অন্যরা বাংলাদেশের মতো হলে বহু আগেই ফিলিস্তিন স্বাধীন হতো: রাষ্ট্রদূত

“ওআইসির বিশেষ সম্মেলনে ফিলিস্তিনের পক্ষে শেখ হাসিনা স্পষ্টভাষায়, সুবিবেচনাপ্রসূত ও সাহসী কথা বলেছেন। ৫৭ জন নেতা একই ভাষায় কথা বলতেন, তাহলে আমাদের কোনো সমস্যাই থাকত না।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2023, 05:23 PM
Updated : 12 Nov 2023, 05:23 PM

ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থানকে অন্য সব মুসলিম ও আরব দেশের থেকে এগিয়ে রাখছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান।

তিনি বলেন, “ওআইসির বিশেষ সম্মেলনে ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাষায়, সুবিবেচনাপ্রসূত ও সাহসী কথা বলেছেন।

“তিনি মুসলিম ও আরব দেশের কাছে ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে বলেছেন। যদি প্রত্যেকে একই রকম বলতেন, ৫৭ জন নেতা একই ভাষায় কথা বলতেন, তাহলে আমাদের কোনো সমস্যাই থাকত না।”

রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিশেষ আয়োজন ইনসাইড আউটে যোগ দিয়ে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাংলাদেশ যা করেছে- সব মুসলিম ও আরব বিশ্ব যদি তাই করত, তাহলে আমরা আমাদের রাষ্ট্র বহু আগেই পেয়ে যেতাম।”

অনুষ্ঠানটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

বাংলাদেশের মানুষও যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তাতে আপ্লুত রামাদান।

তিনি বলেন, “আপনি কি চিন্তা করতে পারেন, একটা লোক তার গ্রাম থেকে আসছেন, হয়ত ৫-৬ ঘণ্টার ভ্রমণ করে এসেছেন সহমর্মিতা জানাতে, পাঁচশত টাকা অনুদান দিতে…

“আপনি কি জানেন, এটার অর্থ আমার কাছে কী? এর মানে হচ্ছে, আমি একা নই; আমার বাড়ি থেকে চার হাজার মাইল দূরের একজন আমাকে সাহায্য করছে এবং তিনি তার গ্রামের বাড়ি থেকে আমার কাছে আসছে পাঁচশ বা এক হাজার টাকা দিয়ে যেতে। আমি জানি, তার কাছে যদি আরও বেশি থাকত, তিনি আমাকে দিয়ে যেতেন।” 

‘এটার মূল্য অনেক’ মন্তব্য করেন তিনি বলেন, “এমন অনুগ্রহকে আমি কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করতে পারব না। এটা আমি কবরে যাওয়া জন্য নিজের মধ্যে ধারণ করব যে, বাংলাদেশের মানুষ ফিলিস্তিনের জন্য সম্মানের, মহৎ ও নায়কোচিত কাজ করেছে।”

রাষ্ট্রদূত রামাদান বলেন, “তারা কেবল তাদের অর্থ দিতে চায় এমন নয়, ফিলিস্তিনের জন্য তারা তাদের জীবন উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত। যে ইমেইল আমি পাই, আমি দেখি তরুণরা সেখানে গিয়ে যুদ্ধ করতে চায়।”

দক্ষিণ লেবাননে ফাতাহ আন্দোলনের যোদ্ধাদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের যুদ্ধ করতে দেখার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, “ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য যুদ্ধ করতে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রথম দল গিয়েছিল। এটাই বাংলাদেশ এবং এটাই বাংলাদেশের মানুষ।”

‘ফিলিস্তিনে জাহান্নামের পরিস্থিতি’

ইসরায়েলের আক্রমণের মুখে গাজার পরিস্থিতি এখন কেমন, এটই প্রশ্নে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, “এক শব্দে বর্ণনা করা যায়- সেটা হচ্ছে জাহান্নামে বসবাস। এটা প্রকৃত বিবেচনায় জাহান্নাম। এটা এমন পরিস্থিতি যেটাকে ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না।

“তারা রাতের বেলা প্রিয়জনের সঙ্গে আলিঙ্গন করে ঘুমাতে যায়, কিন্তু তারা জানে না ভোরে ঘুম থেকে উঠবে কি-না। যারা সৌভাগ্যবান, তারা জেগে উঠে। আর যারা দুর্ভাগ্যবান তারা হয় পরিবারের একটা অংশকে হারায় কিংবা পুরো পরিবারকে।”

তিনি বলেন, “মাথার উপরে এফ-সিক্সটিন যুদ্ধবিমানের ‍উড়াউড়ি, অনবরত বোমা নিক্ষেপ আর কামানের গোলার মধ্যে এই বসবাসে খাবার, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির মতো নিত্য পণ্যের অপ্রতুলতার মধ্যে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে তাদের।

“উত্তর গাজার মানুষদের তারা কী পরিমাণ খাবার খাবে তা তাদেরকে হিসাব করতে হয়। তাদেরকে খুব সতর্ক থাকতে হয়। কারণ, সেটা এখন বাজারে নেই। ফলে ঘরে যে খাবার আছে, তাদেরকে নিশ্চিত করতে হয়, যে ক্ষুধা আছে, কেবল সেটা মেটানোর, ভরপেট খাওয়া নয়।”

সাধারণত খাবার ছোটদের খাইয়ে দিয়ে বাবা-মা কিংবা বয়স্কদের কেবল দুয়েকটা খেজুর খেয়ে বা এক খণ্ড রুটি খেয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ছয় হাজারের বেশি শিশুর ডায়রিয়া এবং অনেকের জ্বরাকান্ত হওয়ার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে তুলে ধরে তিনি বলেন, “দুশ্চিন্তা হচ্ছে, রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে। হামলার চেয়ে এটা প্রাণঘাতি হতে পারে।

“এটা নিয়ে আমরা সত্যিকার অর্থে দুশ্চিন্তায় আছি। কোনো ওষুধ নাই, পর্যাপ্ত খাবার নাই, পানীয় জল নাই। তাদের ভয়, হতাশা কোনো বর্ণনার মতো নয়।”

‘নিজের চামড়া বাঁচানোর চেষ্টায় নেতানিয়াহু’

 

গাজায় নিরপরাধ, বেসামরিক লোকদের মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকানোর জন্য এখন যুদ্ধবিরতি সবচেয়ে বেশি জরুরি হলেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘ঔদ্ধত্য’ দেখাচ্ছেন বলে মনে করছেন রাষ্ট্রদূত রামাদান।

তিনি বলেন, “সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে হত্যা বন্ধ করতে হবে, গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয় জরুরি বিষয় হচ্ছে গাজার ভেতরের জনগণের জন্য খাদ্য, ওষুধ, খাবার পানি ও জ্বালানি সরবরাহের সুযোগ দেওয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারণের জন্য প্রয়োজন।”

যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা কতটুকু, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি শুনেছি দোহায় পরোক্ষভাবে দেনদরবার চলছে যে, গাজার প্রতিরোধযোদ্ধারা কিছু বেসামরিক জিম্মিকে মুক্তি দেবে, তার বিপরীতে তারা নির্দিষ্ট সময়ের যুদ্ধবিরতি পাবে এবং গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর সুযোগ দেওয়া হবে।”

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে নেতানিয়াহুর রাজি না হওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে ইউসুফ রামাদান বলেন, “এটা তিনি ঔদ্ধত্যের কারণে বলছেন। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কেবল তার চামড়া বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।

“কারণ, অক্টোবরের ৭ তারিখ যেটা ঘটেছে, তা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সরকারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। সুতরাং তারা জানে যে, দেশ চালানোর সুযোগ তাদের আর নেই। তারা তাদের জনগণকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি, সুতরাং তাদেরকে চলে যেতে হবে। এটাই সুনিশ্চিত। আমরা দেখেছি, এখন ইসরায়েলের বেশিরভাগ জনগণ চায় না, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশ পরিচালনা করবে।

“এ কারণে যত পারা যায় হত্যা করা, যত পারা যায় ধ্বংস করা এবং জনগণের কাছে এসে বলার চেষ্টা করা যে, ‘আমি তোমাদের জন্য এমন নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এনেছি, তা অতীতে কেউ আনেনি।’ আমি বিশ্বাস করি, তিনি ব্যর্থ হবেন। আমি শতভাগ নিশ্চিত তিনি ব্যর্থ হবেন।”

‘ঘর ছাড়লে আর কখনো ফিরতে পারেন না ফিলিস্তিনিরা’

ইসরায়েলি বাহিনীর ক্রমাগত বোমা ফেলা ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও ফিলিস্তিনিরা কেন, তাদের বাড়িঘর ছাড়ছে তার পেছনে ঐতিহাসিক কারণ থাকার তুলে ধরেন দেশটির রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, “সাধারণভাবে পৃথিবীর যেখানে যুদ্ধ হয়, মানুষ স্বেচ্ছায় স্থান ত্যাগ করে। তারা হত্যাকারী কিংবা শত্রু ছেড়ে যেতে বলার অপেক্ষা করে না। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের রয়েছে বিশেষ পরিস্থিতি।

“১৯৪৮ সালে আমাদের ক্ষেত্রে একই রকম ঘটনা ঘটেছে, যেটাকে আমরা এখন দুর্যোগ বলে থাকি। সাড়ে ৯ লাখ মানুষ ফিলিস্তিন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে, আমার পিতা ছিলেন তাদের একজন এবং তারা এখন পর্যন্ত শরণার্থী হিসাবে বসবাস করছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের ঘর ছাড়া মানে আর কোনোদিন ফিরে না আসা। ১৯৪৮ সালে আমি বাড়ি ছেড়েছি, আর কখনই ফিরতে পারিনি। সুতরাং এমন জটিল পরিস্থিতি আমাদের রয়েছে। এ কারণে ১৯৪৮ সালের মতো বিপর্যয় ২০২৩ সালে এসে ঘটুক আমরা তা চাই না। সেটাই হচ্ছে, ফিলিস্তিনি জনগণ বেশিরভাগের ঘর না ছাড়ার প্রধান কারণ।”

তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত বোমা নিক্ষেপ, সন্তানদের খাবার, পানি এবং ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিস দিতে না পারায় বাধ্য হয়ে ফিলিস্তিনিরা উত্তর গাজা ছেড়ে দক্ষিণের দিকে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

অসলো চুক্তি কেন ব্যর্থ

গত শতকের নব্বইয়ের দশকে ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তিচুক্তি হলেও ইসরায়েলের উগ্রপন্থীদের কারণে সেটা বাস্তবায়ন হয়নি বলে মনে করছেন রাষ্ট্রদূত রামাদান।

তিনি বলেন, “আমরা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছি, ইয়াসির আরাফাত দিয়েছিলেন এবং ইসরায়েল ফিলিস্তিন স্বাধীনতা সংস্থাকে (পিএলও) স্বীকৃতি দিয়েছিল। ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে হোয়াইট হাউসে আমরা অসলো চুক্তি সই করেছিলাম। আমাদেরকে বলা হয়েছিল, পাঁচ বছরের মধ্যে তোমরা একটা রাষ্ট্র পাবে।

“কিন্তু যেটা ঘটেছে, দুই বছর পর তারা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রাবিনকে হত্যা করেছে, যিনি চুক্তিতে সই করেছিলেন। কারা তাকে হত্যা করেছে? তারা নিজেরা তাকে হত্যা করেছে। বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর উসকানির পর উগ্রপন্থীরা… তিনি ওই সময় বিরোধীদলে ছিলেন।

“এক লোক তাকে গুলি করে হত্যা করেছিল এবং তারপর তারা বলল, ‘এই লোক পাগল ও ভারসাম্যহীন’। তিনি মারা যান, আমি মনে করি, তার সঙ্গে শান্তিরও মৃত্যু হয়েছে, ‍মৃত্যু হয়েছে পুরো প্রক্রিয়ার।”

প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রশাসন অনেক চেষ্টা করলেও রাবিনের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্র দুর্ভাগ্যজনকভাবে ‘দুই রাষ্ট্র নীতি; কার্যকরে পর্যাপ্ত চাপ প্রয়োগ করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন রামাদান।

তিনি বলেন, “ইসরায়েলের নেতারা কোনো কোনো সময় বলে, তারা দুই দেশ সমাধান চায়। কিন্তু এটা কাজে পরিণত করে না। বর্তমান ইসরায়েলি নেতারা দুই রাষ্ট্র সমাধান মানেন না।”

শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পিএলও যে ছাড় দিয়েছে, তা ‘বিশাল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পশ্চিম তীর, ইসরায়েল ও গাজাসহ ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের সীমানা ২৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারকে আমরা মেনে নিয়েছি, বাকিটা ইহুদি রাষ্ট্রের। এরপরও তারা সেটাকে প্রত্যাখ্যান করে। এর বেশি আমরা কী দিতে পারি?

“আমরা ২২ শতাংশ নিয়ে তাদেরকে ৭৮ শতাংশ দিচ্ছি। এরপরও তারা মানে না। তাহলে আপনি এই লোকদের সঙ্গে কীভাবে কাজ করবেন?”

‘নিজের দেশে যেতে পারি না ২২ বছর’

 

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না মেলায় ২২ বছর ধরে নিজ দেশে যেতে পারেন না বলে আলোচনায় তুলে ধরেন ঢাকায় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, “ইসরায়লে ফিলিস্তিনিদেরকে নিজ মাতৃভূমিতে ‘গোলাম’ হিসাবে রাখতে চায়। …আমরা বেশি কিছু চাইনি। একজন সাধারণ মানুষ যা চায়, আমরা কেবল তা-ই চেয়েছি। একটি পাসপোর্ট, একটি পরিচয়।”

সেই সুযোগ না থাকার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাংলাদেশি মানুষের জন্য ভিসা ইস্যু করতে চাইলে কি আমি তা পারব?

“এমনকি আমিও আমার দেশে যেতে পারি না। আপনি চিন্তা করতে পারেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত তার দেশে যেতে পারে না? ২২ বছর ধরে আমাকে আমার দেশে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি। কেননা, তারা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে এবং আমাকে তাদের কাছেই যেতে হবে। আমার যদি অনুমতি না থাকে আমি যেতে পারব না। আমার পরিবারের কেউ মারা গেলে তাদেরকে বিদায় জানাতে পারব না।”

তার মত এমন অনেকেই আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “৮০ লাখ ফিলিস্তিনি জনগণ শরণার্থী হিসাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করে। সে কারণে মানুষ গাজা ত্যাগ করতে চায় না। তারা আমাদের মত শরণার্থী হতে চায় না।”

‘মধ্যস্থতার কথা বলে পক্ষ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র’

রামাদান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় একমাত্র মধ্যস্থতাকারী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের যেমন সম্পর্ক, তা বিবেচনায় নিলে তারা যোগ্য মধ্যস্থতাকারী হতে পারে না।

“কেননা, আপনি যখন কোনো একটা পক্ষ নেন, আপনি মধ্যস্থতাকারী হতে পারেন না, আপনি নিরপেক্ষ হতে পারেন না। সুতরাং আমাদের সঙ্গে আমেরিকা কখনই নিরপেক্ষ নয়।”

জর্জ বুশ থেকে শুরু করে জো বাইডেন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রেসিডেন্ট ১৯৬৭ সালের সীমানার আলোকে দুই দেশ সমাধানের কথা মুখে বললেও কাজের কাজ কিছু করেনি বলে মনে করছেন ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত।

ইউক্রেইনের স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকারের জন্য আমেরিকা ও ইউরোপের সমর্থন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তারা ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের ক্ষেত্রে তেমন ভূমিকা নেয় না কে? কেন আমেরিকা ও ইউরোপ কখনোই ইসরায়েলকে নিষেধাজ্ঞা দেয় না?

“ইসরায়েল পৃথিবীর যে কোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি জঘন্য কাজ করেছে। এই মহাজগতে ইসরায়েলই একমাত্র দেশ, যারা যে কোনো কিছু করতে পারে এবং আইনের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে পারে। আমেরিকার সমর্থন থাকার কারণে ইসরায়েল কোনো আন্তর্জাতিক আইন মানে না এবং সব ধরনের দায়মুক্তি পায়।”

‘আন্তর্জাতিক সম্মেলন হোক’

মধ্যপ্রাচ্যে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনে শান্তি প্রক্রিয়ায় তাদের ভূমিকার বিষয়ে এক প্রশ্নে রামাদান বলেন, “চীন একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, কিন্তু একা কিছু করতে পারবে না এখনও।”

পৃথিবীর সবগুলো ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে ফিলিস্তিন প্রশ্নের সমাধান হোক- এটা তার চাওয়া।

এই প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের পাঁচ স্থায়ী সদস্য, কিছু ইউরোপীয় এবং কিছু আরব মুসলিম দেশের এক টেবিলে আসার প্রয়োজনীয়তা কথা তুলে ধরে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদীত বলেন, “তারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের। এটা সেটাই, যেটা তারা বলছে। আমরা চাই, ইউরোপীয় দেশগুলো যেটা বলছে, কেবল সেটুকু যেন তারা করে। এর বেশি কিছু না, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র।”

‘ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ আমাদের বিরুদ্ধে গেছে’

ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েকটি আরব দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া ফিলিস্তিনিদের ‘বিরুদ্ধে গেছে’ বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত রামাদান।

তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, এটা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দিকের যাত্রাপথ ধ্বংস করবে। কারণ, ইসরায়েল চাইছে তাদেরকে মধ্যপ্রাচ্যে গ্রহণ করা হবে। ইসরায়েলিদের প্রায় ৮০ শতাংশই এসেছে ইউরোপ থেকে, ফিলিস্তিনে বসতি গড়েছে এবং ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে।

“এ কারণে প্রতিবেশী আরব দেশগুলো তাদেরকে গ্রহণ করার জন্য একটা সম্পর্কের দরকার। যাতে ফিলিস্তিনের বিনিময়ে ইসরায়েল মাঠের বাস্তবতা হতে পারে।”

আরবরা নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে আরব ইনিশিয়েটিভের উদাহরণ টানেন রাষ্ট্রদূত।

২০০২ সালের ওই উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেখানে বলা হয়েছিল, আরব দেশগুলো কেবল এক শর্তে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করবে, যখন ফিলিস্তিনিরা স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।

“এটাই ছিল সঠিক কাজ। কিন্তু ২২টি আরব দেশ যদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হওয়ার আগে ইসরায়েলকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সুযোগ দেয়, তাহলে সেটা ফিলিস্তিন ইস্যুর জন্য কোনোভাবে মঙ্গলজনক নয় “