লাগে। তাপ লাগলেও আর কী করন যাইব, কাম তো করন লাগবো।"
মিরপুরের কাজীপাড়া এলাকায় গাড়িচালক মো. তারেক বলেন, "তাপমাত্রা আজকে একটু কম লাগতেছে। কিন্তু শান্তি লাগতেছে না। অস্বস্তি একটু আছেই। বৃষ্টি আসলে হয়তো একটু শান্তি লাগতো।"
কালশী এলাকার দোকানি ইউসুফ মিয়া বলেন, "তাপ তো পড়েই গরমের টাইমে। এইবার সহ্যের বাইরে। ব্যবসা-বাণিজ্য মাটি।"
তাপমাত্রা কমলেও অস্বস্তি না কমার ব্যাখ্যা দিয়ে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, "তাপমাত্রা কমেছে ঠিকই কিন্তু একইসাথে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেড়েছে। জলীয় বাষ্প বাড়লে আর্দ্রতা বাড়ে। আর্দ্রতা বাড়লে অস্বস্তি বাড়ে।"
জনদুর্ভোগের জন্ম দেওয়া টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে এখন মানুষ প্রতীক্ষায় আছে বৃষ্টির। সোমবার রাতে সিলেটের বৃষ্টি অনেককেই আশ্বান্বিত করছে এ দফার তাপদাহে আর খুব বেশি হয়ত ভুগতে হবে না। দখিনা হাওয়া বইতে শুরু করার মধ্যে আবহাওয়া অফিসও দেশের কয়েক জায়গায় বৃষ্টির আভাস দিয়েছে।
আর দেশজুড়ে ঈদের আগে ও পরে দেখা মিলতে পারে ঝড়-বৃষ্টির এমন পূর্বাভাস আরও আগের।
আরও পড়ুন
উত্তাপে চুয়াডাঙ্গাকে ছাড়াল রাজশাহী, আরও গরম ঈশ্বরদী
দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ঈশ্বরদীতে
তাপপ্রবাহ: বৃষ্টি হলেও থাকবে অস্বস্তিকর গরম
বৃষ্টি নামল সিলেটে, স্বস্তি মিলল