পানিশূন্যতা পূরণে তরল খাবার বেশি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
Published : 10 Apr 2023, 12:09 AM
“যেই গরম, শইল মনে অয় পুইড়া যায়। আইজকা দিনের বেলা আর ভিক্ষা করতে বাইর হই নাই। সারাদিন টিএনটি মাঠের কোণায় গাছতলায় বইয়া আছিলাম। ইফতারির পরে বাইর হইছি।”
তীব্র তাপদাহে রোববার ভিক্ষা করা হয়নি শারীরিক প্রতিবন্ধী মুনতাজ আলীর। তার মতো দিনজুড়ে তীব্র তাপদাহে নাকাল হয়েছে রাজধানীবাসী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাইয়ান কবীর ঐশীর কাছে এই গরমকে মনে হয়েছে ‘আগুন’।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ঐশী বলেন, “দিনের বেলা রুমে বসে থেকেই মনে হচ্ছিল- গরমে মাথাটা ঘুরতেছে। ফ্যানের বাতাসে কিছু হয় না। বালিশ-বিছানা সবকিছু গরম। এই গরমে রোজা রেখে প্রচুর ডিহাইড্রেশন হচ্ছে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গ্রীষ্মের আগে তাপদাহ যেমন বেড়েছে, তেমনই আওতাও বেড়েছে। রোববার দেশের পাঁচ বিভাগ ও এক জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল নওগাঁর বদলগাছীতে, ১৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।এ দিন ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বনিম্ন ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে।
চলতি সপ্তাহে বৃষ্টিরও কোনো আভাস পায়নি আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন যে মৌসুম- তাতে গরম বেশি অনুভূত হবে এটা স্বাভাবিক, তবে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হওয়ার কথা। কালবৈশাখী যেটাকে বলে।
“সেটা হচ্ছে না, কারণ দখিনা বাতাস নেই। কিন্তু চলতি সপ্তাহে এর কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে এই বাড়তি যে তাপমাত্রা, সেটা অব্যাহত থাকবে এবং সামনে বাড়তে থাকবে।”
তাপদাহে নাকাল ঢাকাবাসী
চলমান তাপদাহে দিনজুড়ে হাঁসফাঁস করছে ঢাকাবাসী। কর্মব্যস্ততার পাশাপাশি ঈদের আগমুহূর্তে কেনাকাটায় বের হওয়া মানুষকে গরমে নাকাল হতে দেখা গেছে। গন্তব্যে যেতে যানজটে আটকে ভ্যাপসা গরমে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়েছে।
একটি খাবার প্রতিষ্ঠানের বিপণন বিভাগে কাজ করেন পেয়ার হাসান রাব্বি। গুলশান থেকে পান্থপথ হয়ে গ্রিন রোডে যাত্রা করে গরমে দুর্ভোগে পড়েছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, “ঢাকার রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম। এর মাঝে তীব্র গরম। এই গরমের মধ্যে আমাকে হাঁটতে হয়েছে অনেক। শেষ পর্যন্ত জ্যাম এড়াতে হাতিরঝিলে নৌকায় উঠেছি কারওয়ান বাজার যাব। সেখানে পানির তাপ কতটা বোঝা যাচ্ছিল। মূত্রের রং দেখে বুঝেছি কতটা পানিশূন্যতায় ভুগেছি।”
গরমের অস্বস্তি কাটাতে দিনে একাধিকবার গোসল করার কথা জানালেন মহাখালীর একটি বাণিজ্যিক ভবনের নিরাপত্তা কর্মী এমদাদুল হক।
তার কথায়, “অতিরিক্ত গরম, দুইবার গোসল করলাম। তাছাড়া রোজা রাইখা কুলানি যাইবো না। কিচ্ছু করার নাই।”
ভরদুপুরে গরমের আঁচ টের পাওয়ার কথা বলতে গিয়ে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী এম টি মনির বললেন, “যে তাপ পড়ছে, রুমে বইসা সেটা টের পাইছি। সকালে বের হইছি। তখন এত লাগে নাই। দুপুরে রুমে গিয়ে জানালার পাশে গেলাম, মনে হলো বাইরে আগুন লাগছে। জানালা খুলে দেখলাম- আগুন না, গরমে এই অবস্থা।”
নিউ মার্কেটে ঈদের কেনাকাটায় আট বছরের মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন সুহানি সিদ্দিকী। দুর্ভোগের কথা বলতে গিয়ে তিনি বললেন, “ভীষণ কষ্ট হয়েছে। প্রচণ্ড পানিশূন্যতায় ভুগেছি। আমার বাচ্চাটার অনেক কষ্ট হয়েছে। এমন হবে জানলে বাচ্চাটাকে নিয়ে যেতাম না। তীব্র গরমে অনেকবার যেসব দোকানে এসি আছে, সেখানে গিয়ে ঠান্ডা হয়েছি।”
সুহানির মতো অনেককেই এ দিন নিউমার্কেট, মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত দোকানগুলোতে একটু থিতু হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন।
সাবধানী হওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের
রোজার মাসে চলমান তাপদাহে সাবধানী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সেহেরি ও ইফতারে লবণমিশ্রিত পানি বা স্যালাইন খেতে বলছেন।
তারা বলছেন, এই গরমে অনেক ধরনের মৌসুমী স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। সবাইকে রোদ এড়িয়ে সাবধানে চলা উচিত।
ঈদের কেনাকাটায় শিশুদেরকে সঙ্গে না নিতেও পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পংকজ কান্তি দত্ত বলেন, “গরমের সমস্যা বহুমুখী। যারা বাইরে শ্রমজীবী, তারা অতিরিক্ত ঘাম হয়ে পানিশূন্যতায় ভুগবেন। একপর্যায়ে ঘাম বন্ধ হয়ে হিট স্ট্রোক হতে পারে। আবার এই গরমে পানিশূন্যতা কাটাতে রাস্তার ধারের অনেক জায়গা থেকে শরবত, আখের রস ইত্যাদি খান। এতে পানিবাহিত নানা রোগ হতে পারে।
"সবাইকে বেশি বেশি স্যালাইন বা লবণসমৃদ্ধ পানি খেতে হবে। শুধু পানি খেলেও পানিশূন্যতা পুরো কমবে না; কারণ, লবণের ঘাটতি হবে। পানিশূন্যতা পূরণে তরল খাবেন মানুষ, তবে দেখতে হবে সেটা নিরাপদ কি না।"