চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে; ঢাকায় ছিল ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
Published : 13 Apr 2023, 07:41 PM
সপ্তাহ ধরে টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে চৈত্রের শেষ দিন চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এ মৌসুমের সর্বোচ্চ।
আর রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বৃহস্পতিবার।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, রংপুর বিভাগ ছাড়া দেশের বাকি সব বিভাগে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে; কোথাও কোথাও তা তীব্র মাত্রা পেয়েছে।
রোজার মধ্যে চলমান তাপপ্রবাহে সারাদেশে মানুষের নাভিঃশ্বাস উঠেছে। আরও অন্তত দুদিন তাপমাত্রা সামান্য বাড়ার প্রবণতা থাকবে বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ।
শুক্রবার পহেলা বৈশাখে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেবে বাংলাদেশ। গ্রীষ্মের প্রথম দিন কালবৈশাখী বা বজ্রবৃষ্টির আভাস নেই। ফলে নববর্ষে আরও একটি উষ্ণ দিনের আভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ওমর ফারুক বলেন, “আজ মৌসুমের উষ্ণতম দিন যাচ্ছে। কালও মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ থাকবে।”
থার্মোমিটারের পারদ যদি ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে, আবহাওয়াবিদরা তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলেন। উষ্ণতা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়।
২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০১৪ সালে ৪২ ডিগ্রি এবং ২০২১ সালে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল যশোরে।
১৯৪৯ সালে দেশে তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা শুরু হয়। এরপর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ছিল পাঁচ দশকে সর্বোচ্চ। তার আগে ২০০৯ সালের ২৭ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল পারদ। আর ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয় ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৬০ সালে ঢাকায় তাপমাত্রা উঠেছিল রেকর্ড ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা এবং সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, “এপ্রিলে তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা থাকেই। গেল ক’বছরেও এ সময় তাপপ্রবাহ বিরাজ করেছে। এ সময়ে দখিনা বাতাস নেই, বাতাসে আর্দ্রতা কম, মানে জলীয় বাষ্পও তেমন নেই। যার কারণে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং অসহনীয় গরমও অনুভূত হচ্ছে।
“এখনই এই গরম থেকে রেহাই নেই। ১৬ এপ্রিলের দিকে হালকা ঝড়বৃষ্টির আভাস রয়েছে। তবে ২৪ এপ্রিলের দিকে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে।”
বৃষ্টি কবে? আভাস দিল আবহাওয়া বিভাগ
দেশে ৭ বছরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দেশে আট বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজশাহীতে
বৈশাখের খরতাপে তাপমাত্রা উঠল ৪১ ডিগ্রিতে
দেশের ৪৯টি জেলার উপর দিয়ে বিরাজমান মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় কৃষি ও মাঠ ফসলের সুরক্ষায় বেশ কিছু সতর্কতামূলক পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে ধান রক্ষার জন্য বোরো ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখা: ধানের শীষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পানি রাখাসহ বেশ কিছু ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য পরামর্শ
তাপদাহের এই সময়ে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন বিভাগের সাবেক ডিন এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রচণ্ড গরমে প্রেসার কমে যাওয়া, দুর্বলতাসহ কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদরোগে আক্রান্তরা গরমের সময় বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
“যারা বাইরে কাজ করেন তারা যেন ছায়ার মধ্যে থাকেন। অন্তত মাথায় যেন কাপড় থাকে, ঘণ্টা দুই পরপর ১০ মিনিটের জন্য একটু ছায়ায় গিয়ে বিশ্রাম যেন নেয়। ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর লবণ বের হয়ে যায় এজন্য রোজা রাখলেও রাতের বেলা একটু লবণ মিশ্রিত পানি কিছুক্ষণ পরপর খাবেন।”
তিনি বলেন, “প্রচুর শরবত খেতে হবে, তবে রাস্তাঘাটের শরবত এড়িয়ে চলতে হবে। যে বানায় সে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা মেনে চলছে কি না সেটা নিশ্চিত নয়, এ কারণে এসব খাবার উপকারের চেয়ে অপকার বেশি করবে।”
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গরমের সময় ডায়রিয়া, জন্ডিস, চুলকানি, ঘামাচি, সর্দিকাশি এসব হতে পারে। তবে স্কুল বন্ধ এবং রোজা থাকায় শিশুরা বাইরে যাচ্ছে কম, তাদের অসুখবিসুখও কম হচ্ছে। এ সময় শিশুদের যতটা সম্ভব ঘরে রাখতে হবে। শিশুদের পাতলা আরামদায়ক সুতি কাপড় পরাতে হবে।
“তীব্র গরমে শিশুরা ঘেমে যায়, তাই যাদের বাসায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র আছে তা চালু রাখতে হবে, ফ্যানের নিচে রাখতে হবে। শিশুদের প্রচুর পানি, ফলের রস ও শরবত পান করাতে হবে। শরবতের সঙ্গে কিছুটা লবণ মিশিয়ে দিতে হবে।”
মহাখালীর আইসিডিডিআরবিতে গত বৃহস্পতিবার ৪৪০, শুক্রবার ৩৯৩, শনিবার ৪৩৩, রোববার ৪৩৫, সোমবার ৫৩৪, মঙ্গলবার ৪৮৪ এবং বুধবার ৪৯২ জন রোগী ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে।