নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সিটি করপোরেশন এলাকা না ছেড়ে আলোচনার জন্ম দেওয়া কুমিল্লার সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ইসির ‘নির্দেশ দেওয়ার’ এখতিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
Published : 15 Jun 2022, 02:08 PM
কুমিল্লার এই সংসদ সদস্য মনে করেন, ইসি তাকে যে চিঠি দিয়েছে, সেটি ‘আইনের লঙ্ঘন, এখতিয়ার বহির্ভূত’, এতে তার ‘সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন’ হয়েছে। আগামীতে এ নিয়ে তিনি সংসদে কথা বলবেন এবং আইনটি সংশোধনের দাবি তুলবেন।
“চিঠিটা ভাষাগতভাবেও ঠিক হয় নাই। একজন সংসদ সদস্যকে এভাবে ‘নির্দেশ’ শব্দ ব্যবহার করতে পারে না কেউ। চিঠিটা অসমাপ্ত। চিঠিতে আইনের পুরো ব্যাখ্যা নাই।”
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্য স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিতে পারেন না। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে শুধু ভোট দিতেই নির্ধারিত কেন্দ্রে যেতে পারেন।
কিন্তু কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন, সেনানিবাস এলাকা) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বাহার আইন ভেঙে দলীয় প্রার্থী রিফাতের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠলে তাকে সতর্ক করে নির্বাচন কমিশন। তাতে কাজ না হওয়ায় তাকে এলাকা ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু প্রথম দফা সতর্কবার্তা পেয়েই আদালতে গিয়েছিলেন বাহার। তাকে নির্বাচনের প্রচারে সুযোগ না দেওয়া কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট।
বাহার এলাকা না ছাড়ায় প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় ইসিকেও। একজন সংসদ সদস্য ইসির কথা না শোনায় ‘অসহায়ত্ব’ প্রকাশ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।
বাহার বলেন, “আইন তো সবার জন্য সমান। নির্বাচন কমিশনকে আগে আইন মানতে হবে। আমি খুব দুঃখ পেয়েছি, একজন নির্বাচন কমিশনার আপনাদের সামনে বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, আই অ্যাম আ ল মেকার। আমি আইন ভঙ্গ করেছি!“
“আমি আপনাদের প্রশ্ন করতে চাই, আপনারা কী আমাকে কোথাও দেখেছেন নির্বাচনে? আমি কীভাবে আইন ভাঙলাম।”
বাহাউদ্দিন বাহারের নির্বাচনী এলাকায় থাকা নিয়ে সিটি করপোরেশনের দুই বারের মেয়র, এবারের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছিলেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত তীব্রভাবে এর বিরোধিতা করেন।
কুমিল্লার স্থানীয় সরকার নির্বাচনের এই বিষয়টি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় গণমাধ্যমে নানা আলোচনা শুরু হয়।
মঙ্গলবার তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, একজন সংসদ সদস্যকে তার নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলা তার ‘মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপের’ শামিল।
সেখানে নির্বাচন কমিশন ‘কী ভুল করেছে’, আগে সেটা নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, “প্রথমত আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যিনি ওই এলাকার সংসদ সদস্য, ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা, যিনি ওই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোটার, তাকে নির্বাচন কমিশন এলাকা ছাড়ার কথা বলতে পারে কি না। এটি কি তার মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ নয়?
“তাহলে তো ঢাকা শহরে যখন সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে, তখন ঢাকা থেকে নির্বাচিত সব সংসদ সদস্য, মন্ত্রীদেরকেও ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। এভাবে তাকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে তার মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।”
সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার বুধবার আইনের কথা তুলে ধরে বলেন, “আইনটি আপনাদের বলি, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কোনো সুবিধাভোগী ব্যক্তি নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। আই এম নট পার্ট অব দি গভার্নমেন্ট। আমার ঠিকানা হচ্ছে, আমি জাতীয় সংসদের পার্ট। সুতরাং আমাকে এই আইনের আওতায় আটকে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।“
“আমাকে পার্লামেন্টে কথা বলতে হবে। আইনটা আমরা সংশোধন করব ইনশাল্লাহ। আমি হাই কোর্টে রিট করেছি, একটা রুলও পেয়েছি। এই আইনটা পরিবর্তন হবে, কারণ একজন সংসদ সদস্য যেহেতু সরকারের অংশ না, সেহেতু এখানে আমার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে এখানে।”
ইসি ওই চিঠি দেওয়ার কারণে কুমিল্লার মানুষ ‘ক্ষুব্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে ভোট দিচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন বাহার।
তিনি বলেন, “এই চিঠিটা যদি না দিত, কুমিল্লার মানুষ এতটা বিক্ষুব্ধ হত না। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই, তারা আমার কাজটা সহজ করে দিয়েছে।”
মহামারীর আড়াই বছরে কুমিল্লার মানুষকে ছেড়ে যাননি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এলাকা ছেড়ে কীভাবে যাব আমি? আমি চলে গেলে মূর্তি ভেঙে দেয় কুমিল্লায়। আমি হজে গিয়েছিলাম। কুমিল্লায় মূর্তি ভেঙে দিয়েছে। আমি সফর সংক্ষিপ্ত করে চলে এসেছি। কুমিল্লাকে টার্গেট করার পরেও সেখানে কারও ক্যাজুয়ালটি হয়নি। অথচ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মূর্তি ভাঙার কারণে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।”
সিটি ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে এই সংসদ সদস্য বলেন, “বাসা থেকে বের হয়ে, ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিলাম। এ পর্যন্ত যা দেখলাম, শব্দটা ছিল উৎসবমুখর। কুমিল্লায় সুন্দর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। বৃষ্টিতে কিছুটা হতাশ হয়েছিল ভোটাররা। কিন্তু বৃষ্টি চলে যাওয়ায় উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দিচ্ছে।”
‘কোথাও কোনো ঝামেলা নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনকে বলতে চাই, অতি উৎসাহী কোনো কর্মকর্তা যেন পরিবেশ নষ্ট না করে। প্রার্থী ও সমর্থকরা উৎসবমুখর পরিবেশে আছে।
“ভোটের আইডি নিয়ে গিয়ে ভোট না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কারণ ভোটের চিঠি নিয়ে গেছে। কিন্তু এটা তো ঠিক না, আইডি নিলেই তো হবে। তাই সব কর্মকর্তাকে বলব, একটা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য আপনারা সহযোগিতা করেন।”