গাজায় যুদ্ধ নিয়ে সমঝোতায় দুইপক্ষ বলতে কিছু নেই মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদান বলেন, এখানে দুইটা পক্ষ নেই, একটাই পক্ষ ইসরায়েল। তারাই সবকিছু করছে।
Published : 22 Apr 2024, 12:39 AM
গাজায় যুদ্ধের মধ্যে পাল্টা আক্রমণের মধ্য দিয়ে ইরান ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে যে বার্তা পাঠাতে চেয়েছিল, সেটি ‘খুব স্পষ্টভাবে’ পাঠাতে পেরেছে বলে মনে করছেন ঢাকায় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান।
তিনি বলেন, সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলা করে উস্কানি দিয়েছে ইসরায়েল। ‘আস্থা, বিশ্বাস, সম্মান ও আত্মমর্যাদার’ জন্য এর জবাব না দেওয়ার বিকল্প ইরানের ছিল না।
“ইরান চেয়েছিল একটা বার্তা পাঠাতে এবং তারা সেই বার্তা পাঠিয়েছে, খুব স্পষ্ট। বার্তাটা হচ্ছে, আমরা চাইলে যে কোনো সময় তোমাদের কাছে পৌঁছাতে পারি। এটা ছিল ইরানের স্পষ্ট বার্তা, খুব স্পষ্ট বার্তা।”
রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘ইনসাইড আউট’ আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা বাড়তে থাকলে এর প্রভাবে ফিলিস্তিনের অধিকারের প্রশ্ন থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও পাল্টা হামলার জন্য ইরানেকে ‘দোষারোপ’ করা যায় না বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত।
ইংরেজি ভাষায় সাক্ষাৎকারভিত্তিক এ অনুষ্ঠান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলেও প্রচার করা হয়।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলার মধ্যে গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে বিমান হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। এতে নিহত হয়েছিলেন ইরানের কয়েকজন কূটনীতিক ও সামরিক কমান্ডার।
এর পাল্টায় ১৩ এপ্রিল ইরান ৩০০টিরও বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েলে। নিজেদের সীমানায় ঢোকার আগেই সেগুলোর ৯৯ শতাংশই আকাশে ধ্বংস করার কথা বলেছে ইসরায়েল।
হামলা ঠেকাতে তাদের সহযোগিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জর্ডানসহ বিভিন্ন দেশ। হামলার পর ইরান ও সৌদি আরব বলেছে, ইসরায়েলে যে পাল্টা আক্রমণ করা হবে, তা আগেই জানিয়ে রাখা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রকে।
পাল্টাপাল্টি হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে বড় যুদ্ধের আশঙ্কার মধ্যে ইরানের ইস্ফাহান নগরীতে শুক্রবার বিস্ফোরণ ঘটে। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমে একে ইসরায়েলের হামলা বলে বর্ণনা করা হলেও ইরান ঘটনাটিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এর পাল্টা জবাব দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটি।
রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ’ইনসাইড আউট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ইরানের হামলা, গাজায় ইসরায়েলি হামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভিটোতে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ আটকে যাওয়াসহ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদান।
গাজায় টানা হামলার মধ্যে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যেকার নতুন উত্তেজনায় ফিলিস্তিন থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরে যাওয়ার আশঙ্কা বিষয়ক এক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, “সত্যিকারের উদ্দেশ্য থেকে বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি সরে গেলে এটা অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আমরা ইরানকে সেটার জন্য দোষারোপ করতে পারি না।
“কারণ, ইরান যেটা করেছে, সেটা তাদের জন্য করা লাগত, যা খুবই স্পষ্ট, আমরা দোষারোপ করতে পারি না। তবে মিডিয়া সেটা করেছে খুব অল্প সময়ের জন্য।”
তিনি বলেন, “এই উত্তেজনা যদি আরও বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে দৃষ্টি সরে যাবে বেশি পরিমাণে। তবে সেই উত্তেজনার ফল কী হবে, সেটা আমরা জানি না; এটা কি ফিলিস্তিনিদের জন্য উপকারের হবে না কি উপকার হবে ইসরায়েলিদের জন্য, নেতানিয়াহুর জন্য?
“যুদ্ধের ফলাফল এটা এমন একটা বিষয়, যা আমরা পূর্বানুমান করতে পারি না। আপনি একটা যুদ্ধ শুরু করতে পারেন, কিন্তু আপনার নিজের মতো যুদ্ধটা শেষ করার বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন না। সুতরাং মূল বিষয়ের উপর দৃষ্টি রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
‘উস্কানি তো দিয়েছে ইসরায়েল’
ইরানের বিষয়ে আরেক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের পর থেকে ইসরায়েল বিরোধী অবস্থানে আছে ইরান। ইসরায়েলকে প্রতিরোধে মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনের পাশাপাশি লেবানন, ইয়েমেনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা থাকলেও সবারই ‘নিজস্ব নীতি ও উদ্দেশ্য রয়েছে। সেটা ‘তাদের ব্যাপার’।
“কিন্তু ইরান কখনও সরাসরি ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোড়েনি। উস্কানি এসেছে ইসরায়েল থেকে। তারা সিরিয়ায় ইরানের কনুস্যলেটে বোমা ফেলে উস্কানি দিয়েছে। কারণ বিদেশের মাটিতে থাকা দূতাবাস ও কনস্যুলেট তাদের ভূখণ্ড।”
এর পাল্টায় ইসরায়েলে হামলা চালানো ছাড়া কোনো বিকল্প ইরানের সামনে ছিল না মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “যদি এটা তারা না করে তাহলে তাদেরকে কেউ বিশ্বাস করবে না, কেউ তাদের প্রতি আস্থা রাখবে না এবং কেউ তাদেরকে কখনও সম্মান দেখাবে না। সুতরাং তাদের আত্মমর্যাদা আছে এবং সে অনুযায়ী তারা কাজ করেছে।
“এটা কীভাবে করা হয়েছে, বড় আকারে করা হয়েছে না ছোট আকারে করা হয়েছে; এটা কি সম্মত না কি অসম্মত- আমি সেদিকে যাব না। আমেরিকাকে আগে জানানোসহ বিভিন্ন কিছু আমার দেখার বিষয় নয়। আমার বিষয় হচ্ছে, এই কাজটা হয়েছে।”
ইসরায়েলের হামলাকে ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে বর্ণনা করে যে প্রতিক্রিয়া এসেছে, তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ইউসুফ রামাদান।
তিনি বলেন, “এটা ‘অস্বাভাবিক’ কেন হবে? পৃথিবীতে অনেক দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে এবং তারা একে অপরকে বোমা বর্ষণ করে। কিন্তু যখন ইরান ইসরায়েলে বোমা নিক্ষেপ করেছে, তখন গোটা বিশ্ব এক পায়ে দাঁড়িয়ে গেল। কেন?
“কারণ, এই দেশটাকে তৈরিই করা হয়েছে, এসব কিছু উর্ধ্বে থাকার জন্য এবং সেটাই একটা বর্ণবাদ। এভাবে তাদের দেখা হয়, তারা প্রথম শ্রেণির মানুষ। তাদের দিকে গুলি ছোড়া যাবে না, তবে তারা ইচ্ছা করলে ছুঁড়তে পারবে। তারা যখন চাইবে যেভাবে চাইবে কাজ করতে পারবে। কিন্তু আপনি প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারবেন না। এটা পাগলামো।”
ইরানের ‘খুব স্পষ্ট বার্তা’ পাঠানোর কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আজ আমরা তোমাদের দিকে ছোট রকেট পাঠিয়েছি, এটা পৌঁছেছে। ৫ শতাংশ, ৭ শতাংশ কিংবা ১ শতাংশ যাই হোক, সেটা পৌঁছেছে।
“ইরান এটার চেয়ে আরও অনেক অনেক বেশি করতে সক্ষম। ১০ গুণ, ১০০ গুণ বেশি। সুতরাং ইসরায়েলিদের জন্য বার্তাটা ছিল স্পষ্ট। তারা বার্তা পাঠিয়েছিল এবং সেটা পাঠানো ছিল তাদের কাজ।”
ইরানের উত্তেজনা বাড়াতে না চাওয়ার কথা তুলে ধরে ইউসুফ রামাদান বলেন, “তারা নেতানিয়াহুকে সুযোগ দিতে চায়নি, কারণ সে চায় উত্তেজনা বাড়ুক। কারণ সে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চায়, আমেরিকাকে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য টেনে আনতে চায়।
“অবশ্য আমেরিকার সঙ্গে লেজটাও আসে, ব্রিটেন। লেজ সবসময় মাথাকে অনুসরণ করে এবং অন্যান্য দেশগুলোও তাদের যুক্ত হবে। ঠিক এটাই নেতানিয়াহু চায়।”
রাফাহতে হামলা কি আসন্ন?
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ নগরীতে স্থল অভিযান চালানোর ঘোষণা ইসরায়েল দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে সেটা বাস্তবায়ন করেনি।
গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মধ্যে প্রায় ১৮ লাখ ফিলিস্তিনির আশ্রয় নেওয়ার এই ছোট জায়গায় হামলা চালালে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কিন্তু ইরানের সঙ্গে বড় রকমের সংঘাতে না যাওয়ার ক্ষেত্রে যে ‘আপস’, তার মূল্য হিসেবে রাফাহ নগরীতে হামলার অনুমোদন ইসরায়েল পেয়ে যায় কি না, এমন শঙ্কার কথা বলেছেন ঢাকায় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, ইসরায়েল শক্তভাবে পাল্টা আক্রমণ করবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু এখানে ‘আপস হয়েছে। এই সময়ে আমেরিকা বলেছে, ‘না, করো না’।
“নেতানিয়াহু যখন রাফাহ হামলা করতে গেল, আমেরিকা বলল করো না। কারণ এটাতে দুর্যোগ নেমে আসবে। ১৮ লাখ মানুষ খুব ছোট জায়গায় অবস্থান করছে। আমেরিকা যখন নেতানিয়াহুকে বারণ করল ইরানকে শক্তভাবে পাল্টা হামলা না করার, তার মূল্য কি? এটা হতে পারে রাফাহ, ‘যাও রাফাহ’র দিকে যাও’। এটাই আমাদের চিন্তা।”
‘আপসের’ মূল্য হিসেবে শনিবার ইসরায়েলের জন্য ২৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস অনুমোদন করেছে বলেও মন্তব্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূতের।
‘কিছুই অবশিষ্ট নেই’, প্রাণ বাঁচাতে ছুটছে হাজারো ফিলিস্তিনি
এ অবস্থায় রাফাহতে হামলা কি আসন্ন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি চাই এটা না ঘটুক। ইরানের ঘটনার পর আমি আমেরিকার স্বর পরিবর্তন হয়ে নরম হতে দেখছি, এটা হচ্ছে নেতানিয়াহুর প্রতি ইঙ্গিত যে, এগিয়ে যাও।
“এটা যদি ঘটে, তা ফিলিস্তিনিদের অসম্ভব পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেবে। এমনকি মিশরকেও অসম্ভব পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেবে।”
‘আগে যুদ্ধ বন্ধ হোক, ঐক্য পরে’
যুদ্ধ বন্ধ হওয়াকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের অগ্রাধিকার হিসেবে বর্ণনা করেছেন রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদান।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ, ফাতাহ ও হামাসকে ঐক্যবদ্ধ করার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা আমাদের অগ্রাধিকার নয়। আমাদের অগ্রাধিকার যুদ্ধ বন্ধ করা, আমাদের সব মনোযোগ সেদিকে। রক্তপাত কীভাবে আমরা বন্ধ করতে পারি।”
তিনি বলেন, যুদ্ধ বন্ধ হলেই কেবল ফিলিস্তিন সরকার, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও), ফাতাহ, হামাসসহ সামরিক-বেসামরিক সবাইকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার কাজ চলতে পারে।
ইসরায়েল যে পরিকল্পনা নিয়ে গাজায় হামলা শুরু করেছিল, সেদিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথম দিকে ধারণা করা হয়েছিল যুদ্ধ এতদিন টিকবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, আরব বিশ্ব ও মুসলিম দেশগুলো এখানে প্রধান ভূমিকায় থাকা আমেরিকার উপরে চাপ তৈরি করবে, যাতে তারা নিরপরাধ মানুষকে গণহত্যা চালানো থেকে বিরত থাকতে ইসরায়েলের উপর পর্যাপ্ত চাপ প্রয়োগ করবে।
“কিন্তু ইসরায়েল চেয়েছে যে, তারা আস্তে আস্তে হামলা চালাতে থাকবে এবং গাজাকে পুরোপুরি ফাঁকা করে ফেলবে। শুরু থেকে তারা উত্তর থেকে দক্ষিণে মানুষদের পাঠানোর কথা বলেছে।”
কিন্তু অতীতের সংখ্যা থেকে ফিলিস্তিনিরা ঘর ছেড়ে যায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালের পর থেকে ঘর যারা ছেড়েছে তারা কেউ ফিরে আসেনি। এ কারণে ফিলিস্তিনিরা তাদের জায়গায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
“কারণ তারা জানে, ফেরার কোনো আশা নাই। আমরা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার ভূমিতে মরছি, কিন্তু ছেড়ে যাইনি।“
প্রথমে ভাত-পানির কষ্ট দিয়ে পরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানুষ হত্যার অভিযোগ আনার বিষয়ে তিনি বলেন, “এক কেজি লবনের দাম ১০ ডলার। আপনি কি চিন্তা করতে পারেন? আমাদের যে সহায়তা প্রয়োজন, তারা ২০ শতাংশও পাইনি।
“মানুষ না খেয়ে থাকছে। এ কারণে যুদ্ধ বন্ধ হওয়াই একটা উপায়। কেননা, তারা প্রথমে খাবার পানি ছাড়া রাখছে এবং পরে হত্যা করছে। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা।”
রাষ্ট্রদূত বলেন, গাজায় এখন কোনো হাসপাতাল নেই। হাসপাতাল থাকলেও তাতে রোগীদের জায়গা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। ওষুধ নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই অপারেশন করার, ফলে অনেক মানুষ মরছে।
পশ্চিম তীরেও জাতিগত নিধন চলার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, গাজা উপত্যকা থেকে যেভাবে ফিলিস্তিনিদের সরাতে চাচ্ছে, সেই একইভাবে পশ্চিম তীর থেকেও ফিলিস্তিনিদের সরাতে চাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েল বাহিনীর সহায়তায় সেটেলারদের সহিংসতা বাড়ছে।
“তারা পশ্চিম তীরের জীবনকে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলছে, যাতে মানুষ সন্তানদের রেখে পালিয়ে যায় এবং যখন তারা যাবে, সেটা দখল করবে সেটেলাররা। ইসরায়েলের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার শক্তি ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের নেই। এ কারণে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কিন্তু তারা খুবই কম করছে।“
‘সাপকে মাথায় মারতে হয়, লেজে নয়’
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে বসতি স্থাপনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে ‘সমুদ্রের মধ্যে একটা ফোঁটা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদান।
তিনি বলেছেন, এসব ঘটনার সঙ্গে ইসরায়েলের সরকার জড়িত। সেজন্য ব্যবস্থা নিলে তার প্রধান বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধেই নিতে হবে।
পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী ও সহিংসতার কারণে অভিযুক্ত ইসরায়েলিদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করায় শুক্রবার দেশটির জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভিরের এক মিত্র এবং দুটি সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উপর নিপীড়নের ঘটনায় ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) একটি ইউনিটকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে বলে রোববার খবর দিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা সমুদ্রে একটা ফোটার মত। দেখুন, কিছু মানুষের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর কী ঘটল…তারা তাদের কার্যক্রম বাড়িয়ে দিল, সহিংসতা বাড়িয়ে দিল এবং হত্যাযজ্ঞ বাড়িয়ে দিল। সুতরাং এটার কাজটা কি? এটা কোনো উপায় নয়।”
অন্যরা বাংলাদেশের মতো হলে বহু আগেই ফিলিস্তিন স্বাধীন হতো: রাষ্ট্রদূত
রাষ্ট্রদূত বলেন, “উপায় হচ্ছে, আপনি কেবল কিছু মানুষকে নিষেধাজ্ঞা দেবেন না। প্রথমত আপনি নিষেধাজ্ঞা দেবেন, যারা তাদেরকে সহায়তা করছে, যারা উস্কানি দিচ্ছে, অর্থ দিচ্ছে, যারা তাদের মাথায় এই আইডিয়া ঢুকাচ্ছে, যারা তাদেরকে মাঠে নামাচ্ছে-আর এর সবকিছুই ঘটাচ্ছে ইসরায়েলি সরকার। সুতরাং আপনাকে প্রধানকে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।
“আপনি যখন কোনো সাপকে মারতে যান, আপনি মাথার দিকে যান, লেজের দিকে নয়। এটাই সত্য যে, ইসরায়েলি সরকার এটা অব্যাহতভাবে করছে। সুতরাং আপনাকে ইসরায়েল সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। কিন্তু সেটা করার মুরোদ বা ইচ্ছা কি আপনার আছে?”
গাজায় যুদ্ধ নিয়ে সমঝোতায় দুইপক্ষ বলতে কিছু নেই, মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এখানে দুইটা পক্ষ নেই, একটাই পক্ষ ইসরায়েল। তারাই সবকিছু করছে।
“কিন্তু তারা শুরু থেকেই বলে আসছে তারা যুদ্ধ থামাতে চায় না। গাজায় ফিলিস্তিনিদের উপর আক্রমণ করছে, তারা বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, তাদেরকে ঘরবাড়ি ছাড়া করছে। যুদ্ধবিরতির কথা তারা বলছে, আপনাকে আমাকে সান্তনা দেওয়ার জন্য।”
যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল কে কাকে চালাচ্ছে, এমন ভাবনার কথা তুলে ধরে ইউসুফ রামাদান বলেন, “মাঝেমধ্যে ভাবি, কে কে চালাচ্ছে। আমেরিকা ইসরায়েলকে চালাচ্ছে না কি ইসরায়েল আমেরিকাকে চালাচ্ছে। মনে হয়, বর্তমানে ইসরায়েল আমেরিকাকে চালাচ্ছে। ইসরায়েল যাই করছে, আমেরিকা তাদের সমর্থন দিচ্ছে। আজ তারা ইসরায়েলকে ২৬ বিলিয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিসের জন্য?
“ফিলিস্তিনিদের হত্যা অব্যাহত রাখার জন্য, ফিলিস্তিনিদের ভূমি জবরদখল করার জন্য, ফিলিস্তিনিদের জীবনকে জাহান্নাম বানানোর কাজ অব্যাহত রাখার জন্য; তারা ইসরায়েলকে সবদিক থেকে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।”
তিনি বলেন, “আমেরিকা যখন দুদেশ সমাধানের কথা বলে, আমরা কীভাবে বিশ্বাস করব যে, তার সত্যিকার অর্থে সৎ; যখন তারা জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সদস্যপদের বিষয়ে ভিটো দেয়। যদিও এটা একটা প্রতীকী বিষয় এবং ফিলিস্তিনিদেরকে সেই আনন্দও তারা দিতে চায় না। কেননা, তারা সত্যিকার অর্থে সমাধান চায় না।”